বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পসহ বিশুদ্ধ পানি ব্যবস্থাপনা ও ওষুধ খাতে বিনিয়োগ করতে চায় হাঙ্গেরি।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপুর সাথে মতবিনিময় করেন বাংলাদেশে সফররত হাঙ্গেরির পররাষ্ট্র ও বাণিজ্যমন্ত্রী পিটার সিজিজারটো’র নেতৃত্বাধীন উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল। ওই মতবিনিময় সভায় এই আগ্রহের কথা জানান পিটার সিজিজারটো।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, হাঙ্গেরির পররাষ্ট্র ও বাণিজ্যমন্ত্রী পিটার সিজিজারটো বলেন, হাঙ্গেরির ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহী। এজন্য একটি জয়েন্ট ট্রেড বা যৌথ ব্যবসা কমিশন গঠন করা যেতে পারে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে হাঙ্গেরি এই কমিশন গঠনের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে হাঙ্গেরি এগ্রোফুড প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিসহ বাংলাদেশের বিশুদ্ধ পানি ব্যবস্থাপনা ও ওষুধ খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক ইন্ডাস্ট্রিতে আধুনিক প্রযুক্তি ও মেশিনারিজ সরবরাহ করার সুযোগ রয়েছে।
পিটার সিজিজারটো বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা আকর্ষনীয়। হাঙ্গেরি এসব সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে চায়।
করোনাভাইরাস মোকাবেলা এবং করোনাকালে রপ্তানি বাণিজ্য এবং অর্থনৈকিত কর্মকাণ্ড সচল রাখার প্রশংসা করে তিনি বলেন, বৈদেশিক বাণিজ্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক সক্ষমতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় হাঙ্গেরি অংশীদার হতে চায়।
সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, হাঙ্গেরির সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রচুর সুযোগ রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে জাপান, ভারত, চীন, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে এগিয়ে এসেছে। পরিবর্তনশীল বিশ্ববাণিজ্য পরিস্থিতিতে আমেরিকা, জাপানসহ অনেক দেশ তাদের শিল্প-কলকারখানা বাংলাদেশে স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করছে। দেশগুলো বাংলাদেশকে এখন বিনিয়োগের উপযুক্ত স্থান মনে করছে বলে জানান তিনি।
টিপু মুনশি বলেন, বাংলাদেশ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে (এফডিআই) ট্যাক্সসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। প্রায় ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশ পণ্যের একটি বড় বাজার। এখানে হাঙ্গেরি বিনিয়োগ করলে লাভবান হবে।
হাঙ্গেরির পররাষ্ট্র ও বাণিজ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, উভয় দেশের মধ্যে একটি জয়েন্ট ট্রেড কমিশন বা যৌথ বাণিজ্য কমিশন গঠনের মাধমে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের খাতগুলো চিহ্নিত করা সহজ হবে। এগ্রোফুড প্রসেসিং, বিশুদ্ধপানি ব্যবস্থাপনা এবং ফার্মাসিউটিক্যালস সেক্টরে হাঙ্গেরির বিনিয়োগকে বাংলাদেশ স্বাগত জানাবে। এছাড়া আইসিটি, সেবাখাতে বিনিয়োগের প্রচুর সুযোগ রয়েছে।
টিপু মুনশি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসনিার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দক্ষতার সাথে সফলভাবে কোভিড-১৯ মোকাবেলা করছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক। বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। এ সেক্টরে প্রায় ৪৮ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। সরকার এ শিল্পকে সচল রাখতে আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছে।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কলকারখানা চালু রেখে রপ্তানি বাণিজ্য সচল রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন উন্নত দেশের চাহিদা মোতাবেক বিশ্বমানের মাস্ক, পিপিইসহ বিভিন্ন মেডিক্যাল পণ্য রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ কোভিড-১৯ প্রতিরোধকারী ফ্যাব্রিক তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। বিভিন্ন দেশে এগুলোর চাহিদা বাড়ছে। বিশ্বমানের মেডিকেল পণ্য উৎপাদন করে প্রায় ১৪২টি দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে হাঙ্গেরিতে রপ্তানি করেছে ১১ দশমিক ৭০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য, একই সময়ে আমদানি করেছে ১২ দশমিক ১২ মিলিয়ন ডলারের পণ্য।
এছাড়া ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে বাংলাদেশ ১৮ দশমিক ৯৩ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে এবং জুলাই-মার্চ সময়ে আমদানি করেছে ১১ দশমিক ৫১ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য।