আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে পি কে হালদারকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে সহযোগিতা করার অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ এবং ডিবিআই-২ এর দায়িত্ব থেকে নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক আদেশে তাকে এই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।
চ্যানেল আই অনলাইনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন: তার (শাহ আলম) বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তবে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তাকে দেয়া হয়েছে।
পরবর্তী কী ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন: বিষয়টি নিয়ে পর্যবেক্ষণ চলছে। এখনও আমাদের কাছে এসব বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য আসেনি। আদালত যদি নির্দেশনা দেয় তাহলে অবশ্যই বিধি অনুযায়ী পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।
একই অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরীর বিরুদ্ধেও। তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই মুখপাত্র বলেন: সুর স্যার তো এখন অবসরে চলে গেছেন। তাই সেই বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না।
ভুয়া প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে আর্থিক খাতের পিপলস লিজিং ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংসহ অন্তত ৫টি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার)। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এসব অর্থ হাতিয়ে নেয়ার তথ্য চাপা দিতো বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন টিম। আর এসব অনিয়মে সহায়তা করতেন সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী ও নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম। এর বিনিময়ে তারা বড় ধরনের আর্থিক সুবিধা পেতেন।
আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন পি কে হালদারের অন্যতম সহযোগী ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাশেদুল হক।
গত মঙ্গলবার ঢাকার সিএমএম আদালতে এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রাশেদুল হককে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়।
আদালতে দেয়া ওই জবানবন্দিতে রাশেদুল হক দাবি করেছেন: আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নানা অনিয়ম চাপা দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন কর্মকর্তাদের ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা করে দিতে হতো। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক শাহ আলমকে প্রতি মাসে দেয়া হতো ২ লাখ টাকা করে। আর এসব অনিয়ম ‘ম্যানেজ’ করতেন তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী। পি কে হালদারের সঙ্গে এস কে সুর চৌধুরীর ভালো সম্পর্ক ছিল।
এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগ থেকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং পরিদর্শন করার জন্য বছরে দুবার সহকারী পরিচালক থেকে যুগ্ম পরিচালক পদের দুজন কর্মকর্তা আসতেন। যারা অনিয়ম এড়িয়ে ইতিবাচক প্রতিবেদন দেয়ার বিনিময়ে নিতেন ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দেখভালের জন্য গত ২০১৩ সালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের মহাব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পান শাহ আলম। এরপর ২০১৭ সালের শেষ দিকে তাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক পদে দায়িত্ব দেয়া হয়।
শাহ আলম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে অনার্সসহ মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করে ১৯৮৮ সালে সহকারী পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ পরিদর্শন বিভাগ, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ, বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগ, ভিজিলেন্স ডিভিশন (বর্তমানে এফআইসিএসডি), বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।