নোয়াখালীর সুবর্ণচরের গৃহবধূ পলি আক্তার ধর্ষণের পর বিষপানে আত্মহত্যার ঘটনায় করা মামলাটি ধর্ষণের মামলা না হয়ে আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা কেন হল, সে প্রশ্ন রেখেছেন হাইকোর্ট।
এ সংক্রান্ত এক রিটের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন প্রশ্ন রেখে রুল জারি করেন।
আদালত ধর্ষণ ও আত্মহত্যার ওই ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না এবং ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ মীমাংসার নামে তথাকথিত সালিসি বৈঠক কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সরকার (এলজিআরডি) সচিব, নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক, সুবর্ণচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুনতাসির মাহমুদ রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
আজ এই রিটের শুনানিতে আদালত বলেন, নৈতিক অবক্ষয়ের কারণেই দেশে ধর্ষণ-নির্যাতনের মতো ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই প্রায় ১৫-১৬ টা ঘটনা চোখে পড়ে। তাই এ ধরনের ঘটনা রোধে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এই সচেতনতা সৃষ্টিতে শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সকলকে ভূমিকা রাখতে হবে।
শুনানির একপর্যায়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার ফেনীর সোনাগাজীতে নুসরাতের ঘটনার বিষয়টি তুললে আদালত বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডিতে অনেক দায়িত্বশীল ব্যক্তি থাকেন। গভর্নিং বডির দায়িত্বশীল সদস্যরা যদি আগেই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন তাহলে নুসরাতের এই করুণ ঘটনা ঘটত না।
শুনানিতে রিটকারী আইনজীবী মুনতাসির মাহমুদ রহমান বলেন, পলি আক্তার ধর্ষণের ঘটনাটি ৬০ হাজার টাকায় মীমাংসা করে দেন স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরু। পরে ধর্ষক আলাউদ্দিনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তখন আদালত জানতে চান, ফৌজদারি মামলা হয়েছে কি? যিনি ইউপি সদস্য তাকে আসামি করা হয়েছে? এ ঘটনায় ধর্ষণের মামলা না হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা কেন হল?
এসময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা গ্রাম আদালতে বিচারের সুযোগ নেই। ইউপি সদস্য বেআইনিভাবে এ কাজ করেছেন। আত্মহত্যার শিকার ওই নারীর বাবা থানায় মামলা করেছেন। তখন আদালত বলে, মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনায় বাবা ধর্ষণের মামলা না করে আত্মহত্যায় প্ররোচণার মামলা কেন করল? তাকে কি ফোর্স করে এটা করানো হয়েছে?
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বাশার তখন বলেন, মেয়েকে হারিয়ে বাবা শোকার্ত। কন্যাহারা পিতা। এ শোকার্ত অবস্থায় তিনি মামলাটা করেছেন। তাছাড়া উনি তো ভাল বোঝেন না আইন সম্পর্কে। এক্ষত্রে মামলা ভুল ধারাতে হয়ে থাকলে বা আদালত যদি মনে করেন যে ধারায় পরিবর্তন আসা দরকার, তাহলে তা হতে পারে। আর তদন্ত শেষে যখন চার্জশিট হবে তখন সেখানে ধারা পরিবর্তন করে নতুন ধারায় চার্জশিট হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আবার আদালতে ধারা সংশোধনের আবেদন দিয়ে নতুন ধারা সংশোধন বা সংযোজন করার সুযোগ রয়েছে।
এরপরই আদালত রুল জারি করে আদেশ দেন।
পলি আক্তার ধর্ষণের পর বিষপানে আত্মহত্যার ঘটনাটি গত ৪ মার্চ হাইকোর্টের নজরে এনে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুনতাসির মাহমুদ রহমান।
এর আগে গত ২ মার্চ সকালে মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চর মাকসুমুল গ্রামে পলি আক্তার (২২) বিষপান করে আত্মহত্যা করেন বলে তার শ্বশুর নূর করিম জানান। পলি একই গ্রামের ইউসুফ সোহাগের স্ত্রী।
পরে পলির শ্বশুর নূর করিম সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার রাতে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে একই এলাকার আলাউদ্দিন ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করে।“পলির চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন আলাউদ্দিনকে আটকের পর রাতেই সালিশ বৈঠকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অপমান সইতে না পেরে শনিবার সকালে পলি বিষপান করে।”
ওইদিন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম সাংবাদিকদের বলেন, দুপুরে মৃত অবস্থায় ওই নারীকে হাসপাতালে আনা হয়।