পারমাণবিক শক্তির নিরাপদ ও সুরক্ষিত প্রয়োগের বহুল প্রতীক্ষিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের মূল কাজের উদ্বোধনের মাধ্যমে বিজয়ের মাসের প্রাক্কালে আরেক মাইলফলক স্পর্শ করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে বাংলাদেশের নতুন এক পথচলা। এটা স্বীকার করতে হবে যে, যেকোন উন্নয়নে বিদ্যুতের চাহিদা অপরিসীম। কিন্তু চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের সরবরাহ কম থাকায় দুর্ভোগ এবং দেশের সার্বিক উন্নয়ন ব্যাহত হওয়ার খবর আমরা জানি। আশার বিষয় হলো- ২০২৪ সালের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের যোগান দেবে এই পারমাণবিক কেন্দ্র। এই বিষয়টি অবশ্যই আশার খবর। এছাড়া আধুনিক বিশ্বে পারমাণবিক সক্ষমতার বিষয়টিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পাবনা জেলার রূপপুরে প্রধানমন্ত্রী দেশের এই প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করে বাংলাদেশের নবযাত্রা শুরু করেছেন বলে আমরা মনে করি। এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্থাপনে অবশ্য শুরু থেকেই অনেক বিরোধিতা ছিল। তাদের আশঙ্কার মূল বিষয় ছিল পারমাণবিক বর্জ্যের কারণে পরিবেশের ক্ষতি। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘পরিবেশ ও মানুষের যাতে ক্ষতি না হয় তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যেকোন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ তার ব্যবহৃত জ্বালানি বা বর্জ্য অপসারণ ব্যবস্থাপনা। রুশ ফেডারেশন এসব বর্জ্য তাদের দেশে ফেরত নিয়ে যাবে। এ ব্যাপারে রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে।’ তিনি জানান, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রে পারমাণবিক নিরাপত্তার উপর আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছি। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) গাইডলাইন অক্ষরে অক্ষরে অনুসরণ করছি।’ আমরা প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে আশ্বস্ত হতে চাই। তবে আমরা মনে করি, বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা যেমন রয়েছে, ঠিক তেমনি মানুষের জন্যই সকল উন্নয়ন। তাই মানুষের স্বার্থেই নিরাপদ পরিবেশ জরুরি। পারমাণবিক বর্জ্য অপসারণ এবং তেজস্ক্রিয়তার বিষয়টি খুব গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। এর পাশাপাশি এই প্রকল্প নির্মাণে আর্থিক স্বচ্ছতার বিষয়টিও জরুরি। এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হওয়া সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি।