নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে রোহিঙ্গারা। একই পরিণতি হয়েছে অসংখ্য রোহিঙ্গা শিশুর। ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাওয়া এসব শিশুর মনে এখনো দগদগে হয়ে আছে সেসব অভিজ্ঞতা। ক্যাম্পগুলোতে থাকা শিশুরা যে নির্মমতার শিকার হয়েছিল তার ছবিই আঁকছে শিশুরা।
ইউনিসেফ’র ফেসবুক পেজে এমনই কিছু ছবি দেখা যায়।
একটি শিশু এঁকেছে সামরিক হেলিকপ্টার থেকে বোমা ফেলে তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। চোখের সামনে পুড়ে যাচ্ছে সব। গাড়ি চাপা দিয়ে মানুষ মেরে ফেলা হচ্ছে। দলবাজ বেঁধে নির্যাতিত মানুষ নৌকায় করে পালিয়ে যাচ্ছে।
শিশুদের আঁকা এসব ছবিই বলে দেয় নির্যাতনের ঘটনা তাদের মনে কতটা ক্ষত তৈরি করেছে। ভুলে যাওয়া তো দুরের কথা প্রতিনিয়ত সেসব স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাদের। তারা ভয়াবহতার স্মৃতি ভুলে স্বাভাবিকতায় ফিরতে পারবে কিনা তা নিয়ে এখন শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
শিশুরা কেন এ ধরণের ছবি আঁকছে, তা জানতে চাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহফুজা খানমের কাছে।
তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, যেকোন ঘটনাই শিশুদের মনে গভীরভাবে দাগ কাটে। রোহিঙ্গা শিশুদের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। তারা মিয়ানমারে যে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখী হয়েছে তা মনের গভীরে প্রভাব ফেলেছে। এখনো তারা সেখান থেকে বের হতে পারছে না। ফলে ছবি আঁকতে গেলেও তারা সেসব দৃশ্যই তুলে আনতে চেষ্টা করছে।
এ অবস্থা থেকে শিশুদের বের করে আনার উপায় কী? জানতে চাইলে ড. মাহফুজা বলেন, ক্যাম্পগুলোতে শিশুদের জন্য কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা করতে হবে। শিশুদের ফ্যামিলি এনভায়রনমেন্ট’র মধ্যে রাখতে হবে, শিশুরা যেন বুঝতে পারে তারা এখন নিরাপদ, তারা এখন একা নয়। তাদের মায়া-মমতার মধ্যে রাখতে হবে, ভালোবাসতে হবে।
শিশুদের মন থেকে যদি এই অবস্থা দূর না করা যায় তাহলে ভবিষ্যতে তারা নানা ধরনের অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়তে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন এই অধ্যাপক।
ইউনিসেফ ও অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি মানসিক সেবার দিকে গুরুত্ব দেয়ার কথা বলছে। ইতোমধ্যে কাজও শুরু করেছে তারা।
ইউনিসেফের হিসাব অনুসারে, আগস্টে হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ৬০ শতাংশই শিশু। নৃশংসতার সম্মুখীন হওয়ায় চরম মানসিক অসুস্থতার ঝুঁকিতে থাকা এসব শিশুকে স্বাভাবিক রাখার উদ্দেশ্যে মানসিক স্বাস্থ্য কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (কোডেক) নামের স্থানীয় একটি এনজিও ইউনিসেফের সঙ্গে মিলে নিরাপদ এলাকা পরিচালনা করছে।
এছাড়াও কক্সবাজারে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আরও বেশ কয়েকটি এ জাতীয় ‘চাইল্ড ফ্রেন্ডলি স্পেস’ (সিএফএস) এবং স্কুল চালু করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের ভয়াবহতা থেকে পালিয়ে আসা শিশুকিশোরদের মানসিক আঘাত ও ট্রমা থেকে বের করে আনতে যতটা সম্ভব কাজ করে যাচ্ছে ইউনিসেফ এবং স্থানীয় ত্রাণ সংস্থাগুলোর সহায়তায় পরিচালিত এই সেন্টারগুলো। এদের মূল উদ্দেশ্য, শিশুরা যেন একে অপরের সঙ্গে মেলামেশার মাধ্যমে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে।