পুলিশ কর্মকর্তার নাম থাকায় হত্যার অভিযোগে ঘটনার তিন দিন পরও মামলা নেয়নি টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার থানা পুলিশ। অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার নাম প্রত্যাহারের জন্য নানা কৌশলে চাপ দেয়া হলেও মাথা নত করেনি নিহতের পরিবার। শেষ পর্যন্ত আদালতে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন নিহতের স্বজনরা।
রোববার টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের পাথরাইলে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে নিহত হন সানা মোহন ঘোষ (৭২)। তার পরিবারের দাবি, তাকে খুন করেছেন দেলদুয়ার থানার এসআই ইয়াছিন আরাফাত ও প্রতিপক্ষ চৈতন্য রায়।
সানার পরিবারের অভিযোগ, পাথরাইল বাজারের প্রয়াত লাল মোহনের ছেলে সানা মোহনের সঙ্গে একই এলাকার চৈতন্য রায়ের বাড়ির সীমানা জমি নিয়ে বিরোধ ছিলো। সানার ছোট ভাই নরেন্দ্র ঘোষের ৬ শতাংশ জমি কেনাকে কেন্দ্র করে ঘটনার সুত্রপাত। জমি ক্রয়-বিক্রয়ে শর্ত থাকে এক হাত বরাবর রাস্তা থাকবে। নরেন্দ্র ঘোষ শর্ত মোতাবেক এক হাত রাস্তা ছেড়ে দেন। এরপরেও চৈতন্য নরেন্দ্র ঘোষের বড় ভাই সানা মোহন ঘোষের কাছে গাড়ি প্রবেশের মতো অতিরিক্ত জায়গা দাবি করেন। এটা নিয়েই বিরোধের সূত্রপাত হয়।
রোববার দুপুরে দেলদুয়ার থানা পুলিশ ও উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম ফেরদৌসসহ বেশ কয়েকজন লোক জায়গাটি পরিদর্শনে বা বিরোধ মিমাংসা করতে ঘটনাস্থলে আসে। আলোচনার এক পর্যায়ে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এর মধ্যেই চৈতন্য এসআই ইয়াছির আরাফাতকে সঙ্গে নিয়ে সীমানা প্রচীর ভাঙতে গেলে সানা মোহন বাধা দিলে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।
একপর্যায়ে এসআই ইয়াছিন আরাফাত সানা মোহনকে ধাক্কা দিলে সানা মোহন ঘরের দেয়ালে ধাক্কা লেগে মাটিতে পড়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক সানাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরে সন্ধ্যায় টাঙ্গাইলের এডিশনাল এসপি আসলাম খান, টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হোসেন ভূইয়া, দেলদুয়ার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোশাররফ হোসন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় নিহতের স্বজনরা এসপির কাছে দেলদুয়ার থানার এসআই ইয়াছিন আরাফাতের ধাক্কাতেই সানা মোহনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
এডিশনাল এসপি আসলাম খান উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এখন বিষয়টি নিয়ে ধুম্রজালে পড়েছি। চৈতন্য ও এসআই ইয়াসিন আরাফাত উভয়ের বিরুদ্ধেই অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধী যেই হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় এনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘটনায় পর সোমবার নিহতের স্ত্রী দুলালী ঘোষ বাদী হয়ে ১. চৈতন্য রায়, নিখীল সরকার, অনন্ত রায় ও দেলদুয়ার থানার এসআই ইয়াসিন আরাফাতের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে থানায় মামলা করতে গেলে এসআই’র নাম দেখে দেলদুয়ার থানার ওসি মামলা নেননি বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের স্বজনরা।
নিহতের ছেলে দিলীপ ঘোষ বলেন, এসআই’র নাম উঠিয়ে নিলে মামলা নেওয়া হবে। কিন্তু আমরা তার নাম প্রত্যাহার করবো না। তার জন্যই আমার বাবার মৃত্যু হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ঘটনার তিনদিন পার হলেও তারা মামলা না নিয়ে উল্টো নানা কৌশলে আমাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। পুলিশ যতো ভয়’ই দেখাক আমরা তাদের চাপে মাথা নত করবোনা। মে দিবসের বন্ধ থাকায় এবং মঙ্গলবার সারাদিনে দেলদুয়ার থানা পুলিশ কয়েক দফা থানায় ডেকে নিয়েও মামলা নেয়নি। বুধবার আদালতে মামলা করবেন বলেও জানান তিনি।
স্থানীয়রা জানায় মিমাংসার কথা বলে উপজেলা চেয়ারম্যান ও পুলিশ কিভাবে প্রাচীর ভাঙে! আর এই প্রাচীর ভাঙাকে কেন্দ্র করেই পুলিশ সদস্য ও চৈতন্যের ধাক্কাতেই সানা মোহনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করতে চাইলেও তারা মামলা নিচ্ছেনা। তাহলে তার মৃত্যুর দায় কে নিবে? বিচারই বা কিভাবে পাবে?
দেলদুয়ার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোশররফ হোসেন মামলা না নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ঘটনার পর নিহতের লাশ উদ্ধার ও সুরতাল রিপোর্ট তৈরি করে মৃত্যুর কারণ জানতে ময়না তদন্তের জন্য টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছিলো। ময়না তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করতে চাইলে আমরা অবশ্যই মামলা নেব।
এদিকে হত্যার অভিযোগ উঠায় চৈতন্য রায় ও তার পরিবার ঘটনার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন।