আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে থাকা ব্যক্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রণীত ‘নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে’ অসঙ্গতি রয়েছে উল্লেখ করে এর সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
পুলিশ সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার রাতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা এসব কথা বলেন। সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা চ্যানেল আই অনলাইনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক অথবা অমর্যাদাকর আচরণ অথবা শাস্তির বিরুদ্ধে জাতিসংঘ সনদের কার্যকারিতা প্রদানের লক্ষ্যে প্রণীত ‘নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন- ২০১৩’ এ ২ এর ৬ নং ধারায় মানসিক কষ্টকে নির্যাতন আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
সভায় অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান বলেন: নির্যাতনে এবং হেফাজতে মৃত্যু নিবারন আইনে মানসিক কষ্টের একটা বিষয় আছে। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে মানসিক কষ্টের কোন সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা যখন কারও বিরুদ্ধে মামলা দেই তখন সে মানসিক কষ্টে থাকে। আমরা যখন তাকে ধরে নিয়ে যাই কিংবা তাকে যখন জেলখানায় পাঠানো হয়, তখনও সে মানসিক কষ্টে থাকে। তার মানসিক কষ্ট কিন্তু শেষ হয় না। এই আইনে মানসিক কষ্ট সংযোজন করার ফলে আমরা নিজেরাই এখন কষ্টে আছি।
তিনি বলেন: পুলিশের সাধারনত তদন্তের সবচেয়ে বড় শক্তি উপ-পরিদর্শকরা (এসআই)। এই আইনের কারণে এসআই’রা মামলার তদন্ত করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
পুলিশের বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বিরুদ্ধেও এই আইনে মামলা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন: একজন ওসি থানার দায়িত্বে থাকেন। যখনই তার বিরুদ্ধে মামলা হয়ে যায়, তখন সে জেলখানায় চলে যায়। কিন্তু আইনে জামিনের বিধান নেই। আমরা এই আইন বাতিল করতে চাই না, সংশোধন চাই। জামিনযোগ্য বিধান রেখে বিভিন্ন অসঙ্গতিগুলোর সংশোধন চাই।
সভায় ডিআইজি মাহবুবুর রহমানও তার বক্তব্যে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনের সংশোধন দাবি করেন। এছাড়া সন্ত্রাস বিরোধী আইনেও কিছু অসঙ্গতির কথা তুলে ধরেন কর্মকর্তারা।
এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক যাচাই-বাছাই করে আইনের অসঙ্গতি দিকগুলো সংশোধন করার আশ্বাস দেন।
ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া পুলিশ ক্যাডারে পদের বৈষম্যের কথা তুলে ধরে বলেন: আমি যখন এসপি ছিলাম, তখন যারা টিএনও ছিলেন তারা এখন সচিব। অথচ আমি চাকরির শেষ পর্যায়ে এসেও সে পর্যন্ত যেতে পারিনি।
এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক বলেন: প্রত্যেকটা ক্যাডার সার্ভিসেই পদে অসামঞ্জস্যতা আছে। এই সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সেল গঠন করা হয়েছে। প্রত্যেক ক্যাডারেই পদ-পদবী সমন্বয় করতে আমরা কাজ করছি।
সভা সূত্র জানায়, সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত নিজেদের অভ্যন্তরীণ আলোচনায় মন্ত্রীদের কাছে বিভিন্ন দাবি এবং প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
সার্বিক বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন: এবারই প্রথম বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের সামনে সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের দাবির কথা তুলে ধরেছেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা এ বিষয়ে পজেটিভ রেসপন্স করেছেন, যার ফলে দাবি বাস্তবায়ন সহজ হবে।