মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের বিজয়ের ৪৫ বছর পূর্ণ হয়ে ৪৬ বছরে পা রাখতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে উন্নয়ন ও গণমাধ্যমকর্মী মোহাম্মদ গোলাম নবী আগামী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্জন-ব্যর্থতা ও করণীয় বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখছেন চ্যানেল আই অনলাইন পাঠকদের জন্য। পর্ব-৮
নদীমাতৃক বাংলাদেশে ঝড়-বন্যা খুবই পরিচিত ঘটনা। তারপরও কিছু কিছু ঝড় ও বন্যার ঘটনা ঘটে যা নতুন করে অনেক কিছু শেখায়। সেই শিক্ষা আবার পুরনো হয়ে যায় নতুন কোন ধরনের ঝড় বন্যার কারণে। যেমন, ১৯৮৮ সালের বন্যায় রাজধানী ঢাকার মানুষেরা প্রথমবারের মতো বুঝতে পারল বন্যা দেশের মধ্যাঞ্চলকেও আক্রান্ত করতে পারে। এবং সেটি অনেকদিন ধরে অব্যাহত থাকতে পারে।
তেমনি ঘূর্ণিঝড় সিডর এদেশের মানুষকে শিখেয়েছি পুরনো টেকনোলজি ভেবে যোগাযোগের কয়েকটি মাধ্যম যেমন: মাইক, মেগাফোন, রেডিও কে অবহেলা করা যাবে না। বরং এই ধরনের যোগাযোগ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করার পাশাপাশি যোগাযোগের আধুনিক টেকনলজি যেমন: মোবাইল ফোন, টেলিভিশন ইত্যাদিও যেন দুর্যোগে সচল থাকে সেই উপায়গুলো নিশ্চিত করার বুদ্ধি বের করতে হবে। ঘূর্ণিঝড় সিডর আধুনিক সমাজে ইলেকট্রিসিটির গুরুত্ব নতুন করে শিখিয়েছে। ইলেকট্রিসিটি না থাকলে পুরো যোগাযোগ ব্যবস্থা কিভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে সেই বিষয়টি ২০০৭ সালে এদেশের মানুষ স্বচক্ষে দেখতে পেয়েছে।
আমাদের দেশের ভৌগোলিক অবস্থান প্রাকৃতিক দুর্যোগে বারবার আক্রান্ত হওয়ার মতো। যেহেতু দুর্যোগের শিকার আমাদের আরো হতে হবে তাই দুর্যোগ প্রশমন ও মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নেয়াই হবে আমাদের জন্যে বুদ্ধিমানে কাজ। জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্যে টেকনলজির সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্যে আমাদেরকে সারাবছর ধরে প্রস্তুতি নিতে হবে।
অন্ততপক্ষে ২০ বছরের জন্যে একটি মাস্টার প্ল্যান করতে হবে। মানুষের জীবন বাঁচানোর কাজ যেকোন দুর্যোগের শুরুতেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। এছাড়াও দুর্যোগের আঘাতে মানুষ মারা যাওয়ার আগেই মাস্টার প্ল্যান মোতাবেক তাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্যে উপযুক্ত যোগাযোগ টেকনলজির উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
সিডরের সময় আমরা দেখেছি যে, ইলেকট্রিসিটি না থাকায় আমাদের মোবাইল ফোনগুলো অচল হয়ে পড়েছিল। ইলেকট্রিসিটি না আসা পর্যন্ত ফোনগুলো আর চালু করা যায়নি। যদিও আইপিএস আর জেনারেটর এবং সৌর বিদ্যুৎ আছে এমন গুটিকয়েক পরিবার ও মানুষ মোবাইলগুলো বিদ্যুৎ আসার আগেই চালু করতে পেরেছিলেন।
সিডর থেকে শিখে এখন দুর্যোগের প্রস্তুতি লিস্টে মোবাইল ফোনের ব্যাটারি ফুল চার্জ করে রাখার কথাও ঘোষণা করা হয়। সবাইকে জানানো হয় যে, দুর্যোগে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ হওয়া মাত্র মোবাইল ফোনের সুইচ বন্ধ করে দিতে হবে যাতে করে ব্যাটারির লাইফ সেভ হয়। তাছাড়া পাবলিক প্লেস যেমন, ইউনিয়ন পরিষদ, বড় হাটবাজার কিংবা ক্লাব-সমিতি ও এনজিও অফিসগুলোতে, রেডক্রিসেন্ট অফিসে বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা রাখার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়ে এসএমএস ব্যবস্থাটি বেশ ভালো কাজ করে। আমার মনে আছে ঝড়ের রাতে ১১টার পরে কলাপাড়ার কোন মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কে ঢুকতে পারছিলাম না। বড় দুশ্চিন্তা হচ্ছিল সেখানে থাকা মা ও ভাইদের জন্যে। শুক্রবারে দুপুর আড়াইটায় একটি একটেল নম্বর থেকে এসএমএস পেলাম। আমার ছোটো ভাই পাঠিয়েছে যে, ওরা সবাই ভালো আছে। পরে জেনেছি মেসেজটি রাতে ঝড়ের শেষেই ও লিখে পাঠিয়ে রেখেছিলো।
কোনো এক ফাঁকে নেটওয়ার্ক পাওয়া মাত্র সেটি আমার ফোনে ডেলিভারি হয়েছে। অনেকসময় দেখা যায় মোবাইল নেটওয়ার্ক আসা যাওয়ার মধ্যে থাকে। এই অবস্থায় সবচেয়ে ভালো বুদ্ধি হলো এসএমএস পাঠিয়ে দেয়া। এরপর যতোবার ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতির ঘোষণা হয়েছে এই তথ্যটিও দেওয়া হয়েছে।
সিডর থেকে আরেকটি বড় শিক্ষা নিয়েছে জনগণ সেটা হলো রেডিও-কে অবহেলা না করা।
সবার মনে থাকার কথা টেলিভিশনের উপর নির্ভরশীল মানুষগুলো যখন তথ্যের অন্ধকারে ডুবে গেল, তখন তারা ঘরের মধ্যে ফেলে রাখা পুরনো রেডিওটার ধুলো ময়লা ঝেড়ে চালু করেছেন। কেউ কেউ দোকান থেকে এক ব্যাটারি চালিত এফএম রেডিও কিনে এনেছেন রেডিও শোনার জন্যে। দুর্যোগে খবর শোনাটা খুব জরুরি। এবং রেডিও শোনার জন্যে মোবাইলের রেডিও-র উপর নির্ভরতা যে সঠিক নয় সেটাও বাংলাদেশের মানুষ শিখেছে।
ওই সময়ে ড্রাইসেল ব্যাটারি দরকারি হয়ে গেলো। আইপিএস আর জেনারেটরের যুগে মোমবাতির দিন ফুরিয়েছে বলে যারা মনে করতেন তারা মোমবাতি কিনতে দোকানে ছুটে যাওয়ার কারণে নিয়মিত মোমের ক্রেতারা আর মোম কিনতে পারেননি। ঢাকার অনেক এলাকায় রাতে ফেরি করে মোম বিক্রি হয়েছে।
এই ঘটনাগুলো আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় কোনো কিছুই ফুরিয়ে যায় না। কিংবা আমাদের মনে করিয়ে দেয় দেশের বড় অংশ যারা গ্রামে থাকে, যাদের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছেনি, যারা কেরোসিন দিয়ে কুপি জ্বালিয়ে রাত কাটায় হয় তাদেরকে শহরের সুবিধাপ্রাপ্ত মানুষের সমসুবিধা পৌঁছে দিতে হবে নতুবা তাদের উপযোগী করেই তাদের জন্যে তথ্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের সৌভাগ্য যে দেশে এখন এফএম রেডিও স্টেশনের সংখ্যা বেড়েছে সেসঙ্গে অনেকগুলো কমিউনিটি রেডিও চালু হয়েছে।
বড় বড় দুর্যোগে আমরা লক্ষ্য করেছি সঠিক তথ্য সঠিক সময়ে দেয়ার মাধ্যমে দুর্যোগের ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। এক্ষেত্রে অফিসিয়াল সতর্কীকরণ ব্যবস্থার চেয়ে অনেকসময় ইনফরমাল বা অনানুষ্ঠানিক নেটওয়ার্ক অনেক বেশি কার্যকর। যেমন, বহুল আলোচিত সুনামীতে সিঙ্গাপুর নিবাসী বিজয়কুমার গুনাসেকারনের একটি ফোন কল তার গ্রামের বাড়ি ইনডিয়ার উপকূলীয় শহরতলী নালভাদুর ৩৬৩০ বাসিন্দার সবার জীবন বাঁচিয়েছিল। বিজয়কুমার তার ছোটবোনকে ফোন করে জানতে চায় সাগরের অবস্থার কথা।
ছোটো বোন জানায় সাগরের পানি তাদের বাড়ির কাছে পৌঁছে গিয়েছে। ইতোমধ্যে টিভি ও রেডিও-র খবর শোনার অভিজ্ঞতা থেকে বিজয়কুমারের বোঝার বাকি থাকে না কি ঘটতে চলেছে। সে বোনকে বলল, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সবাইকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে সেসঙ্গে বোনকে বলল গ্রামের বাকিদেরকেও যেন খবরটি জানানো হয় সেই ব্যবস্থা নিতে। গ্রামের সবাইকে খবরটা দ্রুত জানানোর জন্য কয়েকজন বাসিন্দা তাড়াতাড়ি চলে গেল ওই গ্রামের কমিউনিটি সেন্টারে।
ওই কমিউনিটি সেন্টারে ছিলো মাইক লাগানো। অল্পক্ষনের মধ্যেই সবাই জানলো সুনামীর খবর। সবাই বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে গেল। সুনামীতে নালভাদু গ্রামের বাসিন্দা ৩৬৩০ জনের কেউ মারা গেল না। যদিও গ্রামের ১৫০টি বাড়ি এবং ২০০ মাছ ধরার ট্রলার পুরো ধ্বংস হয়ে গেল।
বিজয়কুমারের ঘটনাতে আমরা দেখি রেডিও, টিভি, ফোন এবং পুরনো দিনের টেকনলজি মাইকের সমন্বিত ব্যবহার। স্থানীয় পর্যায়ের সঙ্গে কেন্দ্রের ও আরো দূরবর্তী স্থানের যোগসূত্র। আমাদেরকে বাংলাদেশে এমনই একটি তথ্যের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু আমরা সেটি ঠিকঠাক মতো করতে পেরেছি কী? মনে হয় পারিনি।
যদি সিডর ঘূর্ণিঝড়ের সময়কার কথা বলি দেখা যায় সেসময়ে আমরা সরকারের দিক থেকে যথেষ্ট আগেভাগে সতর্ক করা হয়নি বলে সরকারের দোষ খোজার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু আমরা যারা উপকূলীয় এলাকার বসবাস করি একবারও কি নিজেদের দিকে তাকিয়ে দেখেছিলাম? ভেবেছিলাম কী, আমরা যা করতে পারতাম সেটি করেছি কিনা?
কিংবা আমরা যারা উপকূলীয় এলাকার সন্তান এখন কর্মসূত্রে অন্য কোথাও থাকি তারা কি নিজেদের আত্মীয়স্বজনদের তথ্য দিয়ে যথাসময়ে সতর্ক করেছিলাম? আমাদেরকে এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজে দেখতে হবে। নতুবা আমরা যেকোন দুর্যোগে প্রাণহানির ঘটনায় সরকারের উপর দোষ চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাবো। এতে করে সবার গা বাচানো যাবে। কিন্তু লাভের লাভ যে কিছুই হবে না সেকথা নতুন করে বলার কিছু নেই।
পত্রিকার পাতায় দেখছি ভ্রাম্যমান রিপোর্টাররা রিপোর্ট করছেন সাধারণ মানুষ অভিযোগ করেছে দুর্যোগের আগে উপকূলীয় এলাকায় যথেষ্ট মাইকিং হয়নি। তারা জানতেই পারেনি এতোবড় বিপদ তাদের সামনে হাজির হচ্ছে। মুসলমান হিসেবে বড় লজ্জা লাগে যখন দেখি আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবদের মধ্যে বেশিরভাগ ইমাম সাহেব পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ানোর মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেন। যেকোন দুর্যোগে তাদের যে ভূমিকা পালনের সুযোগ থাকে তারা সেটি পালন করেন কিনা, সেই প্রশ্ন এখন তোলা দরকার।
আমাদের গ্রাম গঞ্জের সবজায়গায় মসজিদে মাইক আছে। মসজিদের মাইক শুধুই আজান দেয়ার জন্যে নয়। ওই মাইকের শব্দ যতদূর পৌছায় ততদূরের মানুষের কানে আজানের ধ্বনি যেমন পৌছাতে হবে দিনে রাতে পাচবার। তেমনি মানুষের প্রয়োজনে ওই মাইকটিকে আমাদের সবচেয়ে বেশি কাজে লাগাতে হবে। সেসঙ্গে আমাদের স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরা কি ধরনের দায়িত্ব পালন করেছেন সেটি নিয়েও আলোচনা হওয়া দরকার।
আমাদের মতো দেশে তথ্য দেয়ার কাজে টেকনলজির উপযুক্ত ব্যবহার ঘটাতে হবে। টেকনলজির অনেক অগ্রগতির পরেও এখনো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে হ্যান্ডমাইক বা মেগাফোন দুর্যোগ সম্পর্কে জনসাধারণকে সতর্ক করার কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন, জ্যামাইকাতে রেডক্রসের ভলান্টিয়াররা হারিকেন আঘাত হানার ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকে মেগাফোনের মাধ্যমে মাইকিং শুরু করে থাকে। আমাদের রেডক্রিসেন্টের ভলান্টিয়ারা সিডরের আগে সেভাবে সর্তকতা জানাননি। এমনকি পরবর্তীতে আইলার সময়ও তারা পর্যাপ্ত সতর্ক করতে পারেননি।
এদিকে আমাদের মিডিয়াগুলো দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে বড় বেশি নজর দেয় স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের ত্রাণ লুন্ঠন বিষয়ে। কিংবা ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে তালিকা প্রণয়নে রাজনৈতিক নেতারা কতটা স্বজনপ্রীতি করেছে সেই সংবাদ নিয়ে তারা ব্যস্ত হয়ে পড়ে। স্বাধীনতার পর চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষেও আমরা সেটাই দেখেছিলাম। ২০০৭ সালের সিডরের পরেও আমরা সেটাই দেখেছি। এটা ৯১ এর ঘূর্ণিঝড়ের পরেও ঘটেছিল।
এমনকি ৭০ এর সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড়েও মিডিয়ার ভূমিকা তেমনটাই ছিল। কারণ বোধহয় এই যে, এই জনপদের মানুষ নেগেটিভ কথাবার্তা পড়তে, বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতাদের দোষ জানতে যতোটা আগ্রহী অন্য কিছুতে হয় না। আরো বড় সত্য হলো মিডিয়ার দিক থেকেও এই অবস্থার পরিবর্তনে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে খুব একটা দেখা যায় না। আচ্ছা ধরুন, ঘূর্ণিঝড়ের পর যারা ত্রাণ সাহায্য পেয়েছে তাদের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের আত্মীয় স্বজনও আছে।
এটা কি সবসময় দোষেরই হবে? যখন একটা জনপদ লন্ডভন্ড হয় তখন ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের গরিব আত্মীয় স্বজনরাও থাকতে পারে, তাই না? নাকি পারে না? ত্রাণ পাওয়ার অধিকার তাদেরও থাকতে পারে। একজন দুস্থ মানুষের আত্মীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হওয়াটা অন্যায় নয়। দুস্থ মানুষের আত্মীয় ইউনিয়ন পরিষদের বা পৌরসভার নেতৃস্থানীয় হওয়ার ওই ব্যক্তি বা পরিবার ত্রাণ নিতে পারবে না সেটিও হওয়া ঠিক নয়।
অতএব বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হওয়া মিডিয়ার কাজ উচিৎ। সেসঙ্গে মিডিয়া মানুষের অধিকারগুলো তুলে ধরতে পারে। যেমন: সরকারের একটি ত্রাণ বিতরণ নীতিমালা আছে। মিডিয়াগুলো উপযুক্ত সময়ে এই তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে পারে। এই নীতিমালায় কি পরিস্থিতিতে কত ত্রাণ একটি পরিবার পেতে পারবে সেকথা বলে দেয়া আছে। সেসঙ্গে মিডিয়া যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সরকারের কাছ থেকে জেনে নিতে পারে ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে নতুন কোনো নীতিমালা আছে কিনা।
সেই নীতির কথাও জনগণকে মিডিয়া জানিয়ে দিতে পারে। জনগণকে শক্তিশালী করতে হবে তার প্রাপ্য অধিকারের তথ্য জানিয়ে। কাউকে ছোট করে বা তিরস্কার করে সমস্যার সমাধান হবে না। তথ্যের অভাব থেকেই আমরা দুর্যোগকালীন সময়ে যেমন ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। তেমনি তথ্যের অভাব থেকেই আমরা উপযুক্ত ত্রাণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ কমপিউটার ব্যবহারের সুযোগ পায় না, তারা ইন্টারনেট কিংবা আধুনিক যোগাযোগ উপকরণ ব্যবহারের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত। পৃথিবীর প্রযুক্তি বোদ্ধারা বলছেন, আমরা এখন তথ্য ও যোগাযোগ বিপ্লবের মাঝপথে রয়েছি। ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং সতর্কীকরণের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা নিয়ে মানুষের কাছে উপস্থিত হয়েছে ঠিকই কিন্তু আমাদের দেশের জন্যে এখনো এটি পুরোপুরি কার্যকর যে নয় সেটি আমাদের মনে রাখতে হবে। আর নতুন পুরনো টেকনলজির মধ্যে একটি যোগসূত্র গড়ে তুলতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে টেকনলজির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
এলক্ষ্যে স্থানীয় পর্যায়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মানুষকে আগ্রহী করে তুলতে হবে। গুয়েতেমালার কয়োলেট নদীর তীরবর্তী একটি গ্রামের বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমে ও পরিকল্পিতভাবে ১৯৯৭ সাল থেকে বৃষ্টি মাপার কাজ করছে। তারা বৃষ্টি মেপে সেই খবরটি জানিয়ে দিচ্ছে স্থানীয় আবহাওয়া দপ্তরে। যাতে করে বন্যার আগাম খবর তারা পেতে পারে। এই পদ্ধতিতে কাজ করার ফলে ১৯৯৮ সালে হারিকেন মিচ আঘাত হানলেও ওই গ্রামের মানুষগুলো বেচে গিয়েছিলো।
আমাদেরকেও এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে মিডিয়াকে উপযুক্ত ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিক নেতাদের ত্রাণ লুটপাটের খবর দিয়ে জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলার রাজনীতি ৬০ ও ৭০ এর দশকে ঠিক থাকলেও এখন অচল, মিডিয়াগুলোকে সেকথা বুঝতে হবে। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পূর্তিতে মিডিয়াগুলোকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা, সকল ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলা এবং দুর্যোগ পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
রাজনৈতিক নেতাদের লুটপাট বন্ধে গণ উস্কানি নয়, বরং অধিকারের তথ্যগুলো সহজভাবে জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আশা করি মিডিয়ার প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নেতাদের লুটেপুটে খাওয়ার দিন ফুরাবে এবং যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাংবাদিকরাও নেতার পেছনে দৌঁড়ানো বন্ধ করবেন।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)