রোমানিয়ার বুখারেস্টের একটি উঁচু ভবনের সামনে পরিপাটি ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন নারী। তারা হাসছে, আড্ডা দিচ্ছে, ধূমপান করছে। চিত্রটিতে অস্বাভাবিক বিষয় শুধু একটি – সকাল সকাল তাদের করা উগ্র মেকআপ, অতিরিক্ত সাজসজ্জা আর একটু বেশিই খোলামেলা পোশাক, যা পাশ দিয়ে যাওয়া পথচারীদের সঙ্গে ঠিক মানায় না।
উঁচু ভবনটির ভেতর দু’টো তলার ৪০টি সুসজ্জিত কক্ষ জুড়ে আছে ‘স্টুডিও ২০’ নামের একটি স্টুডিও। স্টুডিও কক্ষগুলোর বন্ধ দরজার পেছনে ওয়েবক্যামে সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে এই নারীরা অর্থের বিনিময়ে বিনোদন দেয় আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টদের।
এবং মজার বিষয় হলো, যতক্ষণ ওই নারীরা ওয়েবক্যাম নিয়ে ঘরে একা থাকছে, ততক্ষণ রোমানিয়ায় এই ব্যবসা একেবারেই বৈধ। এ ধরণের ‘ভার্চুয়াল সম্পর্ক’ বা ‘সাইবার সেক্স’-এ ক্যামেরার সামনে থাকা মানুষটি ‘মডেল’, আর তাকে যে দেখছে সে ‘মেম্বার’ বা ক্যামসেক্স ওয়েবসাইটের সদস্য।
বিশ্ব পর্নোগ্রাফির বাজারে ইন্টার্যাকটিভ ওয়েবক্যামিং খুবই দ্রুত বেড়ে ওঠা একটি সেক্টর। ওয়েবক্যামে যোগাযোগের মাধ্যমে ক্লায়েন্টকে নিষিদ্ধ আনন্দ দেয়ার এই ব্যবস্থায় নানা দেশের নাগরিক জড়িত।
শুধু রোমানিয়ারই হাজারো নারী ক্যাম-গার্ল হিসেবে কাজ করে। কেউ কাজ করে বাসা থেকে, কেউ আবার স্টুডিও থেকে। সপ্তাহের ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা ধরে চলা পর্ন ইন্ডাস্ট্রির এই বিশাল ভাণ্ডারে লগইন করা বেশিরভাগ ক্লায়েন্টই নর্থ আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপের।
অ্যাডাল্ট ওয়েবসাইটের জন্য কাজ করা এই নারীরা প্রফেশনাল সেটআপসহ ওয়েবক্যামের সামনে থাকা অবস্থায় শতশত আগ্রহী মানুষ সেখান থেকে তাদের দেখতে পায়। তবে কোনো মেম্বার শুধু নিজের জন্য প্রাইভেট ওয়েবক্যাম সেশন না চাওয়া পর্যন্ত সেই মডেল কোনো অর্থ পায় না।
বিবিসি জানায়, একেকজন ক্যাম-গার্ল এই ব্যবসায় অংশ নিয়ে মাসে ৪ হাজার ইউরো (প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা) বা তার বেশি আয় করে, যা রোমানিয়ার গড় মাসিক আয়ের প্রায় ১০ গুণ। একই পরিমাণ অর্থ তাদের চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান বা স্টুডিও-ও উপার্জন করে। অর্থাৎ সেশনগুলোর জন্য একজন ক্যাম-গার্ল যে পরিমাণ অর্থ পায়, তার ক্লায়েন্টের কাছ থেকে চার্জ করা হয় তার দ্বিগুণ।
স্টুডিও ২০’র জনসংযোগ কর্মকর্তা অ্যান্ড্রা চির্নোজিয়ানুসহ ইন্টার্যাকটিভ ওয়েবক্যামিং ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িত নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের মতে, প্রাপ্যর চেয়ে কম পারিশ্রমিকে দিনে ১২ ঘণ্টার বেশি কাজ করা ক্যামসেক্স সেক্টরে কাজ করার চেয়ে বেশি মানসিক পীড়াদায়ক।
তবুও বিশ্লেষকদের প্রশ্ন, নিজ শিক্ষাগত ও কারিগরী যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ভালো কাজ পেলেও কি এই ‘মডেল’রা ভীনদেশের মানুষদের সামনে এভাবেই অর্থের বিনিময়ে নিজেদের অনাবৃত করার পেশা বেছে নিতো?