বাঘা বাঘা সব প্রতিপক্ষকে পেছনে ফেলে কোপা ডেল রেতে বার্সেলোনার শিরোপা লড়াইয়ে প্রতিপক্ষ হয়েছে আলাভেস। সেটার পোশাকি মহড়ার একটি বিষয় তো ছিলই। সঙ্গে ছিল বার্সার প্রতিশোধের সুযোগও। লিগে প্রথম পর্বের দেখায় ন্যু ক্যাম্পে যেয়ে মেসিদের হারিয়ে চমকে দিয়েছিল আলাভেস। শনিবার কোপা ডেল রের মহড়ার সঙ্গে আগের হারের জ্বালায় একটু কঠিনভাবেই প্রলেপ দিল কাতালানরা। আলাভেসকে তাদেরই মাঠে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বার্সেলোনা।
গোল উৎসবের রাতে বার্সার হয়ে গোল পেয়েছেন ‘এমএসএন ত্রয়ী’র সকলেই। জোড়া গোল করেছেন লুইস সুয়ারেজ। একটি করে গোল লিওনেল মেসি, নেইমার ও ইভান রাকিটিচের। বাকি গোলটি আলাভেসের অ্যালেক্সিসের আত্মঘাতী।
গত সেপ্টেম্বরে বার্সার মাঠে ২-১ গোলে জিতেছিল আলাভেস। সেটি মাথায় রেখেই কিনা শুরুতে একটু সাবধানীই থাকল বার্সা। কিন্তু সময় যত গড়াল, স্বরূপ দেখাতে থাকলেন মেসি-নেইমাররা। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে ততক্ষণে খেলা জমে উঠেছে।
ম্যাচের ১৪ মিনিটে মেসির শট স্বাগতিক গোলরক্ষক আটকে না দিলে তখনই উৎসবের শুরু হয়। কিন্তু ঘরের মাঠে উজ্জীবিত আলাভেস যেনো পণ করেই নেমেছিল ছেড়ে কথা বলবে না। ২৩ মিনিটে নিজেদের তৈরি করা সহজ সুযোগটি অবশ্য কাজে লাগে পারেনি দলটি। সেসময় দেয়াল হয়ে দাঁড়ান অতিথিদের গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেন।
এরপরই আরেকটু নড়েচড়ে খেলতে শুরু করে বার্সা। যার ধারাবাহিকতায় প্রথম সাফল্যটি আসে ম্যাচের ৩৭ মিনিটে। অ্যালেক্স ভিদালের বাড়ানো বলে এসময় প্রতিপক্ষের জালমুখ খোলেন সুয়ারেজ।
তিন মিনিট না গড়াতেই স্কোরশিটে নাম লেখান নেইমার। মেসির বাতাসে ভাসানো বল সুয়ারেজের মাথা ছুঁয়ে নেইমারের নাগাল পায়। তা থেকে ব্যবধান দ্বিগুণ করতে ভুল করেননি ব্রাজিলিয়ান তারকা। প্রথমার্ধে ওই ব্যবধান ধরে রেখেই বিরতিতে যায় বার্সা।
মধ্যবিরতির পর ফিরে আগের জায়গা থেকেই শুরু করে অতিথিরা। অবশ্য প্রথম সুযোগটি সৃষ্টি করে আলাভেসই। যদিও রবের্তো সান্তোস টের স্টেগেনকে একা পেয়েও বল ক্রসবারের ওপর দিয়ে বাইরে পাঠান।
বার্সা তো আর সে পথে হাঁটার পণ ধরেনি! তাদের যে গোলের নেশায় পেয়ে বসেছে ততক্ষণে। তাতে ছটফট করতে থাকা মেসি ৫৯ মিনিটে প্রতিপক্ষের জাল খুঁজে নেন। পরের গোলটিও হতে পারতো মেসির।
ম্যাচের ৬৩ মিনিটে বল নিয়ে অনেকটা একক প্রচেষ্টায় দুর্দান্ত ক্ষীপ্রতার সাথে প্রতিপক্ষের বক্সের দিকে এগিয়ে গিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। কিন্তু তাকে থামাতে সবটুকু উজাড় করে দেন আলাভেসের হার্নান্দেজ। তিনিও অবশ্য বল ক্লিয়ার করতে পারেননি। উল্টো সতীর্থ অ্যালেক্সিসের পায়ে লাগিয়ে তাকে আত্মঘাতী গোলের বলি বানান! বলকে তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেয়ে সতীর্থের পায়ে লেগে নিজেদের জালেই জড়াতে দেখেন নিরুপায় হার্নান্দেজ!
পরের গল্পটুকু রাকিটিচ ও সুয়ারেজের। ৬৫ মিনিটে দুর্দান্ত শটে ৫-০ করেন রাকিটিচ। আর ৬৭ মিনিটে নেইমারের শট আলাভেসের গোলরক্ষকের গ্লাভস ছুঁয়ে ফেরত আসলে দ্বিতীয় সুযোগে নিজের দ্বিতীয় ও বার্সার ষষ্ঠ গোলটি করেন উরুগুয়ে তারকা সুয়ারেজ। যেটি চলতি লিগে তার ১৮তম গোল ও সর্বোচ্চ। তার অনেক গোলের কারিগর মেসিকে তাই ১৭ গোল নিয়ে দুইয়েই থাকতে হচ্ছে। ম্যাচের বাকি সময়ে আলাভেস রক্ষণ সামলাতে মন দেওয়ায় ওই ব্যবধান ধরে রেখেই মাঠ ছাড়ে লুইস এনরিকের শিষ্যরা।
এই জয়ে লিগে ২২ ম্যাচে ৪৮ পয়েন্ট হলো বার্সার। আপাতত লিগের শীর্ষে উঠে এসেছে কাতালনরা। সেটি অবশ্য স্থায়ী হওয়ার সুযোগ কমই। দুর্বল ওসাসুনার বিপক্ষে শনিবার রাতেই মাঠে নামবে রিয়াল মাদ্রিদ। ১৯ ম্যাচে ৪৬ পয়েন্ট মাদ্রিদের দলটির। এমনিতে আগে থেকেই বার্সার চেয়ে দুটি ম্যাচ কম খেলেছে তারা। শীর্ষে ফেরা তাই রোনালদোদের জন্য সময়ের ব্যাপার হয়েই দাঁড়াতে পারে।