শারদের সকালে আসে ভাদ্রের ফোটাফোটা বৃষ্টি। ভিজিয়ে দেয় তপ্ত বালুচর। তাতেই যেন প্রশান্তি খোঁজে সাগর দেখতে আসে মানুষেরা। এমনটাই ছিল বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের বৃহস্পতিবার সকালের দৃশ্য। বেলার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের সংখ্যা। পড়ন্ত বিকেলে হাজারো পর্যটকের কোলাহলে মুখরিত হয় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। বাতাসে ভেসে বেড়ানো সুরে অবিরাম ঢেউয়ের তালে সাগরের নোনা জলে ভেসে বেড়ায় যান্ত্রিক শহুরে মানুষগুলো।
ছুটির আনন্দকে কয়েকগুন বাড়াতে ঈদের দ্বিতীয় দিন কক্সবাজারে এসেছে প্রায় ৫০ হাজার পর্যটক। ধীরে ধীরে এর সংখ্যা বাড়ছে আরো। শুক্রবার ও শনিবার কমপক্ষে থাকবে দুই লাখ পর্যটক।
এ বিষয়ে কক্সবাজার হোটেল মোটেল ও রেস্তোরা মালিক সমিতির মুখপাত্র কলিম উল্লাহ বলেন, প্রিয়জনের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঈদের দ্বিতীয় দিন কক্সবাজারে প্রায় ৫০ হাজার পর্যটক এসেছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে এসেছে আরো ৩০ হাজার।
তিনি আরো বলেন, ২৪ ও ২৫ আগস্ট কক্সবাজারের সমস্ত হোটেল বুকিং হয়ে গেছে। কোথাও কক্ষ খালি নাই। ওই দুইদিন কমপক্ষে দুই লাখ পর্যটক অবস্থান করবে কক্সবাজারে।
পর্যটন সূত্র জানায়, শহরের কলাতলীর সৈকত ঘেষে এক বর্গ কিলোমিটারে তারকা মানের ৮টি সহ প্রায় ৫শ টি হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউস, কটেজ ও ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়া শহরের দিকে আরো ৩০ টি হোটেল রয়েছে। সব মিলিয়ে কক্সবাজারে প্রতিদিন প্রায় দুই লাখ পর্যটকের রাত্রী যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সমুদ্র সৈকতের গিয়ে দেখা যায়, সমুদ্র সৈকতের ডায়বেটিকস পয়েন্ট থেকে কলাতলী পর্যন্ত পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেকে গোসল করছে, অনেকে গান গাইছে, কেউ আবার প্রিয়জনকে সাথে খালি পায়ে হাটছে, আবার অনেকেই বসে বসে সমুদ্র দেখছে। তরুণদের অধিকাংশ ব্যস্ত ছবি তুলতে কিংবা জেট স্কি বা বিচ বাইক ও ঘোড়ার পিঠে সাওয়ারী হতে।
ঢাকা থেকে আগত মোবারক- তানজিমা দম্পতি বলেন, সমুদ্র, পাহাড় আর ঝর্ণা আমাদের খুব প্রিয়। আর প্রকৃতির এই অপরুপ সম্মিলন রয়েছে শুধুমাত্র কক্সবাজারে। তাই সুযোগ পেলে চলে আসি সমুদ্র শহরে।
প্রথমবারের মত রাজশাহী থেকে কক্সবাজার আসা ফারুক ইকবাল বলেন, জীবনে প্রথমবার কক্সবাজার এসেছি। তাও আবার সপরিবারে। সাগরের ঢেউ বালুর বুকে আছড়ে পড়ার দৃশ্য সত্যি মনোমুগ্ধকর। বিশাল সমুদ্রের কূলঘেষে বড় বড় পাহাড় দেখে মন চাচ্ছে এই শহরেই থেকে যেতে।
ঈদের দিন থেকে কক্সবাজার অবস্থান করা যশোরের সাগরদাড়ি গ্রামের সোবাইন বলেন, ঈদের কয়েকদিন আগে বিয়ে করেছি। বউকে নিয়ে প্রথমবারের মত কক্সবাজার বেড়াতে এসেছি। ঈদের দিন মেরিন ড্রাইভ সড়ক হয়ে ইনানী বিচে গেছি। পথে দেখেছি দরিয়ানগর, হিমছড়ির ঝর্ণা। আসার সময় সন্ধ্যায় ঢু মেরেছি মারমেইড বিচ রিসোর্টে। দ্বিতীয় দিন সকালে একবার বিচে এসেছি। এরপর বার্মিজ মার্কেট ও শুটকী পল্লীতে গিয়েছি। বিকেলে আবার সৈকতে এসেছি। সত্যি বলছি কক্সবাজার রুপের রাণী। যা দেখছি তাতেই মুগ্ধ হচ্ছি। তবে পর্যটন বিকাশে এখানে রাতে সময় কাটানোর কোন ব্যবস্থা নেই, যেটা দুঃখজনক।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, সমুদ্র শহর কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ছিনতাই, ইভটিজিং, হয়রানি ও অতিরিক্ত ভাড়া রোধসহ শহরের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে র্যাব, পুলিশের ৪৫০ জন সদস্য কাজ করছে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত দুটি পর্যটন জোনে সার্বক্ষণিক অবস্থান করছে।