তৈরি পোশাক শ্রমিকদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো তৈরি করতে মজুরি বোর্ড গঠন করেছে সরকার। বোর্ডের সুপারিশে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করবে সরকার। রোববার সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মজিবুল হক চু্ন্নু এই বোর্ড গঠনের ঘোষণা দেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, শ্রম মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আফরোজা খান, বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির, সাবেক সভাপতি ও হামিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ প্রমুখ।
প্রতিমন্ত্রী মজিবুল হক চু্ন্নু বলেন, তৈরি পোশাক শিল্প শ্রমিকদের জন্যে সরকার মজুরি বোর্ড ঘোষণা করেছে। এই বোর্ড আগামী ৬ মাসের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন নির্ধারণ করে সুপারিশ করবে। আশা করি সুপারিশের পর ডিসেম্বরের মধ্যে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করবে সরকার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, চেয়ারম্যানসহ এ কমিটিতে চারজন আছে। মাত্র কমিটি হলো। এরপর গেজেট হবে। গেজেট যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সে হিসাবে বেতন বাড়ানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এখনও অনেক সময়ের ব্যাপার।
নতুন মজুরি বোর্ডে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি থাকবেন সিদ্দিকুর রহমান এবং শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে থাকবেন শামসুন্নাহার ভূইয়া। বোর্ডের স্থায়ী সদস্যদের মধ্যে থাকবেন চেয়ারম্যান সাবেক জেলা জজ সৈয়দ আমিনুল ইসলাম। এছাড়াও সদস্যদের মধ্যে মালিক পক্ষের প্রতিনিধি থাকছেন কাজী সাইফুদ্দীন আহমদ, শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি থাকছেন জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি ফজলুল হক মন্টু। কমিটির নিরপেক্ষ সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন।
এর আগে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হয়। আর ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে নতুন মজুরি কাঠামোয় প্রথম বেতন পেয়েছিলেন শ্রমিকরা। তখন চারটি গ্রেডে বাস্তবায়ন করা এই মজুরি কাঠামোয় সর্বনিম্ন বেতন ধরা হয় ৫৩০০ টাকা।
ওই মজুরি কাঠামোতে প্রতি বছর পাঁচ শতাংশ হারে বেতন বাড়ার পাশাপাশি পাঁচ বছর পর নতুন বেতন কাঠামো করার কথা বলা ছিল। এই হিসাবে নতুন মজুরি কাঠামো চালু হতে আরও এক বছর সময় বাকি আছে। তবে সরকারের শেষ বছরে এই বিষয়টি নিয়ে যেন কোনো পক্ষ অস্থিরতা তৈরি করতে না পারে, সে জন্য সরকার আগেভাগেই উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
এর আগে শ্রম মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান মজুরি পুননির্ধারণের বিষয়ে বোর্ড গঠনের পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানান।
জানা গেছে, মূলত জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনগুলোর চাপেই মজুরি বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে বিজিএমইএ। আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন ইন্ডাস্ট্রিঅলের বাংলাদেশ চ্যাপ্টার, ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) পক্ষ থেকে বিজিএমইএর কাছে পাঠানো এক চিঠিতে জরুরিভিত্তিতে মজুরি বাড়ানোর দাবি জানানো হয়।
গত ১৭ অক্টোবর বিজিএমইএ সভাপতি বরাবরে এ চিঠি পাঠিয়েছেন আইবিসির মহাসচিব তৌহিদুর রহমান। চিঠিতে নতুন মজুরির বিষয়টি নিয়ে মাঠ পর্যায়ে শ্রমিক বা শ্রমিক সংগঠনের কোনোরূপ আন্দোলন-সংগ্রাম বা অসন্তোষ গড়ে ওঠার আগেই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়। পরদিন একই বক্তব্য সংবলিত একটি চিঠি শ্রম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারের কাছে পাঠান তারা।