উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়েছে জমকালো। পারফর্ম করে গেছেন সালমান খান-ক্যাটরিনা কাইফের মতো বলিউড তারকারা। মাঠে বসে পুরো আয়োজন উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার শুরু হচ্ছে ব্যাট-বলের লড়াই। মাঠের ক্রিকেট কতটা জমজমাট হয় সেটিই এখন দেখার।
বুধবার মাঠে গড়াবে বঙ্গবন্ধু বিপিএল। শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে দুপুর দেড়টায় উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ও সিলেট থান্ডার। সাড়ে ৬টায় সন্ধ্যায় দ্বিতীয় ম্যাচে লড়বে রংপুর রেঞ্জার্স-কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স। সরাসরি সম্প্রচার করবে মাছরাঙা ও গাজী টিভি।
একটি আসরকে সফল করতে ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স জরুরি। পাশাপাশি আয়োজকদের সঠিক ব্যবস্থাপনা, আদর্শ উইকেট, স্টেডিয়ামে দর্শক উপস্থিতি, উন্নতি প্রযুক্তির ব্যবহার, মানসম্মত টেলিভিশন সম্প্রচার, আম্পায়ারিং ও ধারাভাষ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বিপিএলে আগের ছয়টি আসরে দেখা গেছে বেশ কয়েকটি জায়গায় ত্রুটি-বিচ্যুতি। মাঠের লড়াই ছাপিয়ে উঠে এসেছে অব্যবস্থাপনা ও অদূরদর্শিতার চিত্রও। কোনোবার বাইলজ তো কোনোবার আম্পায়ারিং। কখনো আবার প্রযুক্তির অভাবে দর্শকদের মন যোগাতে পারেনি বিপিএল। সম্প্রচারের মান, বাজে ধারাভাষ্য, টিকেটের দাম, উইকেটের মান-এসব বিষয় বারবারই এসেছে আলোচনা-সমালোচনায়। অতীতের সব কলঙ্ক ঢেকে ফেলার সুযোগ এবার বিসিবির কাছে।
আগের অভিজ্ঞতা থেকে বিসিবি শিক্ষা নিয়েছে কিনা সেটি বলার সময় আসেনি। তবে নতুন আরেকটি আসর মাঠে গড়ানোর আগেও দেখা গেছে অব্যবস্থাপনার কিছু চিত্র। অধিনায়কদের ফটোসেশন হয়েছে হুট করেই, বিপিএল শুরুর আগের সন্ধ্যায়। সব দলের অধিনায়ককেও একত্রিত করা সম্ভব হয়নি। মিরপুরের একাডেমি মাঠে ট্রফি ছাড়াই মুশফিক-মাহমদুউল্লাহ-রাসেলরা সেরেছেন আনুষ্ঠানিকতা।
আগের ছয় আসর ছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকানার। আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে তাদের ছেঁটে ফেলা হয়েছে এবার। দল গোছানো থেকে শুরু করে গোটা কাজই করছে বিসিবি। নিজেদের পরিচালনায় পরিচ্ছন্ন বিপিএল উপহার দিতে সঠিক রাস্তায় হাটে কিনা স্বচ্ছল ক্রিকেট বোর্ড-সেটিও দেখার আছে।
নিজেদের তৈরি করা সুযোগ লুফে নিতে পারবে কিনা সেটি সময় বলবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী সামনে রেখে তাকেই উৎসর্গ করা হয়েছে এবারের আসর। যে কারণে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা, ক্রীড়াপাগল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নাম জড়িয়ে আছে বলেই এবারের আসর ঘিরে সকলের প্রত্যাশা বেশি। গোছালো আয়োজনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে শুরু হচ্ছে বিসিবির পরীক্ষাও।
গত আসরে শুরু থেকে ডিআরএস (ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম) থাকলেও স্নিকোমিটার ও আল্ট্রাএজ প্রযুক্তি সংযুক্ত না করায় ভুল-ত্রুটি হয়েছিল অনেক। ম্যাচে সিদ্ধান্ত জানাতে আম্পায়ারদের বিভ্রান্তি অনেক সময়ই দর্শকদের কাছে হয়ে যায় হাস্যরসের বিষয়!
অতীত অভিজ্ঞতা থেকে এবার কিছু বিষয় শোধারাতে চায় বিসিবি। বোর্ডের প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী জানালেন, ‘আমরা প্রোডাকশনের ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছি । আমরা চেষ্টা করি প্রযুক্তির দিক থেকে যতটা ভালো এবং যেগুলো আছে সেগুলো বিপিএলে আনা। আমরা ড্রোন, স্পাইডারক্যামেরা ব্যাবহার করবো। আপনারা স্পাইডার ক্যামেরা ব্যবহার দেখতে পারবেন এখানে (মিরপুর) । বাইরের ভেন্যুগুলো যেমন চট্টগ্রাম, সিলেটে আমরা শুধু ড্রোন ব্যবহার করবো।
‘কমেন্টেটর যারা আছেন, যাদের সাথে আমাদের চুক্তি হয়েছে তারা ঢাকায় চলে এসেছেন। প্রয়োজন হলে আরও বিনিয়োগের দরকার হলে আমরা করবো। অবশ্যই চেষ্টা করবো গতবারের ভুলগুলো যাতে না হয়। আপনারা যে রিপোর্ট করেছিলেন সেগুলো আমরা সংশোধন করার চেষ্টা অবশ্যই করবো।’
আগের কয়েকটি আসরে দেখা গেছে দর্শকশূন্য গ্যালারি। প্লে-অফ রাউন্ড ও ফাইনাল ছাড়া দেখা যায়নি মাঠে দর্শক উন্মাদনা। বঙ্গবন্ধু বিপিএল ঘিরেও থাকছে তেমন শঙ্কা।
বুধবার গড়াবে উদ্বোধনী ম্যাচ। অথচ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্টেডিয়ামের একনম্বর গেটের টিকেট কাউন্টারের সামনে দেখা গেল না দর্শকদের ভিড়। মাইকিং করেও ক্রেতা মিলছে না টিকিটের। আগের কয়েকটি আসরের মতো এবারও টিকেটের সর্বনিম্ন দাম ধরা হয়েছে ২০০ টাকা, সর্বোচ্চ ২০০০ টাকা। মাঠে দর্শক খুব বেশি দেখা না গেলে টিকিটের দাম কমানো যায় কিনা সেটি বিবেচনা করা হবে বলে জানান বিসিবির প্রধান নির্বাহী।