ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার এক বছর আজ।
গত বছর ৬ এপ্রিল পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে ডেকে পাশের সাইক্লোন সেন্টারের ছাদে নুসরাতে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা’র সহযোগীরা।
৫ দিন নারকীয় যন্ত্রণা সইয়ে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করে নুসরাত।
ওই বছর ২৬ মার্চ সিরাজ উদ দৌলা মাদ্রাসার তার নিজস্ব কক্ষে ডেকে নুসরাতে যৌন হয়রানি করে। মা শিরিন আখতার পরে সোনাগাজী মডেল থানায় নুসরাতে পক্ষে যৌন হয়রানির মামলা করেন। যে মামলায় সিরাজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এরপরই সিরাজের লোকজন নুসরাতের পরিবারের ওপর মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ৬ এপ্রিল পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা নুসরাতকে তারই এক বান্ধবীর সহযোগীতায় সাইক্লোন সেন্টারের ছাদে ডেকে নিয়ে যায় সিরাজে সহযোগিরা।
সেখানেও মামলা প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতে ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়। শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনা মোতাবেক হাত পা বেঁধে কেরোসিন ঢেলে নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
শুরুতে ফেনী ২৫০ বেড হাসপাতালে নুসরাতে চিকিৎসা শুরু হয়, অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল নুসরাতের মৃত্যু হয়।
বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা উঠে আসে দেশিয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। দেশ জুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা নুসরাত হত্যা মামলার দায়িত্ব পায় পিবিআই। মামলা দায়ের করেন নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।
শুরুতেই দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে ফেনী পুলিশ সুপার (এসপি) জাহাঙ্গীর ও ওসি মোয়াজ্জেমসহ ৪ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তর। এরপর নুসরাতের অপমানমূলক জবানবন্দি নিয়ে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ায় গ্রেপ্তার করা হয় ওসি মোয়াজ্জেমকে।
৬১ কার্যদিবসের যুক্তিতর্ক শেষে ২৪ অক্টোবর ফেনীর নারী ও শিশু অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ অভিযুক্ত ১৬ জনের বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ প্রদান করেন।
ফাঁসিরদণ্ড প্রাপ্তরা ১৬ আসামী হলো:সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার তৎকালীন অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ-দৌলা (৫৭), উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মাদরাসা গভর্নিং কমিটির তৎকালীন সহ সভাপতি রুহুল আমিন, মাদরাসা শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম (৫০), নু উদ্দিন।
এছাড়া, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), প্রভাষক আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা পপি (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন মামুন (২২), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।
২৯ অক্টোবর আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য (ডেথ রেফারেন্স) মামলার যাবতীয় কার্যক্রম হাইকোর্টে পৌঁছায়। সেসম ডেড রেফারেন্সও ছাপানো হয়েছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে আইনি জটিলতায় তা আটকে যায়। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য বেঞ্চ নির্ধারণ করেছেন প্রধান বিচারপতি।
ওই ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত নুসরাতের পরিবারের নিরাপত্তায় বাড়িতে পুলিশের পাহারা রয়েছে। রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে শঙ্কার ভেতর দিন পার করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে নুসরাতের পরিবার।