ভারতের মুম্বাই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হাফিজ সাইদ যেসব ‘দাতব্য’ খাতে দান করতে আহ্বান জানান, সেসব খাতে অর্থ দিলে পাকিস্তানের নাগরিকদের সর্বোচ্চ দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। সঙ্গে দিতে হতে পারে মোটা অঙ্কের জরিমানা।
পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে জনগণের উদ্দেশ্যে এ সতর্কবার্তা প্রকাশ করা হয়েছে।
ইসলামাবাদ জঙ্গিদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে অভিযোগ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেয়া কড়া বিবৃতির পর এ ঘোষণা দিলো পাকিস্তান সরকার।
ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিনে এক টুইটবার্তায় ট্রাম্প অভিযোগ করেন, গত ১৫ বছর ধরে প্রায় ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার বিনিময়ে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রকে ‘মিথ্যা ও ধোঁকাবাজি’ এবং জঙ্গিদের ‘নিরাপদ আশ্রয়’ ছাড়া আর কিছুই দেয়নি। এরপর পাকিস্তান জঙ্গি দলগুলোকে শক্ত হাতে দমন করতে ব্যর্থ হচ্ছে, এই অভিযোগে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র দেশটিতে ২শ’ কোটি মার্কিন ডলারের নিরাপত্তা সহায়তা বন্ধ করে দেয়। আর শনিবার হোয়াইট হাউজ এক বিবৃতিতে হুঁশিয়ারি দেয়, পাকিস্তান তালেবান ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে জোরালো সিদ্ধান্ত না নিলে এবং তাদের নিরাপদ ঘাঁটিগুলোকে ধ্বংস করতে না পারলে দেশটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্য সব উপায়ই ভেবে দেখবে।
পাকিস্তানের সব গণমাধ্যম জুড়ে প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে সরকার জামাত-উদ-দুয়া (জেইউডি), ফালাহ-ই-ইনসানিয়াত ফাউন্ডেশন (এফআইএফ), হাফিজ সায়িদের লস্কর-ই-তইয়্যেবা এবং মাসুদ আজহারের জাইশ-ই-মোহাম্মদসহ ৭২টি সংগঠনের তালিকা দিয়েছে। এ সংগঠনগুলোকে জনগণের অর্থ সহায়তা পাওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান এবং জাতিসংঘের সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুসারে এই সংগঠনগুলোকে যে কোনো ধরণের অর্থ সহায়তা দেয়া অপরাধ বলে গণ্য হবে, কেননা এগুলো জঙ্গি-সন্ত্রাসী সংগঠন ছাড়া আর কিছু নয়। তাই এদেরকে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংস্থা অর্থ দান করলে তাকে/তাদেরকে শাস্তি হিসেবে ৫ থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড অথবা এক কোটি রুপি অর্থদণ্ড অথবা দুই দণ্ডই দেয়া হতে পারে।
সাধারণ মানুষের দানের টাকা ভুল হাতে পড়া ঠেকাতে চায় বলে জানিয়েছে পাকিস্তান সরকার। এজন্যই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জেইউডি এবং এফআইএফ’কে যুক্তরাষ্ট্র ২০০৮ সালের নভেম্বরে মুম্বাই হামলা ঘটানো লস্কর-ই-তইয়্যেবার ‘টেররিস্ট ফ্রন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ওই হামলায় মোট ১৬৬ জন নিহত হয়। হাফিজ সাইদকে সাজা দেয়ার মতো তথ্যের বিনিময়ে এক কোটি মার্কিন ডলার পুরস্কার দেয়ারও ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
পাকিস্তান সরকার এই হাফিজ সাইদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ধরণের ‘দাতব্য’ সংস্থা ও আর্থিক সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পরিকল্পনা করছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও দলিলাদি থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানিয়েছে এনডিটিভি।