যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী অনলাইন প্রতিবাদী প্রচারণা ‘মি টু’ হ্যাশট্যাগে লাখ লাখ মানুষের অংশ নেয়ার পর এলো এ ধরণের অপরাধে জড়িত থাকার স্বীকারোক্তিমূলক হ্যাশট্যাগ ‘আই হ্যাভ’ (#IHave – আমি করেছি)।
ধর্ষণসহ যে কোনো ধরণের যৌন হয়রানির শিকার লাখ লাখ নারী ও পুরুষ ‘মি টু’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলোতে পুরো সপ্তাহ জুড়েই স্ট্যাটাস পোস্ট করেছেন এবং এখনো করছেন। তবে তাদের মধ্যে সিংহভাগই নারী।
ঠিক একইভাবে পুরুষশাসিত সমাজে যৌন নির্যাতন এবং হয়রানির কাজগুলো যেহেতু পুরুষের হাতেই বেশি হয়, তাই এখন পর্যন্ত পুরুষদের মধ্যেই নতুন হ্যাশট্যাগ ‘আই হ্যাভ’ লিখে দোষ স্বীকারের প্রবণতাটি দেখা যাচ্ছে। দোষ যত ছোটই হোক না কেন, হয়তো সেটা ছিল একটি ভুল, তবুও সাহস নিয়ে সবার সামনে সেটা স্বীকার করে এই হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাওয়ার সাহস দেখাচ্ছেন নানা বয়সের পুরুষ।
I have. I’m sorry.#IHave
— Lee “Carvin'” Garvin (@LeeGarv) October 16, 2017
বুধবার থেকে নতুন এই হ্যাশট্যাগটি ব্যবহার শুরু হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের টুইটার ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রথম এই নতুন হ্যাশট্যাগ ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয় বলে জানিয়েছে হাফিংটন পোস্ট। এখন পর্যন্ত ‘আই হ্যাভ’ প্রচারণায় অংশ নেয়াদের সংখ্যা খুব বেশি না হলেও সংখ্যাটি ধীরে ধীরে বাড়ছে।
first step of solving a problem is admitting you are one.#ihave
— J.W. Irvin (@Dubs_847) October 17, 2017
টুইটার ব্যবহারকারী এক পুরুষ হ্যাশট্যাগটি লিখে টুইট করেছেন, ‘কোনো সমস্যা সমাধানের প্রথম ধাপই হলো স্বীকার করা যে তুমিও ওই সমস্যার অংশ।’ আরেকজন টুইট করেছেন, ‘যৌন হয়রানি ও নির্যাতন – আমি এই সমস্যার অংশ ছিলাম এবং আমিই এখন এর সমাধানের অংশ হওয়ার চেষ্টা করছি।’
I have.
Sexual harassment & assault – I’ve been part of the problem and I’m working on being part of the solution. #IHave
— Neil Figuracion (@Fad23) October 16, 2017
অনেকে আবার নিজে কাউকে যৌন হয়রানি না করলেও অন্যকে কাজটি করতে দেখে বাধা দেননি বলে স্বীকার করে ‘আই হ্যাভ’ লিখছেন। এভাবেই পুরুষরা নিজেদের ভুল বা দোষ স্বীকার করে নতুন এই ক্যাম্পেইনে যোগ দিচ্ছেন এবং অন্যদের উৎসাহিত করছেন ভুল স্বীকারের এই প্রচেষ্টায় এগিয়ে আসতে।
#IHave let other men continue to harass and assault women and not stop them. I am sorry that #IHave kudos .@thehealypress (2/2)
— Matthew Riddle (@matthewriddle) October 17, 2017
তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী বহু নারীই অভিযোগ করছেন, নারীরা যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে এগিয়ে এলেও দোষ স্বীকার করতে খুব বেশি পুরুষকে এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে না। ‘তাদের এখন সৎ সাহস দেখানোর সময় এসেছে’ – এমন মন্তব্য করছেন অনেকে।
Why can’t men say #Ihave for the sexual harassment & sexual violence they have perpetrated? Time for men to take responsibility & name it
— Debbie Kilroy (@DebKilroy) October 16, 2017
কেউ কেউ আবার ক্ষোভ প্রকাশ করছেন, ‘আই হ্যাভ’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে যৌন নিপীড়নের দোষ স্বীকার করে পুরুষেরা ‘ভালো’ সেজে যাচ্ছে, সবার বাহবা পাচ্ছে এবং কৃতকর্মের জন্য তাদের কোনো শাস্তিও পেতে হচ্ছে না।
*sees men posting #ihave stories and facing zero punishment* wow so deep
— c u shiver w antici- (@KivaBay) October 16, 2017
there are men on my fb posting #ihave and getting more comments and likes for ‘their act of bravery’ more than the womxn who xp the trauma
— nikki alex basset (@nikkialexbasset) October 16, 2017
অবশ্য অনেক পুরুষও বলছেন, শুধু ‘আই হ্যাভ’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে স্ট্যাটাস দিলেই কোনো পুরুষকে ছাড় দেয়া ঠিক না যদি সে এখনো একই কাজ করতে থাকে।
Don’t ever give men who made #IHave posts the free pass. Especially if they are problematic to this day.
— Diego Lozano (@DiegoNachoAZ) October 17, 2017
নতুন এই হ্যাশট্যাগের মধ্য দিয়ে আরও একবার নির্মম এক স্পষ্ট বাস্তবতা আবারও চোখের সামনে উঠে এলো, বিশ্বজুড়ে এমন কোনো নারী হয়তো নেই যাকে জীবনে কখনো না কখনো কোনো না কোনোভাবে যৌন হয়রানির মুখে পড়তে হয়নি। তবে ‘মি টু’র মধ্যে যেমন সমাজের ট্যাবু ভেঙে প্রতিবাদের ইতিবাচকতা ছিল, তেমনি ‘আই হ্যাভ’ হ্যাশট্যাগও লজ্জা ভেঙে অপরাধ স্বীকারের সৎ সাহসকে সমাজের সামনে তুলে ধরছে, যা খুবই ইতিবাচক এবং আরও অনেক বেশি আশাব্যঞ্জক বলে মনে করছেন সামাজিক বিশ্লেষকরা।