চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

প্রতিহিংসার রাজনীতি করলে বিএনপির অস্তিত্ব থাকতো না: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন: আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। যদি করতো, তাহলে এ দেশে বিএনপির কোনো অস্তিত্ব থাকত না।

বুধবার সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে বিএনপির সদস্য রুমিন ফারহানার এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন: জিয়াউর রহমানের প্রতিহিংসার বলি হয়ে জেলখানায় নির্মমভাবে নিহত হন জাতীয় চার নেতা। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানই হত্যা, ক্যু’র অপরাজনীতি শুরু করে। সশস্ত্র বাহিনীর শত শত অফিসার ও সৈনিককে হত্যা করে। ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাটের সংস্কৃতি চালু করে। একটা পুরো প্রজন্মকে নষ্ট করে দেয় জিয়াউর রহমান। তাই বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যের মুখে মানুষ মারার বিষয়টি অবলীলায় চলে আসে, এটাই তাদের দলীয় আদর্শ। জিয়ার স্ত্রী খালেদা জিয়া তার চেয়েও যে এক কাঠি সরেস- সে প্রমাণ তিনি রেখেছেন এ দেশে জঙ্গি সৃষ্টি, অগ্নি, সন্ত্রাস বোমা, হামলা মানি লন্ডারিং, এতিমের টাকা আত্মসাৎসহ হেন অপকর্ম নেই যা, তিনি ও তার পুত্রদ্বয় এবং তার দলের নেতারা করেননি।

তিনি আরও বলেন: উত্থাপনকারীর সদস্যের দলের নেত্রী খালেদা জিয়াও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার শাসনামলে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত সময়ে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টার, মমতাজউদ্দীনসহ আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকেসহ আওয়ামী লীগের পুরো নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল। আইভি রহমানসহ দলের ২২ নেতাকর্মী সেদিন নিহত হয়েছিল। রাষ্ট্রীয় মদদে খুনের নেশায় মত্ত হয়েছিল তার দল বিএনপি। এই সংসদে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়া বলেছিলেন- আমি নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে জনসভায় ছুড়েছিলাম।

‘২০১৪ সালের সেই বিভীষিকাময় বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাসের দিনগুলোর কথা কেউ ভুলে যাননি। বিএনপি নারী ও শিশুসহ ৫০০ জন নিরীহ মানুষ পুড়িয়ে মারে। নির্মমভাবে হত্যা করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ২৪ জন সদস্যকে। ৫৮২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৩ হাজার যানবাহন, ২৯টি রেল, ৯টি লঞ্চ এবং ৭০ টি সরকারি অফিসে অগ্নিসংযোগ করে। অসংখ্য বৃক্ষনিধনসহ গবাদিপশু আগুনে পুড়িয়ে মারে। তাদের অগ্নি সন্ত্রাসের হাত থেকে রক্ষা পায়নি শিশু মহিলারাও।’

শেখ হাসিনা বলেন: কোনো প্রতিষ্ঠানকে অকার্যকর করার জন্য নয়, সব প্রতিষ্ঠানকে আরও সক্রিয় রাখার জন্য আমি সদা-সর্বদা সচেষ্ট থাকি।’

তিনি বলেন: সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সরকার প্রধানের দায়িত্ব হলো সব মন্ত্রণালয়ের কাজের সমন্বয় করা। মন্ত্রীদের কাজের তদারকি করা। জনগণ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য। আরাম আয়েসের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব প্রহণ করিনি। আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। যিনি তার জীবনটাই উৎসর্গ করেছিলেন এই দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। তার কন্যা হিসেবে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার একটা আলাদা জায়গা রয়েছে। আমি সেটাই প্রতি পালনের চেষ্টা করি। সে জন্যই দিনরাত পরিশ্রম করি। কোন প্রতিষ্ঠানকে অকার্যকর করার জন্য নয়, সব প্রতিষ্ঠানকে আরও সক্রিয় রাখার জন্য আমি সদা-সর্বদা সচেষ্ট থাকি।

শেখ হাসিনা বলেন: আওয়ামী লীগ সরকার নিরলস প্রচেষ্টা এবং জনগণের অক্লান্ত পরিশ্রমে বাংলাদেশ বিশ্বে একটা মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি জায়গা দখল করেছে। এসব আপনা-আপনি হয়নি। সব পরিশ্রমে হয়েছে। প্রতিষ্ঠান অকার্যকর থাকলে সব অর্জন সম্ভব হতো না। কারণ রাষ্ট্র একটি যন্ত্রের মতো। এই যন্ত্রের বিভিন্ন কলকবজা যখন সমন্বিতভাবে কাজ করে, তখন রাষ্ট্র ভালো থাকে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কারণ, রাষ্ট্রযন্ত্র ভালোভাবে কাজ করছে। তা না করে সংসদ সদস্যের নেত্রী খালেদা জিয়ার মতো দুপুর বারোটা পর্যন্ত ঘুমিয়ে কাটালে কি উনি খুশি হতেন?

প্রধানমন্ত্রী বলেন: তিনি প্রতিষ্ঠান অকার্যকর হওয়ার কথা বলছেন। অকার্যকর রাষ্ট্রের উদাহরণ তো বিএনপি সৃষ্টি করেছিল। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রযন্ত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়- এমন ব্যক্তির কাছ থেকে আসতো। প্রধানমন্ত্রী ঘুমিয়ে থাকতেন, তার পুত্র হাওয়া ভবন থেকে মনমতো সিদ্ধান্ত নিত। মন্ত্রী, সচিবরা হাওয়া ভবন থেকে নির্দেশের অপেক্ষায় প্রহর গুণতেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিযোগ: বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য একটি অনাকাঙ্খিত, অসংসদীয় ও অবান্তর প্রশ্ন করেছেন। তিনি মানুষ হত্যা আর মশা মারাকে একই সমতলে নিয়ে এসেছেন।