চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার আরেক নাম ক্যাপ্টেন জাকারিয়া

কক্সবাজারে উড়োজাহাড় নামানোর আগ মুহূর্তে যান্ত্রিক ক্রুটি আঁচ করতে পেরে নিরাপদে অবতরণের সুযোগ খুঁজছিলেন ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের পাইলট জাকারিয়া সবুজ। কিন্তু কক্সবাজারের এয়ারপোর্টে জরুরি অবতরণের প্রয়োজনীয় সুবিধা না থাকায় উড়োজাহাজটি ঘুরিয়ে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের দিকে রওনা হন। পরে অসাধারণ দক্ষতা ও সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব দিয়ে ১৭১ জনের জীবন রক্ষা করে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমান বন্দরে উড়োজাহাড়টি অবতরণ করান ক্যাপ্টেন জাকারিয়া সবুজ।

বুধবার চট্টগ্রামে জরুরি অবতরণে বাধ্য হওয়া ইউএস বাংলা এয়ার লাইন্সের ফ্লাইট বিএস-ওয়ান ফোর ওয়ান এর পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন জাকারিয়া। তার দক্ষতা আর সাহসিকতায় রক্ষা পেয়েছে ১৬৪ যাত্রীসহ ১৭১ আরোহীর জীবন। যাত্রীদের মধ্যে শিশু ছিল ১১ জন।

এত মানুষের জীবন রক্ষায় নিজের দক্ষতা ও সাহসিকতার প্রমাণ রাখা পাইলট ক্যাপ্টেন জাকারিয়া সবুজের সঙ্গে বুধবার রাতে মুঠোফোনে কথা হয় চ্যানেল আই অনলাইন-এর।

অবতরণের সময়কার পরিস্থিতির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন: বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকার হজরত শাহজালাল বিমান বন্দর থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে যাত্রা শুরু ছিল, দুপুর সাড়ে ১২টায় কক্সবাজারে পৌঁছানোর কথা ছিলো ফ্লাইটটির। অবতরণের আগে ফ্লাইটের সামনের চাকায় যান্ত্রিক ত্রুটি টের পাই।  নোজ হুইল না নামায় একের পর এক সব জরুরি ব্যবস্থা নিতে থাকি। ব্যর্থ হয়ে হয়ে টাওয়ারের সাথে কথা বলি। যেকোন জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে শাহ আমানতে সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি থাকায় কক্সবাজারের পরিবর্তে চট্টগ্রামে জরুরি অবতরণের সিদ্ধান্ত গ্রহন করি।  শাহ আমানতে অবতরণের আগে আরও একবার নোজ হুইল নামানোর চেষ্টা করি। সব চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে নোজ হুইল ছাড়াই চট্টগ্রামে জরুরি অবতরণ করাই।

অবতরণের সময় ব্যর্থ হচ্ছিলেন, তখনকার অনুভূতি কেমন ছিল জানতে চাইলে ক্যাপ্টেন জাকারিয়া বলেন: আমার প্রধান দায়িত্ব ছিল, যাত্রীদের কীভাবে সুস্থ ও নিরাপদে নিচে নামানো যায়। সেটাই করেছি। ইমার্জেন্সি পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের সবচেয়ে বেশি ট্রেইনড করানো হয়। যেভাবে ট্রেনিং দেয়া হয়েছিল, ঠিক সেভাবেই অ্যাকশনটা নিয়েছি।

জাকারিয়া বলেন: সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা কারণ কোন প্রকার অগ্নিসংযোগ ও ধোয়া ছাড়াই উড়োজাহাজটিকে অবতরণ করতে পেরেছি, আমার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে কাজে লাগাতে পেরেছি।

নেপাল দুর্ঘটনার পর আরেকটি দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে গেল ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স, ল্যান্ডিংয়ে ব্যর্থ হওয়ার সময় নেপাল ট্র্যাজিডির কিছু মনে হচ্ছিল কিনা জানতে চাইলে জাকারিয়া বলেন: আজকে যা হয়েছে তা যে কোন এয়ারলাইন্সের বেলায় ঘটতে পারত। ইউএস বাংলা শুরু থেকেই ফ্লাইট সেফটির ব্যাপারে সতর্ক।  নেপাল দুর্ঘটনার পরও আরও বেশি সতর্ক।

ঢাকা নিবাসী জাকারিয়ার জন্ম কুমিল্লাতে, বিএএফ শাহীন কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। বাংলাদেশ এয়ারফোর্স থেকে অবসরের পর ইউএস বাংলায় যোগদান করেন জাকারিয়া সবুজ।

যান্ত্রিক ত্রুটির পরও উড়োজাহাজের এমন সফল ও নিরাপদ অবতরণের পর সামাজিক গণমাধ্যম ফেসবুকে প্রশংসা ভাসছে পাইলট জাকারিয়া এবং ফাস্ট অফিসার সাইয়্যেদ রউফ।

বাংলাদেশের বহু পাইলট, ক্রু ও ফ্লাইট সংশ্লিষ্টরা তাদের ফেসবুকে ক্যাপ্টেন জাকারিয়ার ছবি দিয়ে তার সাহসিকতা ও চমৎকার অবতরণের ভূয়সী প্রশংসা করছে।