পাঠ্যপুস্তকে ভুল নিয়ে যে তোলপাড় সেজন্য দায় কার? বছরের প্রথম দিন শিশুদের হাতে বই তুলে দেওয়ার পর একে একে ভুল বের হতে থাকলে গত কিছুদিন সবচেয়ে বেশিবার উচ্চারিত এ প্রশ্ন। ভুলগুলোর জন্য দায় নিয়ে সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করতে রাজি নন । তাদের বক্তব্য, পাঠ্যপুস্তকে ভুল বিষয়ে গঠিত এনসিটিবির কমিটির প্রতিবেদনের পরই বিস্তারিত বলা যাবে।
প্রথম শ্রেণীর বইয়ে ‘ও তে ওড়না’ বা কুসুমকুমারী দাশের লেখা ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতায় কিছু জায়গায় পরিবর্তনসহ আরো কিছু বিষয় নিয়ে অনেকে ক্ষুব্ধ। আবার হুমায়ুন আজাদের ‘বই’ কবিতা বাদ দেয়া নিয়ে অনেকের আপত্তির বিপরীতে সন্তুষ্টিও আছে অনেকের।
প্রথম শ্রেণির ‘আমার বাংলা বই’ এর বর্ণ পরিচয় অংশে ‘ওড়না’ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা তীব্র হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। একই শ্রেণির ‘আমার বাংলায়’ ১১ নম্বর পৃষ্ঠায় রয়েছে ‘ছাগল আম খায়’ এর মতো তথ্য।
আবার, তৃতীয় শ্রেণির ‘আমার বাংলা বই’-এ কুসুমকুমারী দাশের লেখা ‘আদর্শ ছেলে’ পদ্যটি বিকৃত করা হয়েছে। মূল কবিতাটিতে আছে ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে’ অথচ বইয়ে ছাপা হয়েছে ‘আমাদের দেশে সেই ছেলে কবে হবে?‘
প্রথম শ্রেণি, পঞ্চম শ্রেণি, ষষ্ঠ শ্রেণি ও অষ্টম শ্রেণির একাধিক বইয়ে আরো ভুল রয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির একটি বইয়ে উপদেশমূলক লেখাতে ‘Do not hurt anybody’র বদলে লেখা হয়েছে `Do not heart anybody’।
এসব ভুলভ্রান্তিতে দায় কার?
বিষয়টি নিয়ে এখনই কোন মন্তব্য করতে নারাজ প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। এনসিটিবি (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড) চেয়ারম্যান নারায়নচন্দ্র সাহাও অপেক্ষার পক্ষে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বলেন, এক কথায় বলতে হলে কমিটির প্রতিবেদনের পরেই এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে পারবো।
‘তবে একটি বইয়ে যদি ছোট ছোট দুয়েকটি ভুল থাকে তাহলে সেটার জন্য তো পুরো বই নতুন করে ছাপানো সম্ভব না ,’ মন্তব্য করে তিনি বলেন: সেক্ষেত্রে কমিটির প্রতিবেদনের পরই এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে যে কিভাবে এসব সমস্যার সমাধান করা হবে, বা শিক্ষার্থীদের কাছে কীভাবে ভুলগুলোর সমাধান পৌঁছে দেওয়া হবে।
‘যেমন অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে সমুদ্র বানানটি ভুল হয়েছে। সেখানে হয়তো দ-এ র-ফলাটা পড়েনি। সেটা একটা প্রিন্টিং মিসটেক। সেজন্য তো আর পুরো বই নতুন করে ছাপানো সম্ভব না। সেক্ষেত্রে তাহলে কী করা হবে, এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পরে।’
একইরকম কথা বলেন এনসিটিবি চেয়ারম্যান নারায়নচন্দ্র সাহা।
ভুলগুলো কেন হয়েছে এবং কীভাবে হয়েছে সে বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন: কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিলে তখন আমরা বলতে পারবো এই ভুলগুলো কোন পর্যায়ে হয়েছে।
‘কিছু কিছু বিষয় আছে যেখানে ভুলগুলো কেবলমাত্র প্রিন্টিং মিসটেক। সেই সব বিষয়ই উঠে আসবে প্রতিবেদনে।’
প্রতিবেদন শেষে কিছু সুপারিশও দেবে কমিটি। সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান এনসিটিবি চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে ছোট ছোট ভুল পরিমার্জনে তারা আরো বেশি সচেতন থাকবেন।