চিত্রনায়িকা পরীমনিকে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার, রিমান্ড ও আদালতে প্রেরণের ইস্যুতে দেশ উত্তাল। বিনোদন অঙ্গনের মানুষদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের নজর পরীমনিকে ঘিরে। এই ইস্যুতে এবার মুখ খুলেছেন চিত্রনায়ক ওমর সানী। তিনি মনে করেন, পরীমনিকে ভুল শোধরানোর সুযোগ দিলে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে তিনি সব গুছিয়ে নিতে পারবে।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে রবিবার রাতে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাস দিয়ে ওমর সানী লিখেছেন, আইন বলে একজন ব্যক্তি দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ। যতক্ষণ পর্যন্ত অপরাধ প্রমাণ না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত ওই ব্যক্তি কেবল অপরাধের জন্য অভিযুক্ত, দোষী নয়। কিন্তু পরীমনিকে গ্রেফতারের পর থেকে আমরা কি দেখলাম?
পরীমনি গ্রেপ্তারের দুদিনের মাথায় সংবাদ সম্মেলন করে তার সদস্যপদ সাময়িক স্থগিত করে শিল্পী সমিতি। সমিতির কড়া সমালোচনা করে ওমর সানী বলেন, চলচ্চিত্র থেকেই তাকে (পরীমনি) বের করে দেয়া হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলন করে তাকে অপরাধী প্রমাণ হবার আগে আমরা শাস্তি দিয়ে দিলাম। বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে, বিনোদন জগত সম্পর্কে সাধারণ জনগণের মনকে বিষিয়ে দেওয়া হলো না? এর আগেও তো একজন নামী অভিনেতা, প্রযোজক জেল খেটেছেন। কই তার বেলায় তো এই নিয়ম ছিল না।
”যাই হোক এবার মূল কথায় আসি। পরীমনির বাড়ি থেকে যে পরিমাণ মদের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে, তা দেখে প্রশ্ন জাগে এই পরিমাণ বোতল তো পরীমণি বাড়ির পাশের মুদির দোকান থেকে কেনেনি বা নিজে বাড়িতে তৈরি করেনি। তাহলে এই মাদকদ্রব্যের সরবরাহ কোথা থেকে হলো, কার কাছ থেকে এগুলো কিনলো বা সংগ্রহ করলো। মূল রাঘব বোয়ালদের আগে ধরতে হবে। তারা সব সময়ই আড়ালে থেকে যায়।”
ওমর সানী আরও লিখেছেন, আমি জানি না পরীমনি মূল অপরাধী কি না। তবে চলচ্চিত্রের একজন শিল্পী হিসেবে বুঝি মুম্বাইয়ের চিত্রজগতে যা ঘটেছিল, এক প্রভাবশালী ধনী ব্যবসায়ী এক সুন্দরী নায়িকাকে তার লালসার শিকার করতে না পেরে তার বন্ধু একজনের সহায়তায় তাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে যেভাবে তার জীবন ও ক্যারিয়ার ধ্বংস করেছিল, পরীমনির ক্ষেত্রে সেই ষড়যন্ত্রের যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি গানের গীতিকার আবদুল গাফফার চৌধুরীও পরীমনির পাশে আছেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে ওমর সানী লিখেছেন, আবদুল গাফফার চৌধুরী বলেছেন একটা লেখায় রিহ্যাবে দিয়ে পরীমনিকে সুস্থ করার দায়িত্ব এই সমাজের। তাকে ভুল শোধরানোর সময় দিতে হবে। রাজধানীতে পরীমনিকে যারা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে লাভবান হয়েছেন। তারা যদি বেআইনিভাবে অর্থ উপার্জন করে থাকেন তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা উচিত।
ওমর সানী বলেন, বিশেষ করে পরীর কাছের মানুষদেরও দায় আছে। যারা তার কাছে থেকেও ভালো পরামর্শ দেবার কথা কিন্তু তা না দিয়ে মা, বেবী, মামা, বলে বলে নানা সময় ফায়দা নিয়েছেন। আমি নিজে ধোয়া তুলশী পাতা না। আমিও এক সময় সিগারেটসহ নানা আড্ডায় যেতাম। তবে তা শুধরিয়ে নিয়েছি। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন কিছু স্পর্শ করি না এখন।
”আমরা আইন প্রয়োগের বিভিন্ন ধাপ যতবেশি স্বচ্ছ আর আবেগমুক্ত রাখতে পারবো, ততবেশি করে নিশ্চিত করতে পারবো দেশে আইনের শাসন এবং আইনের প্রতি জনগণের আস্থা। একজন আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নাগরিক হিসেবে, একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে, একটি স্বাভাবিক, মর্যাদাপূর্ণ আর নিরাপদ জীবন আমাদের দাবি। এই দাবি পূরণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের দায়িত্বের অংশটুকু যথাযথভাবে পালন করতে হবে।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ওমর সানী বলেন, পরীমনি এখনও কোটি ভক্তের মনে গেঁথে আছে। অভিনয়শিল্পী হিসেবে পরীমনির ক্যারিয়ার সবে শুরু। তার ভুল শোধরানোর সুযোগ দিলে হয়ত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারবে। তাতে চলচ্চিত্রশিল্পও একজন অভিনয়শিল্পীকে হারাবে না।