চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

নুসরাত হত্যা: মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামীয়া ফাজিল মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে শ্লীলতাহানি ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যার দায় স্বীকার করে প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

রোববার ফেনীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি শেষে রাত সাড়ে আটটায় পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর স্পেশাল পুলিশ সুপার মোঃ ইকবাল হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

এসময় তিনি বলেন, গত ২৭ মার্চ নুসরাতের যৌন হয়রানির মামলা দায়েরের পর ওই মামলা তুলে নিতে বার বার চাপ দেয়া হয়। নুসরাত ও তার পরিবার মামলা তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানালে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা কারাগারে থাকাবস্থায় নুসরাত হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত অন্যতম আসামী নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীমকে নুসরাতকে হত্যার নির্দেশ দেন এবং তা আত্মহত্যা বলে প্রচার করারও পরামর্শ দেন।

তিনি আরো বলেন, অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা জেলের ভেতর থেকে বাইরে থাকা শামীম ও নুর উদ্দিনকে এ নির্দেশ দেয়। এরআগে বিকেল সাড়ে ৩ টায় সিরাজ উদ দৌলাকে আদালতে হাজির করা হয়।

নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানীর মামলায় ২৭ মার্চ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আর ৬ এপ্রিল খুন হয় নুসরাত। ৮ এপ্রিল নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি করা হয় সিরাজ উদ দৌলাকে। ১০ এপ্রিল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরাফ উদ্দিনের আদালত তাকে ৫ দিনের রিমান্ড দেয়। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত এজহারের ৮ জনসহ মোট ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ৯ জন ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

এর আগে পুলিশ হেডকোয়ার্টার তদন্ত দলের প্রধান এসএম রুহুল আমিন জানায়, সিরাজ উদ দৌলা এর আগে আরও অনেক ছাত্রীর সঙ্গেই নুসরাতের মতোই ঘটনা ঘটিয়েছেন। বিশেষ করে নুসরাতের এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর সঙ্গেও যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছিল ছ’মাস আগে।

যৌন নিপীড়নের মামলায় কারাগারে গেলেও জেলে বসেই নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা।

হেফজ বিভাগের প্রধান এবং প্রধান আসামী সিরাজ উদদৌলার অন্যতম সহযোগী হাফেজ আবদুর কাদেরসহ ওই মামলার অন্যতম দুই আসামি নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীম, শরীফ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

ঘটনার দিন (৬ এপ্রিল) ওই মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রে গেলে ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায় মুখোশধারীরা। এর আগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতকে চাপ দেয় তারা।

পরে আগুনে ঝলসে যাওয়া নুসরাতকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাতে নুসরাত মারা যান।