‘শিরোনামহীন’-এর ভোকাল তানযির তুহিনের ব্যান্ড ছাড়ার ঘোষণায় সংগীত জগত রীতিমত তোলপাড়। শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি আচমকা ফেসবুকে লিখেন, আমি তানযির তুহিন, ব্যক্তিগত কারণে শিরোনামহীন ব্যান্ড থেকে সরে যাচ্ছি।’-এমন স্ট্যাটাসের পর দর্শক ভক্তদের মনে প্রশ্ন ওঠে, সত্যিই কি শিরোনামহীন ছেড়ে যাচ্ছেন জনপ্রিয় ভোকাল তুহিন? কিন্তু হঠাৎ কেনো এমন সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি? তাহলে কি দলের কারো সঙ্গে কোনো ঝামেলা হয়েছে? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতেই চ্যানেল আই অনলাইন মুখোমুখি হয়েছিলো সদ্য ছেড়ে যাওয়া শিরোনামহীনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ভোকাল তানযির তুহিনের সঙ্গে-
তুহিন ভাই, হঠাৎ শিরোনামহীন ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত কেনো নিলেন?
অসুস্থ থাকার জন্য আমাকে আপাতত বিশ্রামে থাকতে হচ্ছে। ডাক্তার আমাকে একমাস রেস্ট নিতে বলেছেন। এরমধ্যেতো আমার দ্বারা পারফর্ম করা সম্ভব না, অথচ শিরোনামহীনের ব্যান্ড মেম্বাররা দেখলাম এসময় খুব অস্থির হয়ে গেছে শো করার জন্য। একটা মাস আমার জন্য তারা ধৈর্য্য ধরতে পারলো না। অয়েট করার নূন্যতম ভদ্রতা তারা দেখালো না আমার প্রতি। তারা ব্যান্ডে নতুন ভোকাল নিয়ে নিলো। আমি এতো বছর ধরে আছি একটা ব্যান্ডের সঙ্গে, অথচ একটা মাস তারা আমাকে সময় দিলো না। আর আমিতো নাই হয়ে যাচ্ছিলাম না। ফিজিক্যালি ইম্প্রুভমেন্টের জন্যও তারা আমাকে সুযোগ দিলো না।
এটাতো সত্যিই দুঃখজনক…
না। শুধু দুঃখজনক না। এটা আমার জন্য অপমানবোধের। তারা এই সম্মানটা আমাকে কেনো দিবে না? আমি কি শিরোনামহীনের পরিবারের কেউ নই? যেহেতু তারা আমাকে আর চাইছে না, তাই ব্যান্ড ভেঙে দেয়া হয়েছে। আইনগতভাবে ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত এটা স্ট্যাবল থাকবে। আমি আর শিরোনামহীনে থাকছি না। এই ব্যান্ড থাকছে না। এই ব্যান্ডে আমার লেখা, গাওয়া, সুর করা পরিশ্রম সব আছে। এই ব্যান্ডের কেউ আমার গান গাক এটা আমি চাইবো না। সব আইনগতভাবে আগে সুরাহা হোক।
আপনি ব্যান্ড ছাড়ার ঘোষণা দেয়ার পর কি শিরোনামহীনের কারো সঙ্গে কথা হয়েছে?
না। কারো সঙ্গেই কথা হয় নাই। আর যাই করি, আর কখনো নীচুমনা মানুষের সঙ্গে মিউজিক করবো না। বিশ ত্রিশ বছর ধরে এই ব্যান্ডের সঙ্গে কাজ করছি, সেই সম্মানটা তারা দিলো না আমাকে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
নতুন ভোকাল নেয়ার বিষয়টি তাহলে সত্যি?
হ্যাঁ। অবশ্যই। আমি তাদের বলেছি একটা মাসইতো, আমি সুস্থ হয়ে ফিরবো। অথচ এই মানুষগুলো আমাকে একটু সময় দিলো না। এটা হলো কিছু? আমি অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় তারা উল্টো মিটিং শুরু করে দিয়েছে। আগেই নতুন ভোকাল ঠিক করে ফেলেছে।
নতুন ভোকাল নেয়ার আগে কি তারা আপনার সঙ্গে কথা বলেছে?
আমাকে বলার আগেই তারা ভোকাল রেডি করে রেখেছে। আমাকে তারা বলে, তারা নাকি গুলশান বনানীতে কর্পোরেট শো করবে। প্রচুর টাকা পয়সা সেখান থেকে আসবে। তাই নতুন একটা ভোকাল আপাতত ঠিক করেছে। আপাততও না, সুস্থ হয়ে আমি ব্যান্ডে ফেরার পর সেই ভোকালও নাকি দলে থাকবে। তার সঙ্গে আমাকে স্টেজ শেয়ার করতে হবে, এটা কখনোই সম্ভব না। সে ইংরেজি গান গাইবে। তো আমিতো ভাই ইংরেজি জানা লোক না। কর্পোরেট দুনিয়ার লোকও আমি না। বাংলা গান গাওয়ার চেষ্টা করি মাত্র।
মান অভিমান নাকি কি কারণে শিরোনামহীন ছাড়ার ঘোষণা দিলেন, এটা জানতেও তারা কেউ এখন পর্যন্ত যোগাযোগ করেনি আপনার সঙ্গে? অথচ আপনি ব্যান্ডের গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য…
ব্যান্ডতো আমাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না। না, তাদের কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। হয়তো নতুন ভোকাল নিয়ে তারা ব্যস্ত আছে। ভাই, এটা সত্যিই হতাশাতার চেয়ে আমার জন্য অপমানজনক। একটা মাস আমার জন্য শো বন্ধ থাকলে কি হতো? আমি কি এতোই নগন্য? এতোদিন ধরে পরিবারের মতো এই ব্যান্ডের সঙ্গে আছি সেটার কোনো মূল্য নেই। এতো কুটিল, এতো টাকা টাকা মানুষ কিভাবে করতে পারে! আমরা মধ্যেও কুটিলতা আছে, এটা আমি মানি। আর এইজন্যই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখন থেকে আমার চেয়ে ভালো মনের মানুষদের সঙ্গে থাকবো। আমার চেয়ে মন ছোট মানুষের সঙ্গে আর নয়।
আপনার ভক্ত শ্রোতারাতো এমন সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। অভিমান ভুলে আবার শিরোনামহীনে ফিরবেন এমনটাই চাইছেন তারা…
শ্রোতারাই আমাদের শক্তি। কিন্তু যেখানে সম্মান পাওয়া যায় না সেখানে ফেরার প্রশ্নই আসে না। তবে আমি গান গাইবোই। শ্রোতাদের কাছে বলি, আমার গান থামবে না। শিরোনামহীনে ফিরবো না, কিন্তু শক্তিশালী অন্য কোথাও অন্যকোনোভাবে ফিরবো।