সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে এসএসসি পরীক্ষার দু’দিন আগে যেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় তাকে ভুয়া প্রশ্নপত্র আখ্যায়িত করে আসল প্রশ্নপত্র পরীক্ষার প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট আগে ফাঁস হয় বলে জানিয়েছেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন।
সোমবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এই যুগ্ম কমিশনার। এর আগে শনিবার মধ্যরাতে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের ১৪ জনেক গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের (উত্তর) কয়েকটি টিম। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
আব্দুল বাতেন বলেন: কেন্দ্র হতে কক্ষে যাওয়ার সময় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। এতে স্কুল শিক্ষক, পিয়ন যে কেউই জড়িত থাকতে পারে। পরীক্ষার ২০ থেকে ৩০ মিনিট আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়, এগুলোই আসল প্রশ্ন। পরীক্ষার দু’য়েকদিন আগে কিংবা দুই-তিন ঘণ্টা আগে যেসব প্রশ্ন ফাঁস হয় তা ভুয়া প্রশ্ন।
ডিবি পুলিশ জানায়: গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা পরীক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা আদায় করে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে আসছিল। এ চক্রের মূল হোতা ফাহিম। শিক্ষা ভবনের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
প্রশ্নপত্র ফাঁস করার অভিযোগে যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা হলেন- রাহাত ইসলাম, সালাহউদ্দিন, সুজন, জাহিদ হোসেন, সুফল রায় ওরফে শাওন, আল-আমিন, সাইদুল ইসলাম, আবির ইসলাম নোমান, আমান উল্লাহ, বরকত উল্লাহ্, আহসান উল্লাহ্, শাহাদাৎ হোসেন ওরফে স্বপন, ফাহিম ইসলাম এবং তাহসিব রহমান।
আব্দুল বাতেন বলেন: গ্রেপ্তারদের মধ্যে আমান উল্লাহ, আহসান উল্লাহ্ এবং বরকত উল্লাহ ৩ ভাই। তারা প্রতিদিন ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে প্রশ্ন ফাঁস করেছে। আহসান সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। তাদের কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ এবং ২৩টি স্মার্টফোন এবং ২ লাখ ২ হাজার ৪শ’ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
আসামিরা যাদের কাছ থেকে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করছে সুনির্দিষ্টভাবে কারো নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে কী না? জানতে চাইলে তিনি বলেন: ওরা শত শত, হাজার হাজার চেইন। কখনো চট্টগ্রাম থেকে প্রশ্ন পাঠানো হয়, কখনো আরেক জেলা থেকে। তাদের শনাক্ত করা কঠিন।
আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর আবদুল বাতেন বলেন: আসামিরা পরীক্ষার আগের দিন ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁস করে শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করে। পরেরদিন পরীক্ষা শুরুর ৩০-৪০ মিনিট আগে কেন্দ্র থেকে বিভিন্নভাবে প্রশ্ন সংগ্রহ করে। সেগুলো ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার, ইমো এবং হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ থেকে শিক্ষার্থীদের কাছে এগুলো ছড়িয়ে দেয়া হয়। এর বিনিময়ে তারা বিকাশ ও রকেটের মাধ্যমে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা আদায় করে।
তিনি বলেন: প্রশ্ন যখন পরীক্ষার কেন্দ্রে যায় ওই সময়টাতে কেউ এর ছবি তুলে আসামিদের পাঠায়। এই সময়টা পরীক্ষার ৩০-৪০ মিনিট আগে। এই সময়ের আগে যেসব প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার কথা শোনা যায় সেগুলো ভুয়া প্রশ্ন।
প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনায় শিক্ষা বোর্ড কিংবা মন্ত্রণালয়ের কারও সংশ্লিষ্টতা পেয়েছেন ক না? জানতে চাইলে তিনি বলেন: এখনও পর্যন্ত তাদের কোন সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।
‘কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে শুধু শিক্ষার্থী নয়, পরীক্ষার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধ করলে সুফল পাওয়া যেতে পারে’, বলেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন।