নির্ধারিত সময়ে পদ্মাসেতুর কাজ শেষ হবে না- এমন শঙ্কা ছিল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানির। সেই শঙ্কাকে পাত্তা না দিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এতদিন বলে আসছিলেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই সেতুর কাজ শেষ হবে।
কিন্তু হঠাৎ করেই মঙ্গলবার ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে বললেন, ‘ডিসেম্বরে শেষ করা সম্ভব হবে না সেতুর কাজ।’
এদিন বিকালে রাজধানীর সেতুভবনে পদ্মাসেতুর কাজ নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক শেষে সংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, ‘‘পৃথিবীতে এখন যে দুটি রিভার (নদী) সবচেয়ে বেশি আনপ্রেডিক্টেবল তার মধ্যে একটা আমাদের পদ্মা, আরেকটা আমাজন। সম্প্রতিককালে বিশেষজ্ঞদের অভিমত আমাজনকে ছাড়িয়ে পদ্মা এখন সবচেয়ে আনপ্রেডিক্টেবল।
প্রবল স্রোতের কারণে সব প্রস্তুতি থাকলেও নির্ধারীত সময়ে সেতুর স্প্যান বসানো সম্ভব হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন: আমরা বারবার পিলারের উপর স্প্যান বসাতে গিয়ে সময় রাখতে পারিনি। কারণ, কন্ডিশন অ্যালাও করেনি। সে কারণেই আমাদের একটু বিলম্বিত হচ্ছে।
নির্ধারিত সময়ে পদ্মাসেতুর কাজ শেষ না করতে পারলেও পদ্মাসেতু যে আজ দৃশ্যমাণ, এটাকেই বড় প্রাপ্তি হিসেবে দেখছেন কাদের।
‘‘তারপরও আমি বলব পদ্মাসেতু আজ দৃশ্যমান। সেটি আমাদের আজ গর্বের বিষয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসীম সাহসের সোনালী ফসল পদ্মাসেতু। বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ার পরও আমরা সত্যিই হতাশায় ছিলাম। সেই হতাশা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল তথা দেশবাসীকে বের করে এনে পদ্মাসেতুর দৃশ্যমান করে শেখ হাসিনা আবারও তার ডায়ানামিক লিডারশিপ প্রমাণ করেছেন।’’
সেতু নির্মাণের সময়সীমা বেড়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন: ‘‘সেটা কন্ডিশনের উপর ডিপেন্ড করবে। তবে ২৪ ঘণ্টা কাজ হচ্ছে, কাজ চলমান। দিনক্ষণ এ মুহূর্তে আমি দিতে পারবো না। অক্টোবরের শেষ নাগাদ আমি আপনাদের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাবো। আপাতত এটুকু জানালাম। চলমান কাজের উদ্বোধন হবে এবং কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।”
সঙ্গে তিনি যোগ করেন: ‘‘ডিসেম্বরে হওয়ার তো আর কোনো সম্ভাবনা নেই। কাজেই নেগেটিভ নিউজটা না দিয়ে যা হয়েছে তাই বলবেন। পদ্মাসেতু আমার না। এবার ইলেকশনে যদি আমরা না আসি আর আসলেও আমার সরকার যদি আমাকে মন্ত্রী না করে; এটা আমার না হয়ে যাবে না। এটা থাকবে দেশের জন্য, দেশের জনগণের জন্য। যে পার্টি করেন, বা যে পার্টি করেন না- এটা সবার জন্যই। শেখ হাসিনা নেক্সট জেনারেশনের জন্য এ পদ্মাসেতু করেছেন, মেট্রোরেল করছেন।’’
আসছে ১৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মাসেতু বহুমুখী প্রকল্পের চলমান কাজের উদ্বোধন করবেন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন: ১৩ তারিখ দেশরত্ন শেখ হাসিনা পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের চলমান কাজের শুভ উদ্বোধন করবেন। এবং কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করবেন। এখানে মূল সেতুর কাজ ৭০ শতাংশ এবং সার্বিক অগ্রগতি ৫৯ শতাংশ। ১৩ তারিখের মধ্যে তা ৬০ শতাংশ হয়ে যাবে।
চলমান প্রকল্পের উদ্বোধনের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন: ‘‘আমাদের ফলক হবে চলমান কাজের শুভ উদ্বোধন। ঢাকা থেকে যে সিক্স লেন এক্সপ্রেসওয়ের চলমান কাজের উদ্বোধন হবে। এখানেও অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। আপনারা জানেন পদ্মাসেতুর সঙ্গে রেললাইন সংযুক্ত হবে। এই সংযোগের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করা হবে।’’
‘‘এছাড়াও সেনাবাহিনীর সহায়তায় সেতু ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের রিভার প্রটেকশন এবং সেতু বহুমুখী প্রকল্পের চলমান কাজেরও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।’’
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা ব্যয় ধরে পদ্মাসেতু প্রকল্প পাস হয়েছিল। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে সেতুতে রেলপথ সংযুক্ত করে সেতুর নির্মাণ ব্যয় সংশোধন করে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা নির্ধারণ করে।
দ্বিতীয় দফায় পদ্মাসেতুর ব্যয় আরও আট হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়। সব মিলিয়ে সেতুটির নির্মাণ ব্যয় দাঁড়িয় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।
এই সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন করার কথা থাকলেও কথিত দুর্নীতির অভিযোগ এনে তারা সরে দাঁড়ায়।পরে সরকার নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মাসেতু নির্মাণ শুরু করে। যদিও পরে বিশ্ব ব্যাংকের সেই অভিযোগ মিথ্য বলে প্রমাণিত হয়।
নির্মাণের শুরুতে ২০১৮ সালের মধ্যে সেতুটির সব কাজ শেষে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার কথা ছিল।