বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি দিনকে দিন আরও অবনতি হচ্ছে। না, শুধু অবনতি বলাটা ঠিক হবে না- বলতে হবে চরম অবনতি হচ্ছে। এর কারণ করোনার নতুন রূপ ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের হিংস্র থাবা। এখন আর বলার কোনো অপেক্ষা রাখে না ‘সুপার স্প্রেডার’ ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট সারাদেশেই ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে।
এই যখন অবস্থা, তখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শঙ্কা জাগানো এক খবরে বলছে, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে
আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দেশের হাসপাতালগুলোতে আর কোনো শয্যা এবং আইসিইউ খালি থাকবে না। এতে পরিস্থিতি আরও করুণ হয়ে
উঠবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমন শঙ্কা প্রকাশের কয়েকঘণ্টার মধ্যেই দেশে একদিনে করোনাভাইরাসে সর্বোচ্চ মৃত্যু (২৩০) এবং আক্রান্ত শনাক্তের (১১ হাজার ৮৭৪ জন) রেকর্ড হয়েছে। আমরা জানি, গত ৯ জুলাই সর্বোচ্চ ২১২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ঠিক তার পরের দিনই
২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ১১ হাজার ৬৫১ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। ওই রেকর্ড ভেঙেছিল আগের রেকর্ডকে। আবার আগের রেকর্ডকে ভেঙে দেয়
তার আগের রেকর্ড। গত কিছু দিন ধরে এভাবেই চলছে পুরানো রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়ার খেলা।
অনেকের প্রশ্ন এই খেলা থামবে কবে? কে থামাতে পারবে এই মরণ খেলার গতি? কোটি মানুষের এমন প্রশ্নের জবাব আপাতত আবিষ্কৃত কয়েক ধরনের ভ্যাকসিন। তাও তার কোনোটাই এই ভাইরাসটির বিরুদ্ধে শতভাগ কার্যকর নয়। তারপরও সেটাই আকড়ে ধরে বাঁচতে চাইছে মানুষ। কিন্তু সেখানেও বৈষম্য তৈরি করেছে। কেননা ধনী দেশগুলো টাকার জোরে খুব সহজেই ভ্যাকসিন হাতের নাগালে এনে ফেলেছে। কিন্তু গরিব দেশগুলোতে তার জন্য চলছে হাহাকার!
এরই মধ্যে জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভ্যাকসিন বৈষম্য নিয়ে সতর্ক করে দিয়ে ধনী দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে বলেছে। কিন্তু তাতে খুব একটা আশা দেখা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে আমরা দেখেছি, জাতিসংঘের উদ্যোগে গঠিত ভ্যাকসিন জোট-গ্যাভি মুখ থুবড়ে পড়েছে। অর্থের অভাবে প্রত্যাশিত পরিমাণ ভ্যাকসিন সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছে জোট। তহবিলে সামান্য যে পরিমাণ অর্থ আছে- তা দিয়েও ভ্যাকসিন কিনতে পারছে না ভ্যাকসিন সংকটের কারণে।
তার মানে সব দিক থেকেই পরিস্থিতি করুণ থেকে করুণতর হচ্ছে। টাকা থাকলেও যেমন ভ্যাকসিন সংগ্রহ করা যাচ্ছে না, তেমনি সংক্রমণ বাড়ায় হাসপাতালেও আশ্রয় মিলছে না। আবার করোনা থেকে রক্ষায় আপাত যে কার্যকর পদক্ষেপ (বৈজ্ঞানিক লকডাউন); তাতেও দেশের বেশির ভাগ মানুষের অবস্থা করুণ।
আমাদের প্রশ্ন- আর কত করুণ হবে পরিস্থিতি? এমনিতেই তো নানাভাবে মানুষের অবস্থা কাহিল হয়েই আছে। এই অবস্থা থেকে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিতে পারে সরকার। বিশেষ করে নিম্নবিত্তের মানুষকে।