চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যমান বজায় রাখায় ২৪ কোম্পানি পুরস্কৃত

বাংলাদেশ সরকার পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য উত্তম চর্চা পুরস্কারে ভূষিত করেছে তৈরি পোশাক, পাট, চা, ওষুধ ও চামড়া শিল্পের ২৪টি কোম্পানিকে। তাদের স্ব স্ব কারখানায় নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যে ধারাবাহিকভাবে উচ্চ মান বজায় রাখায় এসব প্রতিষ্ঠানকে সম্মানিত করা হয়েছে।

রোববার কৃষিবিদ ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে জাতীয় পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে এ পুরষ্কার দেয়া হয়।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি, এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিকট সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানে টিপু মুনশি বলেন, ‘পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য আমাদের সবার সাধারণ ও সহযোগিতামূলক লক্ষ্য হওয়া উচিত। শ্রমিকদের দেখভাল না করলে শ্রমিকরা কীভাবে কাজ করবে?।’

প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন দুই অধিদপ্তর,কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শ্রম অধিদপ্তর নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।’

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব জনাব উম্মুল হাসনা তার বক্তব্যে পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য উত্তম চর্চার তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন: ‘ব্যবসার উৎপাদনশীলতা নির্ভর করে কারিগরি উদ্ভাবন, দক্ষ কর্মীবাহিনী এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ-এর উপর। কর্মীবাহিনীর কল্যাণ সাধনে ব্যবসায় সম্প্রদায়কে অনুপ্রাণিত করার জন্য আমাদের মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালে পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য উত্তম চর্চা পুরস্কার প্রবর্তন করে।’

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ডাইফের মহাপরিদর্শক শিবনাথ রায় বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে আমাদেরকে অবশ্যই নিরাপদ ও উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।’

আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পউটিয়াইনেন বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে সেইফটি কালচার গড়ে তোলার অব্যাহত প্রচেষ্টার জন্য বাংলাদেশ সরকার, ডাইফ, মালিক ও শ্রমিক সংস্থাসমূহ, ফায়ার সার্ভিস, এবং অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সকে সাধুবাদ জানান।

টুমো পউটিয়াইনেন বলেন, “বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প ক্রমাগত জেনে এসেছে কীভাবে এই শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের শিল্প দুর্ঘটনা ও মন্দ কর্মপরিবেশ থেকে রক্ষা করতে হয়। এসব শিক্ষা সকল শিল্প সেক্টরে প্রয়োগের সময় এসেছে। আর চারটি সেক্টরকে পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য উত্তম চর্চা পুরস্কার প্রদানের কথা জেনে আমি আনন্দিত। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য যেকোনো নতুন উদ্যোগকে সমর্থন করতে আইএলও প্রস্তুত।”

উন্নয়ন সহযোগীদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডের হাই কমিশনার মান্যবর হ্যারি ভারওয়েজ বলেন, ‘পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য উন্নয়নে আমরা বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করে যাচ্ছি, একই সাথে আমরা আমাদের দেশের ব্রান্ড ও ক্রেতাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যাতে তারা পণ্য ক্রয়ে আরো দায়িত্বশীল হন এবং বাংলাদেশের কারখানাসমূহে কর্মপরিবেশ উন্নয়নে সহযোগিতা প্রদান করেন।’

শ্রমিক প্রতিনিধিদের পক্ষে শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব ফজলুল হক মন্টু বলেন, নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুবিধাদি প্রত্যেক শ্রমিকের অধিকার।

বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন (বিইএফ) এর প্রেসিডেন্ট জনাব কামরান টি রহমান বলেন, স্বাস্থ্যবান কর্মী অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে, আর সেজন্যই শ্রমিকের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করা ব্যবসার জন্য সুফলদায়ক।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)-এর প্রেসিডেন্ট রুবানা হক পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য উন্নয়নে বিজিএমইএ’র কাজকে তুলে ধরে বলেন, “শ্রমিকদেরকে অগ্নি নিরাপত্তা, জরুরী নিষ্ক্রমণ ও প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য বিজিএমইএ-তে একটি বিশেষ সেল আছে। আমরা ভবিষ্যতে এরকম আরো উদ্যোগ বাড়ানোর চেষ্টা করব।”

বাংলাদেশ নীটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ)-এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জনাব মনসুর আহমদ বলেন, ‘আমাদের কারখানাসমূহকে নিরাপদ করা গেলে আরো বেশি ক্রেতা আমাদের প্রতি আগ্রহী হবে এবং বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের সুনাম গোটা বিশ্বে বাড়বে।’

বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য দিবস আয়োজন করা হয়েছিল ২০১৬ সালে, আইএলও’র তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মপরিবেশ উন্নয়ন কর্মসূচির সহযোগিতায়। কানাডা, নেদারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য সরকারর আর্থিক সহযোগিতায় পরিচালিত এই কর্মসূচির আওতায় সকল শ্রম পরিদর্শক, ৮০০,০০০ শ্রমিক, ট্রেড ইউনিয়ন সদস্য এবং কারখানা ব্যবস্থাপকদের পেশাগত সেইফটি ও স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।