শ্রমজীবী পথশিশুদের জন্য চার বছর আগে যে উদ্যোগ নিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংগুলোর অনীহায় তাতে ভাটা পড়েছে। গত এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকে জমানো তাদের সঞ্চয় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের ব্যাংক হিসাবে জমা ছিল ৪৬ লাখ ৮৯ হাজার টাকারও বেশি। তবে ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মাসে তাদের ব্যাংক হিসাবে মোট স্থিতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। অর্থাৎ এক বছরে পথশিশুদের জমানো টাকা কমেছে ১৪ লাখ ২০ হাজার টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে বেসরকারি একটি ব্যাংকের একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, পথশিশুদের ব্যাপারে ব্যাংক কর্মকর্তাদের অনাগ্রহের কারণে কর্মজীবী শিশুদের ব্যাংক হিসাব বাড়ছে না। এই কারণে পথশিশুদের সঞ্চয়ে ভাটা পড়তে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পথশিশুদের ব্যাংক হিসাব সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৬৭১টি। এক বছর চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ওই হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭৯৪টি। অর্থাৎ এক বছরে নতুন ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে মাত্র ১২৩ টি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে লেনদেন করছে ৪ হাজার ৫৪৪ জন পথশিশু। ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময়ে এই সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৩৮১ জন পথশিশু। এই বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকে লেনদেন করছে ৪ হাজার ৬৮৪ জন পথশিশু। দেশের ১৫টি এনজিও এই পথশিশুদের ব্যাংক হিসাব দেখভাল করছে।
অধিকাংশ পথশিশুর কোনো অভিভাবক না থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে ২০১৪ সাল থেকে এনজিও প্রতিনিধিরা তাদের অভিভাবক হয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করছেন। ১৫টি এনজিও এ কাজে জড়িত।
সেগুলো হলো; মাসাস, সাফ, উদ্দীপন, অপরাজেয় বাংলাদেশ, ব্র্যাক, নারী মৈত্রী, সিপিডি, প্রদীপন, সাজিদা ফাউন্ডেশন, এএসডি, শক্তি বিদ্যালয়, ইবিসিআর প্রকল্প, মানবসেবা সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা, সোসাইটি ফর আনপ্রিভিলিজেড ফ্যামিলি ও পরিবর্তন।
২০১৪ সালের ৯ মার্চ ১০ টাকার বিনিময়ে পথশিশুদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ করে দিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান। ওই নির্দেশনার পর প্রাথমিকভাবে ১০টি ব্যাংক পথশিশুদের ব্যাংক হিসাব খোলার দায়িত্ব নেয়। পরে আরও ৯টি ব্যাংক এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়।
ব্যাংকগুলো হলো, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ডাচ বাংলা, প্রাইম ও উত্তরা ব্যাংক। কিন্তু বর্তমানে পথশিশুদের ব্যাপারে ব্যাংকগুলোর আগ্রহ কমে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রূপালী ব্যাংকে পথশিশুদের হিসাব খোলা হয়েছে ৯৭৩টি। এই ব্যাংকটিতে পথশিশুরা জমিয়েছে ১০ লাখ টাকা। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে তারা হিসাব খুলেছে এক হাজার ১১০টি। এই ব্যাংকে জমা করা হয়েছে ৮ লাখ ৪৯ হাজার টাকা।