নোয়াখালীর সুবর্ণচর প্রথমবারের মতো ব্যাপক আলোচনায় এসেছিল গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর। নির্বাচনে ভোটের পর রাতে সুবর্ণচরের মধ্যবাগ্যা গ্রামে স্বামী-সন্তানকে বেঁধে রেখে চল্লিশোর্ধ এক নারীকে গণধর্ষণ করা হয়।
এই অভিযোগে মামলার পর অভিযুক্ত রুহুল আমিনকে গ্রেপ্তার করা হলেও তথ্য গোপন করে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেয়ার মতো ধৃষ্টতাও হয়েছে। তবে পরবর্তীতে আদালত এ তথ্য জানার পর ওই আসামির জামিন বাতিল করেছিলেন।
এই ঘটনাতেই থেমে থাকেনি, বরং প্রতিনিয়ত এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেই চলেছে সুবর্ণচরে। পরবর্তীতে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনের পরও ছয় সন্তানের জননীকে গণধর্ষণ করা হয়েছিল। এছাড়া গত ফেব্রুয়ারিতে বাড়ি থেকে হাতিয়া যাওয়ার পথে মাকে এগিয়ে দিতে এসে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী।
এরই ধারাবাহিকতায় সেখানে গৃহবধূ পলি আক্তারকে ধর্ষণ করা হলে তিনি বিষপানে আত্মহত্যা করেন। সেই ঘটনায় করা মামলাটি প্রথমে ধর্ষণের মামলা না হয়ে আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছিল। পরে এ বিষয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।
এমন প্রেক্ষাপটে গত ২৩ মে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে উত্তর বাগ্যা গ্রামে গোপনে গোসলের ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে তার স্ত্রীকে একাধিকবার ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনায় অভিযুক্ত জয়নাল নামে একজনকে আসামী করে আদালতে মামলা করেছেন ওই নারীর স্বামী নাছির।
চ্যানেল আইয়ের প্রতিবেদনে জানা যায়, নোয়াখালীর মাইজদীতে গতকাল রোববার ওই নির্যাতনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন হয়েছিল। রোববার দুপুরে নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সামনে নির্যাতনের বিরুদ্ধে অন্যান্যদের সঙ্গে নাছিরও মানববন্ধনে অংশ নেয়। সেখান থেকে বিকেলে বাড়ি গেলে ধর্ষণের মামলার আসামী ও তার লোকজন নাছিরসহ পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে রাতে নাছির প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে উঠলে তাকে সন্ত্রাসীরা এসিড মেরে ৬-৭ জন দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে নাছিরকে উদ্ধার করে রাতেই নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।’
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের ডা. মো. খলিল উল্যাহ্ জানান, নাছিরের শরীরের প্রায় ৯ শতাংশ পুড়ে গেছে। তবে শঙ্কামুক্ত রয়েছে নাছির।
সুবর্ণচরে সিরিজ গণধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন কেন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে? দোষীরা কেউ কেউ আটক হলেও একাধিক ঘটনায় বিশেষ করে পুলিশের গড়িমসি লক্ষ্য করা গেছে। ধর্ষকদের বাঁচাতে মামলা নেয়া বা মামলা নিলেও ধর্ষণের মামলা হিসেবে নথিভুক্ত না করার ঘটনা ঘটেছে। ধর্ষণের ঘটনার মতোই এগুলো অমার্জনীয় অপরাধ। এসব কারণেই ধর্ষকরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে বলে আমরা মনে করি।
একইসঙ্গে সুবর্ণচরের এসব ঘটনায় নোয়াখালী জেলা প্রশাসন নির্বিকার ভূমিকাও লক্ষণীয়। ধর্ষকদের শাস্তির আওতায় আনা এবং নির্যাতনের শিকারদের সহায়তায় তাদেরও তেমন কোনো কঠোর ভূমিকা দেখা যায়নি। তাদের এমন ভূমিকা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এসিড নিক্ষেপের শিকার নাছির উদ্দীনের চিকিৎসাসহ সার্বিক সহায়তা, গণধর্ষণের শিকার সব নারী ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তা এবং বিচার পাওয়ার নিশ্চয়তা জেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় প্রশাসনকে করতে হবে। এছাড়া এসব বিষয়সহ ধর্ষণের প্রবণতা বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে কেউ ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।