চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

পর্যবেক্ষকদের ভিসা পেতে দেরি বা না হওয়ার কারণ সেই ‘অধিকার’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (এনফ্রেল)-এর প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশে আসার ভিসা সময়মতো না পাওয়ার পেছনে বাংলাদেশি বিতর্কিত মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা ‘অধিকার’ দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এনফ্রেলের প্রতিনিধি দলটির তথ্যের একটি স্ক্রিনশটসহ দেয়া স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন:

‘এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনসের বাংলাদেশে সদস্য হচ্ছে ODHIKAR এর প্রতিষ্ঠাতা, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আদিলুর রহমান খান। তার তত্ত্বাবধানে কাজ করবে যেসব বিদেশি, তাদের ভিসা দিতে তো আমাদের সময় লাগতেই পারে অথবা সিদ্ধান্ত আসতেই পারে তাদের দেয়া হবে না।

এই অধিকার বাংলাদেশের বিপক্ষে অতীতে কী কী করেছে তা নিশ্চয়ই আমরা ভুলে যাইনি!

আর নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজ যারা করবেন তাদের জন্য এই অধিকার ছাড়া আর কাউকে পেলেন না তারা???’

গত ২১ ডিসেম্বর এক সংবাদ বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপ-মুখপাত্র রবার্ট পালাদিনো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গণতান্ত্রিক ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে মার্কিন সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনসের একটি দলের বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসার কথা থাকলেও ভিসা জটিলতায় সেই সফর বাতিল করা হয়েছে।

‘৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্য পর্যবেক্ষণ মিশন পরিচালনার উদ্দেশ্যে নির্বাচনের আগে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আনফ্রেলের অধিকাংশ আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষককে স্বীকৃতিপত্র ও ভিসা ইস্যু করতে বাংলাদেশ সরকারের ব্যর্থতায় আমরা হতাশ,’ বলেন তিনি।

এর জবাবে রোববার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এনফ্রেলের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন প্রেরণ বাতিলের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণই প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ব্যাপার, যদিও ইতোমধ্যে তাদের প্রায় অর্ধেক আবেদনে অনুমোদন দেয়া হয়েছে এবং বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

তবে এজন্য মূলত অধিকারের প্রতিষ্ঠাতা আদিলুর রহমান খানের সেই পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়টিকেই দায়ী করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

বিতর্কিত সংস্থা ‘অধিকার’ এর নিবন্ধন নেই, নেই আয় ব্যয়ের হিসেবও। বছরের পর বছর বার্ষিক প্রতিবেদনও নেই তাদের। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অপতৎপরতার অভিযোগ।

এসব অভিযোগ মাথায় নিয়ে অধিকার এর আগে একাদশ জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে চাইলে সেই সুযোগ দেয়নি এনজিও ব্যুরো। ব্যুরোর প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন কমিশনও পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেয়নি অধিকারকে।

সম্প্রতি বিতর্কিত তৎপরতার কারণে অধিকারের সব কার্যক্রম বন্ধের সুপারিশ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন ‘অধিকার’র অনিয়ম নিয়ে তাদের সুপারিশ জানিয়েছিল। এনজিও বিষয়ক ব্যুরো নির্বাচন কমিশনে পাঠানো এক চিঠিতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অধিকারের নিবন্ধনের মেয়াদ আর নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে।

এনজিও ব্যুরোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অধিকারের রেজিষ্ট্রেশন নম্বর: ৯২৪। নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ। ব্যুরোর নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, অডিট রিপোর্ট দাখিল, বার্ষিক রিপোর্ট, প্রশাসনিক প্রত্যয়নপত্র, অডিট রিপোর্ট গৃহীত হওয়ার কপিই দাখিল করেনি সংস্থাটি।

একটি মানবাধিকার প্রকল্পে ২০১৩ সালের পহেলা জানুয়ারি ৩৭ কোটি ৩৪ হাজার ৮শ’ ৩০ টাকা অর্থ ছাড় করা হয়। কিন্তু নানা অনিয়ম থাকায় এর পর এই প্রকল্পে আর কোনো অর্থ ছাড় দেয়া হয়নি। ২০১৩ সালে এই প্রকল্পে আরো ছাড় করা হয় ৫৪ কোটি ৯৪ লাখ ৭শ’ ১৮ টাকা। এই হিসাবে গড়মিল থাকায় এই প্রকল্পে ২০১৩ সালের পর আর কোনো অর্থ ছাড় করা হয়নি। আর একটি প্রকল্পে ৮৩ কোটি ৪৯ হাজার ৭শ’ ৯০ টাকা ছাড় করা হয় ২০১২ সালে। তবে সেখানেও রয়েছে নানা অনিয়ম আর অভিযোগ। ব্যুরো বলছে, ২০১৫ সালের পর ‘অধিকার’রের নামে আর কোনো অর্থ ছাড় দেয়া হয়নি।

সংস্থাটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, এনজিওর সুবিধা কাজে লাগিয়ে আসন্ন নির্বাচন ইস্যুতে রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী কাজে সংযুক্ত হয়েছে।