ছোটবেলায় চটের বস্তায় ভরে গম ভাঙাতে যেতাম গম ভাঙানোর দোকানে। দোকানটা ছিল আজিমপুর ছাপরা মসজিদের সামনে, লাল মিয়ার বিরিয়ানির দোকানের পাশে।
দোকানের সামনে কিছুটা ফাঁকা জায়গা, সেখানে মালিক লোকটা একটা পাটি বিছিয়ে বসে থাকত। লোকটা ছিল অবাঙালি। দেখতে বেশ লম্বা আর ফর্সা। তার মাথায় সব সময় থাকত খন্দকার মোশতাক টাইপের টুপি। কথা বলত টেনে টেনে। লোকটা যখন ওরকম অদ্ভুত উচ্চারণে টেনে টেনে কথা বলত আমি তখন তার দিকে কিছুটা অবাক হয়েই তাকিয়ে থাকতাম। তবে লোকটার হাসির মধ্যে একরকমের সারল্য ছিল।
আমরা যারা গম নিয়ে লোকটার দোকানে যেতাম সে তার কর্মচারী দিয়ে প্রথমে গমের বস্তা মেপে নিত তারপর একটা স্লিপে বস্তা বহনকারীর নাম, গমের পরিমাণ আর দাম লিখে আমাদের হাতে ধরিয়ে দিত।
লোকটার গম ভাঙানোর মেশিন ভেতরের যে ঘরে ছিল সেই ঘরে ঢুকলেই মনে হতো আমি যেন কোনো প্রাগৈতিহাসিক আমলের অন্ধকার কুঠুরির ভেতর এসে পড়েছি! ঘরটা অন্ধকার, টিমটিম করে বাতি জ্বললেও দিনের আলোতে সেই বাতির আলো ঘরের পুরো অন্ধকার গিলে খেয়ে উঠতে পারত না।
ফলে দিনের বেলাতেও ঘরের ভেতর এক ধরণের থমথমে ভয় কিলবিল করত।
গম ভাঙানোর সময় প্রাগৈতিহাসিক আলো-অন্ধকারে মেতে থাকা মেশিন ঘরে আমার নাকে পৃথিবীর সেরা ঘ্রাণ এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ত।
কতকাল আগের কথা!
সেই ঘ্রাণ এখনো আমাকে স্মৃতির অতলে ডুবিয়ে রাখে…