চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

নেতাকর্মীদের ‘অহমিকা’ পরিহার করতে হবে: আবদুর রহমান

টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে জন্ম নেওয়া আত্মবিশ্বাস নেতাকর্মীদেরকে সুশাসন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেছেন, দলের প্রতিটি নেতাকর্মীকে সংযত ও বুদ্ধিদীপ্ত বিবেচনায় আগামীতে পথ চলতে হবে।

তিনি মনে করেন, আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতাকর্মীর সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে জনগণের স্বার্থে কাজ করা উচিৎ।

চ্যানেল আই অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে আবদুর রহমান বলেন, দলের প্রতিটি নেতাকর্মীকে জনগণের আকাঙ্ক্ষায় আঘাত লাগে, এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।

টানা তৃতীয় মেয়াদে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। এমন জয়ে দলটির নেতাকর্মীরা এখন আত্মবিশ্বাসী। তাদের মধ্যে এমনও আলোচনা আছে, ‘আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতার বাইরে যাবে না’।

এ বিষয়ে কী ভাবছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে দলটির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এ নেতা বলেন, ‘আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা নিজেকে সব কিছুর ঊর্ধ্বে নিয়ে গেছেন। অসাধারণ মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। নির্লোভ-নির্মোহের মূর্ত প্রতীক শেখ হাসিনার কোনো কিছু পাওয়ার বিশেষ আগ্রহ নেই।’

‘‘তার এমন ব্যক্তিত্বে আকৃষ্ট হয়ে দেশের মানুষ তাকে টানা তৃতীয় বার এবং চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেছে। এখন আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মী উচিত হবে জনগণের স্বার্থে ত্যাগের মহিমায় নিজেদেরকে উদ্ভাসিত করা এবং সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকা।’’

সাধারণ জনগণের স্বার্থে যেন ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষায় আঘাত আসতে পারে এমন কাজ থেকে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দূরে রাখা দলেল জন্য অন্যতম প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আমরা যদি আমাদের আদর্শের ওপর ভিত্তি করে দলকে পরিচালনা করতে পারি, তাহলে সে আশঙ্কা থাকবে না বলেও মন্তব্য করেন আবদুর রহমান।

যখনই কেউ ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী ভেবেছে, তখনই তারা ছিটকে পড়েছে, তাই দলের নেতকর্মীদের সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘মানুষ তাদের কাছেই আশা করে যারা তাদের আশা পূরণ করতে পারে। শেখ হাসিনা যখন দলের সভাপতি হিসেবে দলের হাল ধরেছেন, তখন দলের প্রতিটি নেতাকর্মীকে তার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। তাকে অনুকরণ এবং অনুসরণ করতে হবে। ‘আমরা ক্ষমতায় এসেছি আর কখনো ক্ষমতার বাইরে যাব না’- এই অহমিকা যদি আমাদের থেকে যায় তাহলে সুশাসন এবং আইনের শাসনের থেকে আমরা বিচ্যুত হবো। তাহলে অবশ্যই আমরা ছিটকে পড়বো।’

শেখ হাসিনার সরকার যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে তখন আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীদের টেন্ডারবাজি-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়া থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের এ নেতা।

পাশাপাশি দলের পক্ষ থেকে এখনই কঠোর বার্তা প্রত্যেক নেতাকর্মীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার উপযুক্ত সময় বলেও মনে করছেন তিনি।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ইস্যু ছিলো আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। এবার সেটা আরও বেশি বাড়ার সম্ভবনা থাকবে কিনা জানতে চাইলে আবদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দলে একক নেতৃত্ব আছে। যে যেটাই করুক দিন শেষে তিনি যে নির্দেশনা দেন সকলেই মাথা পেতে নেয়।’

‘‘তারপরেও উনি মানুষ। বিভিন্ন চাটুকার-মতলববাজ ওনাকে দিকভ্রান্ত করার চেষ্টা ইতিপূর্বে করেছে। তবে তিনি সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এসেছেন। সামনেও অনেকে ব্যক্তি অভিলাষ চরিতার্থ করতে দলে অভ্যন্তরীণ কলহ সৃষ্টি করতে চাইবে। কিন্তু শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং দৃঢ়তার কাছে তা খুব বেশি মাথাচাড়া দেওয়ার সুযোগ নেই।’’

তিনি বলেন: শেখ হাসিনার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার একটা প্রতিদান একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিশাল বিজয়। এর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের জনগণ আবারো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আস্থার জানান দিলো। এ বিশাল জয়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে মানুষ মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে শেখ হাসিনা এমন একজন সরকার প্রধান যিনি সৎ এবং তার চিন্তাভাবনা থেকে শুরু করে সব কিছুই এদেশের জনগণকে নিয়ে।

‘‘মানুষ ভালোবেসে তাকে ভোট দিয়েছে। কেননা, একমাত্র তিনিই এদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেন।  ১৫ আগস্টের কালরাতে ঘাতকের বুলেটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে স্বপ্ন থমকে দিয়েছিলো, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথেই হাঁটছেন শেখ হাসিনা। তার লক্ষ্য দারিদ্রমুক্ত ও ক্ষুধামুক্ত সোনার বাংলাদেশ। সেখানে দেশের প্রতিটি মানুষের মুখে হাসি থাকবে।’’

আবদুর রহমান বলেন, চূড়ান্ত বিচারে আমাদের নেত্রী চান বাংলাদেশ একটি ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ হোক। উনি এবারের ইশতেহারে নিয়ে এসেছেন প্রতিটি গ্রামে হবে শহর। শহরে পরিণত করার পূর্বে এর কিছু পূর্বশর্ত পূরণ করতে হবে আমাদের। সেই পূর্ব শর্তগুলো পূরণের লক্ষ্যে তিনি কতগুলো পরিকল্পনা দিয়েছেন। যেমন, প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, অবকাঠামো উন্নয়নসহ তিনি যে মেগা প্রকল্পগুলো নিয়েছেন সেগুলো অবশ্যই বাস্তবায়ন। পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা বলয় আরো বেশি সুদৃঢ় করার মতো মৌলিক বিষয় নিয়ে শেখ হাসিনার সরকার কাজ করছে।