আবারও রক্ত ঝরলো পাহাড়ে। এবার প্রাণ গেলো ৬ ব্যক্তির। যারা দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে দায়িত্ব পালন শেষে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরছিলেন। কিন্তু রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ির নয় কিলোমিটার এলাকায় দুর্বৃত্তদের ব্রাশফায়ারে প্রাণ হারান। এখন পর্যন্ত এই হামলার দায় কেউ স্বীকার করেনি। তবে পার্বত্য এলাকায় বিবাদমান সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে যে দ্বন্দ্ব, তার সুযোগ নিয়েছে কোনো একটি পক্ষ।
এ বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। শুধু হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পুলিশ প্রশাসন। অবশ্য আগে পাহাড়ে বড় বড় হত্যাকাণ্ডের পরও এমনই পরিস্থিতি আমরা দেখেছি। কয়েকদিন সেই ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ-মিছিল, আলোচনা-সমালোচনা, টকশো-লেখালেখি এবং তদন্ত শুরু হয়। তারপর আস্তে আস্তে তা স্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়ার আগে নতুন কোনো ঘটনার জন্ম হয়।
গত বছর এমন তিন বড় ঘটনার কথা উল্লেখ করা যায়। যার প্রথমটি ৩ মে’র ঘটনা। সেদিন দুর্বৃত্তরা রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শক্তিমান চাকমাকে গুলি করে হত্যা করে।
এর ঠিক পরের দিনই ঘটে ভয়াবহ আরেক ঘটনা। শক্তিমানের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে ইউপিডিএফয়ের একাংশের নেতা তপন জ্যোতি চাকমাসহ ৫ জনকে হত্যা করা হয়। আর গত ১৬ আগস্ট খাগড়াছড়িতে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-ইউপিডিএফ-এর একটি সমাবেশে দুর্বৃত্তদের ব্রাশফায়ারে নিহত হয় ৬ জন।
এমন অসংখ্য ঘটনা পাহাড়ে অতীতেও ঘটেছে। ঘটনাগুলোর ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করলে নিশ্চিত করেই বলা যায়, ভবিষ্যতেও তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। কিন্তু কোনোভাবেও কি এই রক্তপাত বন্ধ করা সম্ভব না? যে কোনো জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকবে। সেটাই স্বাভাবিক। তাই বলে যুগের পর যুগ প্রাণ কেড়ে নেওয়ার সাংস্কৃতি চলতেই থাকবে?
আমরা জানি, দীর্ঘ বছরের রক্তাক্ত লড়াই বন্ধ হয়েছিল ১৯৯৭ সালে শান্তি চুক্তির পর। কিন্তু সেই চুক্তির বিরোধীতার মধ্যে জন্ম নেওয়া একাধিক সংগঠনের নতুন লড়াই মূলত এমন হামলার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। তবে যেভাবেই হোক এই রক্তপাত, প্রাণহানী বন্ধ করতে হবে। এর সঙ্গে প্রকৃতপক্ষে যারা জড়িত তাদেরকে খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে হবে।
আমরা মনে করি, হিংসা শুধু হিংসাই বাড়াতে পারে। শান্তি আনতে পারে না। শান্তির জন্য চাই মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা।