ড. কামাল হোসেন, সজ্জন রাজনীতিক। জীবনভর অসাম্প্রদায়িকতার কথাই বলেছেন। ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট। বাংলাদেশের সংবিধান রচনায় তিনি ছিলেন অন্যতম। আওয়ামী লীগের রাজনীতিই করেছেন। পরে মতের অমিল, ব্যক্তিত্বের সংঘাতেই আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেন। তবে ড. কামালের গণফোরাম গণমানুষের দল হয়ে উঠতে পারেনি। তিনি মানুষ ভালো, আইনজীবী হিসেবেও জুড়ি নেই। তবে রাজনীতিক হিসেবে সফল নন, এটা প্রমাণিত। বিশেষ করে ভোটের রাজনীতির পুরনো স্মৃতি খুঁজলে তিনি হতাশই হবেন।
নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেন এবার বেশ নড়েচড়ে বসেছেন। বেশকিছু দাবিতে জাতীয় ঐক্য করছেন তিনি। জাতীয় ঐক্যের সমাবেশে তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বিকল্পধারার সভাপতি ড. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জাসদের আ স ম আব্দুর রব, জাসদ থেকে আওয়ামী লীগ হয়ে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ। সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ বেশ কয়েকজন নীতিনির্ধারকও যোগ দেন। সমাবেশ থেকে বেশকিছু দাবি দাওয়াও উঠে এসেছে। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের উদ্যোগ নিতে সরকারকে সময় বেধে দেওয়া হয়েছে জাতীয় ঐক্যের সমাবেশ থেকে। সবই ঠিক আছে। পাঁচ-ছয় হাজার মানুষের সমাবেশ করার আগে এই ঐক্য প্রক্রিয়া অটুট রাখতে ড. কামাল-বি. চৌধুরীরা বেশ কয়েক দফা নিজেদের মধ্যে বৈঠকও করেছেন। তাদের এই প্রক্রিয়ায় বিএনপি থাকবে কি থাকবে না এই প্রশ্নটিও আসে। আবার আন্দোলন ও রাজনীতির কৌশলে ব্যর্থ বিএনপিও এই ঐক্য প্রক্রিয়ার সাথে থাকতে শুরু থেকেই আগ্রহী ছিল। সেক্ষেত্রে জামায়াতের সাথে বিএনপির সম্পর্কের বিষয়টিও সামনে আসে। ড. কামাল বারবারই বলেছেন স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সাথে কোনো ঐক্য হবে না। এমনকি বিএনপির সাথে জামায়াত থাকলে ঐক্য হবে না বলেও জানান ড. কামাল-বি চৌধুরীরা। বিএনপি যে জামায়াতকে কখনোই ছাড়তে পারবে না, এটা স্পষ্ট। এর আগে আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও বিএনপি ছাড়তে পারেনি জামায়াতকে।
বিএনপি কিন্তু জামাতকে ছাড়ার ঘোষণা না দিয়েই ড. কামালদের সমাবেশে যোগ দিয়েছে। আর ড. কামালরাও তাদের সাদরে গ্রহণ করেছেন। তার মানে কি বিএনপির সাথে জামায়াত থাকলেও ঐক্যে কোনো সমস্যা হবে না? ড. কামালকে বাংলাদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ হিসেবেই চেনেন। যদিও তার জামাতা ডেভিড বার্গম্যানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে। যাই হোক জীবনভর অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির চেতনায় বিশ্বাসী ড. কামাল শেষ বয়সে এসে এভাবে ঘুরিয়ে জামায়াতের হাত ধরবেন, তা বিশ্বাস করতে অনেকেরই কষ্ট হবে। তাহলে কেন ড. কামাল এটা করছেন? ক্ষমতার স্বাদ নিতে?
যদিও ড. কামাল ওই সমাবেশেই তা অস্বীকার করেছেন। তবে মালয়েশিয়ার নির্বাচনী ফল দেখেই নাকি ড. কামালরা উজ্জীবিত হয়েছেন। একথা রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচিত। মাহাথির যেমন শেষ বয়সে চুক্তি করে সরকার প্রধান হয়েছেন। তেমনি নাকি ড. কামাল প্রধানমন্ত্রী হতে চান। ড. কামাল জাতীয় ঐক্যের সমাবেশেই বলেন, তাদের ঐক্য প্রক্রিয়ায় কেউ কেউ ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে। পাবেইতো, কেন পাবে না? আপনিতো জামায়াতের সঙ্গী বিএনপিকে আপনার সমাবেশে ডেকেই খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে বসলেন। এখানেইতো আপনাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে।
শোনা যাচ্ছে জাতীয় ঐক্য নিয়ে এখনই নাকি অনেক অনৈক্য। বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ঐক্য প্রক্রিয়ায় থাকা নিয়েও নাকি ধোঁয়াশা রয়েছে। তিনিও প্রধানমন্ত্রী হতে চান? বি. চৌধুরীকে নিয়ে আবার বিএনপিরও অ্যালার্জি আছে। ড. কামালেই নাকি আস্থা রাখতে চায় বিএনপি। জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ না করে ড. কামালের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় থাকা গেলে বিএনপিরই লাভ। ড. কামাল কি এটা বুঝতে পারছেন না যে, বিএনপি তাকেই বিতর্কিত করে দেবে। জামায়াতের গন্ধ মেখে শেষ বয়সে রাজনৈতিক জীবনটা কলঙ্কিত হতে যাচ্ছে- এ কথা কি ড. কামালের মনে একবারও আসেনি?
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)