তরুণ ওপেনার পৃথ্বী শ ডোপিংয়ে ধরা পড়ার পর ভারতীয় ক্রিকেটে নানা প্রশ্ন উঠছে। যা নিয়ে রীতিমতো বিতর্কও শুরু হয়েছে। পৃথ্বী-কাণ্ডের পর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের চিকিৎসক অভিজিৎ সালভি দাবি তুলেছেন, খেলা অনুযায়ী নিষিদ্ধ ওষুধের তালিকা তৈরি করুক বিশ্ব ডোপিং বিরোধী সংস্থা (ওয়াডা)।
পৃথ্বী শ কাশির ওষুধের মধ্যদিয়ে টার্বুটালাইনের মতো নিষিদ্ধ ওষুধ সেবন করেছিলেন। যে কারণে তাকে আট মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বিসিসিআই’র ডাক্তার অভিজিতের বক্তব্য, ‘রানিং বা সাইক্লিংয়ের মতো স্পোর্টের ক্ষেত্রে এই রকম ডোপিং খুব সাহায্য করে। ব্রিদিংয়ের ক্ষেত্রে যেমন সাহায্য করে, মাসল স্ট্রেংথও বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এটাই ক্রিকেটের ক্ষেত্রে কার্যকর নয়। কোনো ক্রিকেটারের মাসল আছে মানে এই নয় যে, সে বড় বড় ছক্কা মারবে বা তীব্র গতিতে বল করবে।’
পৃথ্বীর ঘটনার পর যেসব প্রশ্ন উঠছে, সেগুলো অনেকটা এই রকম.. কাশির ওষুধে নিষিদ্ধ টার্বুটালাইন মেশানো থাকে। কতটা পরিমাণ টার্বুটালাইন নিলে তবে এক জন ক্রিকেটারের পারফরম্যান্স বাড়ানো যায়?
টার্বুটালাইন নিলে কি কোনো ক্রিকেটার সেঞ্চুরি করতে পারেন? ক্রিকেট, যা কোনোভাবেই ফিজিক্যাল গেম নয়, সব অর্থেই স্কিল-বেসড। এই রকম খেলার ক্ষেত্রে কি ডোপিং কোনোভাবে প্রভাব ফেলতে পারে?
এই তিন প্রশ্ন একদিকে যেমন বিতর্ক তুলেছে, তেমনই কিছুটা হলেও অন্য প্রশ্নও তুলে দিচ্ছে। ক্রিকেট যতই স্কিল নির্ভর খেলা হোক, তার জন্য ডোপিংয়ের ওষুধ বা মাত্রা কোনোটাই আলাদা হতে পারে না।
এই যুক্তি তুলে ধরে ডাঃ অভিজিৎ জানান, ওয়ার্ল্ড অ্যান্ট ডোপিং এজেন্সি বা ওয়াডার উচিত ক্রিকেটের জন্য নিষিদ্ধ ওষুধের তালিকা যেন পুনর্বিবেচনা করে। যে দাবিকে আবার যুক্তিহীন বলেছেন অনেকেই। ওয়াডা সব খেলার জন্য একই নিয়ম অনুসরণ করে। সব খেলার ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ ওষুধের তালিকা একই। শুধু ক্রিকেটের কথা ভেবে কখনো সেই তালিকা বদলে যেতে পারে না।
তবু ডাঃ অভিজিৎ বলেছেন, ‘সমস্ত খেলার ধরন আবার নতুন করে খতিয়ে দেখা উচিত ওয়াডার। তার পর খেলা ভিত্তিক নিষিদ্ধ ওষুধের তালিকা তৈরি হওয়া উচিত। তারা রিসার্চের জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করে। এক্ষেত্রেও করা উচিত। আমার যত দূর মনে পড়ছে, এই বছরের গোড়ার দিকে ওয়াডা চিফ নিজেও স্বীকার করে নিয়েছিলেন যে, তাদের খেলা ভিত্তিক নিষিদ্ধ ওষুধের তালিকা তৈরি করা উচিত। কোনো দাবাড়ুর ক্ষেত্রে কি অ্যানাবলিক স্টেরয়েড নেয়ার অভিযোগে ডোপ টেস্ট হবে? হবে না।’
পৃথ্বীর পাশে দাঁড়িয়ে একই সঙ্গে বিসিসিআই’র ডাক্তার বলেছেন, ‘পৃথ্বীকে কোনোভাবেই দু’বছর নির্বাসন দেয়া যায় না। কারণ ও না বুঝে কাশির ওষুধটা খেলেছিল। আমরা একজন ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার নষ্ট করে দিতে পারি না। ক্রিকেটারদের ব্যাপারটা একেবারেই আলাদা। এক্ষেত্রে ডোপিংয়ের মূল্য খুব বেশি নেই। ঠিক এই কারণেই ডোপিংয়ের আইনটা আলাদা হওয়া উচিত।’
পৃথ্বীর ঘটনা ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন নয়। গত মৌসুমে এই একই কারণে ইউসুফ পাঠান ও অভিষেক গুপ্তা নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। ডাঃ অভিজিৎ বলেছেন, ‘এ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ক্রিকেটাররা একটাই ভুল করেছে, তারা বিসিসিআইয়ের অ্যান্টি ডোপিংয়ের সেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।’