পিলখানায় সংঘটিত কথিত বিদ্রোহের ঘটনায় তথ্য দিতে গোয়েন্দারা কেন নীরব ছিলো এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলে হাইকোর্ট তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, কোন রকম ষড়যন্ত্র ছাড়া এতো বড় হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে না। সেনা কর্মকর্তাদের হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সরকারকে বিপদে ফেলা এবং রাজনৈতিক সংকট তৈরির চেষ্টা করা হয়েছিলো।
পিলখানা হত্যা মামলার রায় ঘোষণার দ্বিতীয় দিনে আদালত তার পর্যবেক্ষণে একথা বলেন। সোমবার সকাল ১০ টা ৫৩ মিনিটে বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার তার রায়ের পর্যবেক্ষণ পড়া শুরু করেন। পর্যবেক্ষণ পড়ার পর বিচারপতি মো. শওকত হোসেন মূল রায় ঘোষণা করবেন।
রায় ঘোষণার আগে পর্যবেক্ষণে বেঞ্চের নেতৃত্বদানকারী বিচারপতি মো. শওকত হোসেন বলেছেন, অফিসার ও সোলজারের সম্পর্ক হতে হবে মানবিকতাপূর্ণ। অফিসারদের ঔপনিবেশিক মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে। ইগো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে, যে সোলজার সে আমাদেরই কারো ভাই। আমাদেরই কারো ছেলে। তারা এদেশেরই সন্তান।
এর আগে রোববার সকাল ১০ টা ৫৫ মিনিটে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন বেঞ্চের নেতৃত্বদানকারী বিচারপতি মো. শওকত হোসেন। পরে বেঞ্চের আরেক বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী তার রায়ের পর্যবেক্ষণ পড়েন। রোববার বিকেল ৪টায় আদালত মুলতবি করা হয়। তখন বিচারপতি মো. শওকত হোসেন বলেন, ‘পর্যবেক্ষণে আমাদের মতের ভিন্নতা থাকলেও চূড়ান্ত রায়ের ক্ষেত্রে আমরা একমত হয়েছি।’
২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি হাইকোর্টে এই মামলার শুনানি শুরু হয়ে গত ১৩ এপ্রিল। তিনশ’ ৭০তম দিনের শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে পিলখানা ট্র্যাজেডিতে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দু’টি মামলা হয়।
পরে মামলা দুটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তর করা হয় এবং মামলার বিচার চলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ সংলগ্ন অস্থায়ী এজলাসে।
২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকা মহানগর তৃতীয় বিশেষ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান এই হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। এটি ছিলো দেশের ইতিহাসে আসামির সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বড় হত্যা মামলা।
রায়ে বিডিআরের সাবেক ডিএডি তৌহিদসহ ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিএনপির সাবেক সাংসদ নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু (প্রয়াত), স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ২৭৭ জনকে খালাস দেন আদালত।
ওই রায়ের পর মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের ‘ডেথ রেফারেন্স’ হাইকোর্টে আসে। সেই সঙ্গে আসামিরা দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল ও জেল আপিল করেন। বিচারিক আদালতে খালাস পাওয়া ৬৯ জনের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।