করোনাভাইরাস ঠেকাতে সারাদেশে লকডাউন বা বিধিনিষেধের ধাক্কায় প্রায় ১ মাস ধরে গণপরিহণ বন্ধ রয়েছে। অস্বীকার করার উপায় নেই, এতে লাখ লাখ পরিবহন শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে গণপরিবহন চালুর দাবি জানিয়েছেন শ্রমিকরা।
এই দাবিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে রোববার রাজধানীসহ সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। তাদের বক্তব্য, করোনাভাইরাসের মধ্যে সব কিছু চালু থাকলেও শুধু গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। তাতে ৫০ ভাগ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে অন্যসব সেক্টরের মতো গণপরিবহন চালুর সুযোগ চেয়েছেন শ্রমিকরা।
আমরা জানি, এরই মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ইঙ্গিত দিয়েছেন, ‘জনস্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে এবং ঈদকে সামনে রেখে গণপরিবহন চালুর বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। যদিও এ জন্য মালিক-শ্রমিকদেরকে আন্দোলন, বিক্ষোভে না গিয়ে একটু ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এটা ঠিক গত মাসে করোনাভাইরাসের যে ভয়াবহ পরিস্থিতি ছিল, তা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। গত কয়েকদিন আক্রান্ত শনাক্ত এবং মৃত্যুর হার দুটোই কমছে। আর এটা হয়েছেও লকডাউন বা বিধিনিষেধের কারণেই। কিন্তু তা আবার স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে গেলে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে। ভারতে নিয়ন্ত্রণহীন করোনাভাইরাস থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি।
আবার এটাও আমাদেরকে মানতে হবে; জীবনের পাশাপাশি জীবিকাও বড় বিষয়। কেননা জীবকা না থাকলে জীবনও দুর্বিষহ হয়ে উঠে। তাই সতর্কতার সঙ্গে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যে পরিস্থিতিতে দোকান-পাট, শপিংমল ও বাণিজ্যিক ফ্লাইটসহ শিল্প-কারখানা খুলে দিতে হয়েছে; ঠিক তেমন পরিস্থিতির মুখোমুখি আজ পরিবহন শ্রমিকরা।
পরিবহন সেক্টরের সার্বিক অব্যবস্থাপনার কারণে আজ তাদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই। অথচ এই শ্রমিকরাই গাড়ি চালু থাকলে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা চাঁদা দেন জেলায় জেলায়। সেই টাকা শেষ পর্যন্ত কোথায় যায়? সেই খবরও তারা জানে না। শুধু জানে, তাদের বিপদে কোনো নেতাকে পাশে পান না তারা।
আমরা মনে করি, স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার শর্তে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে গণপরিবহন চালু করা যেতে পারে। এতে লাখ লাখ শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের দুর্বিষহ দিনগুলো কিছুটা হলেও স্বস্তির হবে।