‘আগের তুলনায় ছোট পর্দার অভিনেতাদের মধ্যে পেশাদারি মনোভাব কমছে, অর্থের দিকে ঝুঁকছেন প্রায় সবাই।’ এমন মন্তব্য করলেন প্রোগ্রাম প্রডিউসার অব বাংলাদেশের সভাপতি, জনপ্রিয় অভিনেতা ও নাট্যকার মামুনুর রশিদ।
দেশে টিভি নাটকের ঐতিহ্য এখন কি সোনালী অতীত? এমন জিজ্ঞাসাকে সামনে রেখে শুক্রবার বিকেলে ‘অভিনয় শিল্পী সংঘ’ আয়োজন করে ‘পেশাদারিত্বের সংকটে দেশের টেলিভিশন নাটক ও অভিনয় শিল্প’ নামের এক মুক্ত আলোচনা। যেখানে নিজের আলোচনায় পেশাদারিত্ব মনোভাব ও ছোট পর্দায় কাজের মান নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করেন অভিনেতারা। পেশাদারিত্ব নিয়ে দেয়া বক্তৃতায় বেশির ভাগ শিল্পীই অর্থ নিয়ে নিজেদের সংকটের কথা তুলে ধরেন। তারা মনে করেন অর্থ সংকটের কারণেই পেশাদারি মনোভাব গড়ে উঠছে না। তবে এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন প্রবীন অভিনেতা মামুনুর রশিদ।
পেশাদারিত্ব নিয়ে দেয়া বক্তৃতায় মামুনুর রশিদ বলেন, পেশাদারিত্ব আর অর্থ, এটা কিন্তু সমর্থক নয়। মুক্ত আলোচনায় আমরা যেভাবে অর্থের কথা তুলেছি, এটা একদম ঠিক হয়নি। পেশাদারিত্বকে আমি খুব সাধারণভাবে বুঝি যে, সময় দিয়ে সময়জ্ঞান ঠিক রাখা। কথা দিয়ে কথা ঠিক রাখা।
‘দেশে টিভি নাটকের ঐতিহ্য এখন কি সোনালী অতীত?’-এই বক্তব্যকে পুঁজি করে মামুনুর রশিদ বলেন, এক সময় পেশাদারিত্ব মনোভাবটা ছিলো, কিন্তু এখন খুব একটা নেই। আপনারা যে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সুখ্যাতি করছেন, ক’টাকা পেতাম সেময়? সেটা টাকা দিয়ে কি সংসার চলতো আমাদের? চলতো না। অথচ এখন এসে আপনারা সেই সময়টাকে বলছেন বাংলা নাটকের স্বর্ণ যুগ। কেন বলছেন? কারণ একটা নাটক করার আগে আমরা চারদিন রিহার্সেল করতাম। সময় জ্ঞান মেনে চলতাম। কিন্তু এখনতো প্রচুর অর্থ পাচ্ছেন অনেকে। সবাই হয়তো সেভাবে পাচ্ছেন না, কিন্তু আগের তুলনায় প্রচুর অর্থ এখন অভিনয় করে পাচ্ছেন। কিন্তু এসব দিয়ে কি নাটকের মান উন্নয়ন হচ্ছে? তারমানে কমিটমেন্ট কমে গেছে, অঙ্গীকার কমে গেছে, পেশাদারিত্ব কমে গেছে, অর্থ বেড়েছে। তবে অর্থেরও প্রয়োজন আছে, কিন্তু তার আগে পেশাদার মনোভাব তৈরি জরুরি।
বর্তমানে দেশের টিভি নাটকের পটভূমিত ছোট হয়ে আসছে, গল্পের চরিত্র কমে যাচ্ছে। শত শত অভিনয় শিল্পী কর্মহীন হয়ে পড়ছে এবং দর্শক প্রিয়তা হারাচ্ছে টিভি নাটক। এর উত্তরণের উপায় খুঁজতে শুক্রবার বিকালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় এক সেমিনারের। যেখানে উপস্থিত ছিলেন অভিনয় শিল্প সংঘের সভাপতি ও অভিনেতা শহীদুল আলম সাচ্চু, সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব নাসিম, হিল্লোল,আজাদ আবুল কালাম, চয়নিকা চৌধুরী,
সুইটি, চিত্রলেখা গুহ, মোহন খান, তানিয়া আহমেদ, সুমন আনোয়ারউর্মিলা শ্রাবন্তী কর, জাকিয়া বারী মম, শামিমা তুষ্টি, রওনক হাসান,আহমেদ রুবেল, মাজনুন মিজান, বৃন্দাবন দাস, এস এ হক অলিক, সনি রহমান, কে এস ফিরোজ, মৌটুসি বিশ্বাস, লুতফুর রহমান জর্জ, এজাজ মুন্না, মোস্তফা মনন, সাজিন হাসান বাবু সহ অনেক নাট্যকার, নির্মাতা, শিল্পী।
প্রবীন অভিনেতার মধ্যে ছিলেন ড. এনামুল হক, আবুল হায়াত,দিলারা জামান, মাসুম আজিজ, আফরোজা বানুসহ অনেকে।
কীভাবে নাটকের পেশাদারিত্ব সংকট দূর করা যায় সেটা নিয়ে আলোচনার আয়োজন করে অভিনয় শিল্পী সংঘ। এর সাথে নাট্যকার সংঘ, ডিরেক্টর গিল্ড, প্রডিউসারস এসোসিয়েশন একাত্মতা প্রকাশ করে তারাও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে দশটি বিষয়ের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়।