‘মামা ঈদের বকশিশ দশ টাকা।’
ঢাকা শহরের যারা পাবলিক বাসে নিয়মিত যাতায়াত করেন তাদের কাছে এ বাক্যটা সাম্প্রতিক সময়ে খুব পরিচিত। মেনে নেয়া যায় একদিন অথবা দুদিন। কিন্তু ঈদের দুদিন আগে থেকে শুরু হওয়া এ দাবিটা কেন ঈদ শেষ হবার দুদিন পরেও চলবে?
এটা আমাদের পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্যেরই একটি দৃষ্টান্তও হতে পারে। যে পরিবহন সেক্টরের কাছে সরকার বলা যায় প্রায় জিম্মি। কোনো ক্ষমতা নেই সরকারের তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার। গত বছর থেকে শুরু হওয়া ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য, এখনো কোনো সুরাহা করা যায়নি।
ইচ্ছেমত সিটিং সার্ভিস বাসগুলোকে লোকাল বাস করে ফেলছে। যাত্রীর কাছ থেকে ভাড়া উঠিয়ে যেখানে সেখানে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানোর প্রবণতা তো কমেইনি বরং বেড়েছে। জিম্মি করে ফেলেছে যাত্রীদেরও। বেশি কথা বললে স্টপেজে পেটোয়া বাহিনী দিয়ে লাঞ্ছিত করতেও পিছপা হয় না এসব বাসের চালক এবং হেলপাররা।
প্রতিবারের মতো এবারও ঈদের আগেই শুরু হয়েছে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দশ টাকা পাঁচ টাকা বেশি নেওয়া। ঈদের বকশিশ বলে চালানো এ দাবি কতদিন চলতে পারে? কেউ কেউ আছেন না বলে ভাড়া বেশি নিয়ে নিচ্ছে, কেন বেশি নিচ্ছে? বলার পরে কন্ডাক্টর বলে মামা ঈদের বকশিশ। তবে দু-একজন আছেন নির্ধারিত ভাড়া নেয়ার পরে দাবি করে-বকশিশ দেন মামা। এদের ভদ্রতার জন্য ইচ্ছে করে পাঁচ-দশ টাকা দিতে। কিন্তু যারা আগেই নিয়ে নেয়? তাদের?
বিড়ম্বনার শেষ নেই। এবারও সিটিং সার্ভিসগুলোর পুরোনো যন্ত্রণা থেকে রেহাই পায়নি যাত্রীরা। ধরেন আপনি মালিবাগ থেকে উঠেছেন গাজীপুরের বাসে। নামবেন খিলক্ষেত বা এয়ারপোর্ট। অন্য সময় যে ভাড়া দেয়া হয় সে ভাড়ায় আপনাকে ওঠাবে না। আপনাকে দিতে হবে গাজীপুরের ভাড়া। ‘উঠলে ওঠেন, নইলে নামেন’ এই নীতিতে চলেছে অনেক বাস। বাধ্য হয়ে অনেক যাত্রীকে গুনতে হয়েছে বাড়তি ভাড়া। দেখার কেউ নেই। অভিযোগ রয়েছে এভাবে বাড়তি ভাড়া আর বকশিশ তুলে প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি টাকা করে কামিয়ে নিয়েছে পরিবহন সেক্টরের শ্রমিক নেতারা। কে শোনে কার কথা?
ঈদ এলেই কেন এ রকম বিড়ম্বনায় ফেলে পরিবহন নেতারা কামিয়ে নেবে? দেশে কি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় নাই? এ রকম প্রশ্ন বাসের নিরীহ যাত্রীদের।
আসলেই কি আমাদের এই পরিবহন সেক্টরকে দেখভাল করার জন্য কেউ আছেন? সত্যিই যদি থেকে থাকে তা হলে মহানগরে চলমান সিটিং বাসের নৈরাজ্য ঠিক করতে পারছে না কেন? প্রায় বছরখানেক আগে একবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল সিটিং বাসে যাত্রী পরিপূর্ণ হয়ে গেলে গেইট লাগিয়ে দেয়া হবে। মাঝপথে আর যাত্রী উঠানো হবে না। বেশ কয়েকদিন পরিবহন নেতাদের তৎপরতা দেখা গেছে। তারপর আগের মতোই অবস্থা।
পরিবহন সেক্টরের কি মা-বাবা কেউ আছেন?
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)