চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

‘পারসোনাল ডেটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট’: আইনটি আসলে কেন তৈরি হচ্ছে?

নতুন একটি আইন তৈরি করতে যাচ্ছে সরকার, আর ‘পারসোনাল ডেটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট’ নামের এই আইনটি তৈরি হওয়ার আগেই চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক মাধ্যমগুলো মানুষের জীবনের একটি অন্যতম অংশ হয়ে দেখা দিচ্ছে। সেইসঙ্গে তথ্য, ব্যক্তিগত তথ্য আর সেইসব তথ্যের নানা ব্যবহার-অপব্যবহার নিয়েও নানা প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে।

সরকারের দাবি, বদলে যাওয়া এই প্রেক্ষাপটে ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তায় এই আইন হতে যাচ্ছে। কিন্তু সঙ্গত কারণেই নতুন এই আইনটি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করতে শুরু করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অভিজ্ঞতা খুব একটা ভাল না। সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারাতে যেকোনো প্রস্তাবিত আইন বিষয়ে একটি প্রশ্ন করা যেতেই পারে, তা হলো কার প্রয়োজনে আইনটি তৈরি করা হচ্ছে? বর্তমান প্রেক্ষাপটে জাতীয় সংসদে কোনো বিল বা খসড়া উত্থাপিত হলে কোনো বিতর্কের দরকার পড়ে না বেশিরভাগ সময়েই। খুব সহজেই তা পাশ হয়ে যায়। এরআগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিষয়ে বিভিন্ন পেশাজীবী ও সিভিল সোসাইটির নানা উদ্বেগ থাকলেও তা খুব একটা পাত্তা পায়নি।

সামাজিক মাধ্যমে স্পর্শকাতর ব্যক্তিগত তথ্য বলতে সাধারণত কারো ছবি, ভিডিও ও ফোনালাপকে ধরা হয়ে থাকে। এছাড়া ক্রেডিট কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং, ইমেইলসহ নানা বিষয়ের গোপন তথ্যও ধরা হয়ে থাকে। এসব বিষয়ে জনগণকে সুরক্ষা দেয়ার লক্ষ্যে টেলিযোগাযোগ খাতে বেশ কিছু আইন আছে। প্রচলিত নানা আইনেও ব্যবস্থা নেয়া যায়, নানা তথ্য বিষয়ক অঘটনে। তারপরেও গেল এক দশকের বেশি সময় হলো হরহামেশাই ভিডিও, অডিও ও ফোনালাপ ফাঁস এবং তা সামাজিক মাধ্যম-গণমাধ্যমে চলে আসছে। কার ভিডিও/ফোনালাপ ফাঁস হলো, আর তার ফলে কার লাভ/ক্ষতি, এসব বিবেচনায় অনেকসময় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আর বেশিরভাগ সময়ই বিষয়টি নিয়ে হাসি-তামাশা নয়তো প্রতিপক্ষকে ঘায়েলে ব্যবহার হচ্ছে। বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশনের ফলে পুরো দেশ নিরাপদ হয়ে উঠবে, এটা বলা হলেও বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংসহ নানা বিষয়ে প্রতারণা থেমে নেই।

নতুন এই আইনটি আসলে কেন তৈরি হচ্ছে? এটি কি আরেকটি কালো আইন হতে যাচ্ছে? এ বিষয়ে অনেকে অভিযোগ করছেন যে, সরকার জনগণের তথ্য নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়। ফেসবুক, ইউটিউব ও টুইটারের মতো সামাজিক মাধ্যমে বহু প্রয়োজনীয় তথ্যের পাশাপাশি বহু সরকার বিরোধী ও দেশ বিরোধী তথ্যও চলে আসে। সরকার বিভিন্ন সময় সেসব তথ্যের বিষয়ে ওইসব সামাজিক মাধ্যমের সাথে যোগাযোগ করলেও তারা সরকারের চাহিদা মতো তথ্য দেয় না। বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীল মন্ত্রীর বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে আসছে বহুদিন ধরে। ধারণা করা হচ্ছে, সেসব কারণেই সরকার দেশে ওইসব কোম্পানির সার্ভার বসানোর বাধ্যবাধকতাসহ তথ্য পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাচ্ছে। ইউরোপের জেনারেল ডেটা প্রোটেকশন রেগুলেশনের (জিডিপিআর) উদাহরণও দিচ্ছেন অনেকে। কিন্তু ইউরোপের সাধারণ একজন নাগরিক আর কোনো মন্ত্রীর আইনি সুরক্ষা-অধিকার যে একইরকম হয়ে থাকে, সেসবের সাথে দেশের আইনি বিষয়ের তুলনা করা হচ্ছে খুবই কম।

সরকারের হয়তো জনগণের গোপনীয়তা রক্ষায় সদিচ্ছা আছে, কিন্তু তথ্যের অপব্যবহারের শঙ্কাও থেকে যাচ্ছে। প্রস্তাবিত আইনে ‘সরল বিশ্বাসের’ সুবিধা সম্বলিত দায়মুক্তির অপব্যবহারের শঙ্কাও ভেবে দেখা উচিত। আইনের ধারায় আইন সবার জন্য সমান, কিন্তু বাস্তবতা নিয়ে অনেকে গোপনে প্রকাশ্যে অভিযোগ করে থাকেন। আমাদের আশাবাদ, সার্বিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় জনগণের মতামত সহকারে নতুন যেকোনো আইন তৈরিতে করবেন সংশ্লিষ্টরা।