আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি থেকে অবসর নেয়ায় সাকিব-তামিমদের আগেই আফ্রিকা সফর শেষ হয়ে গিয়েছিল মাশরাফীর। ফিরে বিপিএলের জন্য অনুশীলন শুরু করতে পেরেছিলেন কয়েকটা দিন আগেই। সেসময় একদিন একাডেমি মাঠে রংপুর রাইডার্সের প্রথম অনুশীলন দেখতে আসেন পিচ কিউরেটর জাহিদ রেজা বাবু। মাশরাফীকে ডেকে বলেন, ‘তোর বল এমনিতেই জায়গায় পড়ে। বোলিং নিয়ে ভাবার দরকার নেই। নেটে ব্যাটিংটা ভালমতো কর। কাজে দেবে।’
মাশরাফীকে একটু আড়ালে নিয়ে বাবু বুঝিয়েছেন আরও বড়তি কিছু। বিপিএলে ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংয়ে আরও পরিপূর্ণ মাশরাফীকে দেখতে পাওয়ার পেছনে বাবুর সেই কথাগুলো যে ভূমিকা রেখেছে সেটি আর না বললেও চলে।
বাবুর কথা মতো মাশরাফী ব্যাটিং অনুশীলনটাই করেছেন বেশি। পেয়েছেন সাফল্যও! ৯ ইনিংস খেলে ১৩১ রান। স্ট্রাইকরেট ১৫২.৩২, গড় ২১.৮৩। যা কিনা সৌম্য, লিটন, নাফীস, মুশফিকের মত পিওর ব্যাটসম্যানদের চেয়েও বেশি। আর ইমরুল, সাকিব, সাব্বির, নাসিরের কাছাকাছি! সর্বোচ্চ ৪২ রানের ইনিংসটা খেলেছেন তিন নম্বরে নেমে। সিলেটে রংপুর ম্যাচটা জিতেছিল মাশরাফীর ব্যাটেই।
ক্যারিয়ার শুরুর সময় থেকেই মাশরাফীর সঙ্গে সখ্যতা বাবুর। তাদের প্রথম দেখা ২০০১ সালে, ঢাকার আবাহনী মাঠে। খুলনা বিভাগের হয়ে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলতে নড়াইল থেকে এসেছিলেন মাশরাফী। আর বাবু তখন পেশাদার কিউরেটর। তার হাত ধরেই পেশাদার ক্রিকেটে আগমন মাশরাফীর। দুজনের মধ্যে সম্পর্ক গুরু-শিষ্যের মতো। ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বাবুই মাশরাফীর অভিভাবক। টি-টুয়েন্টি থেকে অবসর নেয়ার সিদ্ধান্তটি পরিবারের পরই জানতে পারেন বাবু।
বিপিএলে বোলিং নিয়ে মাশরাফী হয়ত নির্ভার থাকতে পেরেছিলেন বাবুর কথাতেই, ‘তোর বল এমনিতেই জায়গায় পড়ে।’ বাবুর কথাতেই হয়ত আত্মবিশ্বাস বেড়েছিল টাইগার পেসারের।
এবার বিপিএলে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন মাশরাফী। সবচেয়ে লক্ষণীয় ছিল তার লেন্থ। সর্বোচ্চ গতি ছিল মাত্র ১৩৩! জোরে বল করতে না পারলেও গুড লেংথে পিচ করিয়েছেন বেশিরভাগ ডেলিভারিই। ফাইনালের আগ পর্যন্ত ১৩ ম্যাচে নিয়েছেন ১৪ উইকেট। ইকোনমি ৬.৭৮। দেশি-বিদেশি পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে কিপটে বোলিংটা করেছেন। উইকেট সংগ্রহের দিক থেকে বিপিএলে অষ্টম। লিগ পর্বে ৬ জয়ের দুটি রংপুর জিতেছে মাশরাফীর বোলিংয়েই।
মাশরাফীর অধিনায়কত্বে ২০১৫ সাল থেকে ওয়ানডে ক্রিকেটে বদলে যাওয়া বাংলাদেশকে দেখেছে বিশ্ব। এবারের বিপিএল দেখছে বদলে যাওয়া মাশরাফীকেও! বিপিএলে দূরদর্শী অধিনায়কত্ব, ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংয়ে পরিপূর্ণ এক পারফর্মিং প্যাকেজ। অধিনায়ক মাশরাফী পাচ্ছেন আদর্শ টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটারের তকমাও।
সবাই বলে থাকেন, মাশরাফীর ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষের লগ্নে। তার বাবাও কথায় কথায় জানিয়েছেন শেষের সময় চলছে। কিন্তু ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক শেষের সময়টা লম্বা করার জন্য করে যাচ্ছেন আপন-যুদ্ধটা। ভাল করার প্রবল ইচ্ছাই মাশরাফীর জ্বালানি। বিপিএলের শুরুতেই জার্সি নম্বর পাল্টে ফেলেন। ২ মুছে পেছনে শূন্য যোগ করেছেন। মানে নতুন শুরু। মাশরাফীর নতুন শুরুর প্রথম পদক্ষেপে পাওয়া গেল চিরচেনা পরিপূর্ণ ও আদর্শ ক্রিকেটারটিকেই। এতে হয়ত মাশরাফী-অধ্যায়ের শেষটা আরও দূরেই সরে গেল!