দেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নামে-বেনামে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পালিয়ে থাকা পিকে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনা ও গ্রেপ্তারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
পিকে হাওলাদারের বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ নজরে নিয়ে বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো.নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন।
আদালত তার রুলে, পিকে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনা ও গ্রেপ্তারের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। দুদক চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঢাকা জেলা প্রশাসককে ১০ দিনের এই মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আর এবিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ২ ডিসেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে।
এসময় আদালত প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘কেউ দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করবে আর সে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে, এটা মগের মল্লুক নাকি? কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়। তাকে অবশ্যই দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের কাঠগড়ায় দাড় করাতে হবে। একজন মানুষ হাজার হাজার কোটি নিয়ে বিদেশ চলে যাবে। আর আইনের আওতার বাইরে থেকে সমস্ত জাতিকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখাবে এটা হতে পারে না।’
আদালতের স্বতঃপ্রণোদিত এই আদেশর সময় শুনানিতে ছিলেন দুদকের আইনজীবী মো.খুরশীদ আলম খান আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
এর আগে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয় পি কে হালদার জালিয়াতির মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে নামে-বেনামে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। যার প্রেক্ষাপটে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং তার গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরত দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এরই মধ্যে গোপনে দেশ ছাড়েন হালদার। পরবর্তীতে জানান যায় শুধু ইন্টারন্যাশনাল লিজিংই নয়, দেশের আরো কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পি কে হালদারের কারণে দেউলিয়া হতে বসেছে। এমন বাস্তবতায় নিজেদের টাকা ফেরত পেতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের একাধিক গ্রাহক আদালতের শরণাপন্ন হন। তখন হাইকোর্ট ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের চেয়ারম্যান হিসেবে সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে নিয়োগ দেন। তবে আদালতের আদেশে দায়িত্ব নেয়ার কছুদিন পর দায়িত্ব ছাড়েন তিনি।
এরপর হাইকোর্ট সাবেক সচিব নজরুল ইসলাম খানকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেন। এরপর পি কে হালদারের সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং যোগাযোগ শুরু করে। একপর্যায়ে হালদার ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের পরিচালনা পর্ষদের কাছে লিখিত আবেদন করে যে, তিনি নিরাপদে দেশে ফিরে আইএলএফএসএল অর্থ উদ্ধারে সহায়তা করতে চান। পরবর্তীতে আবেদনটি হাইকোর্টে দাখিল করে আইএলএফএসএল। তবে পি কে হালদার কবে দেশে ফিরবেন, তা জানাতে বলেন হাইকোর্ট। সে অনুযায়ী হাইকোর্টকে জানানো হয় যে, ২৫ অক্টোবর দুবাই থেকে অ্যামিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে পি কে হালদার ঢাকা আসার জন্য টিকিট কেটেছেন। ওইদিন বাংলাদেশ সময় সকাল ৮ টায় ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে। এরপর হাইকোর্ট আদেশ দেন যে, বিদেশ থেকে দেশের এয়ারপোর্টে পা ফেলার সাথে সাথেই পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার করে যেন আদালতে সোপর্দ করা হয়। তবে হাইকোর্টের ওই আদেশের পর পি কে হালদার আর দেশে ফেরেনি।