দিল্লির নির্ভয়া ধর্ষণ মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া চার আসামির একজন পবন গুপ্ত রায়ের বিরুদ্ধে নতুন করে পিটিশন দায়ের করেছে। ওই পিটিশনে তার দাবি, ২০১২ সালে ঘটনার সময় সে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিল।
২২ জানুয়ারি সকাল ৭টায় তাদের ফাঁসি কার্যকরের তারিখ পেছানোর আদেশের পর নতুন এই আবেদন করেছে এই আসামি।
পিটিশনে পবনের দাবি, ঘটনার সময় সে একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং ‘নিষ্পাপ বালক’ ছিল। তাই কিশোর অপরাধীদের জন্য যে আইন নির্ধারিত সে অনুসারে তার সাজা হওয়া উচিত, যার অর্থ মাত্র কয়েক বছরের কারাদণ্ড।
আবেদনে এই আসামি আরও দাবি করেছে যে, গ্রেপ্তারের সময় তার বয়স নির্ধারণের মেডিক্যাল পরীক্ষা ঠিকঠাকভাবে করা হয়নি। এই একই আবেদন অবশ্য এর আগে গত ডিসেম্বরেও করেছিল পবন। কিন্তু দিল্লি হাইকোর্ট সে সময় তার দাবি নাকচ করে দেন।
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভারতের রাজধানী দিল্লিতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন প্যারা মেডিক্যালের এক শিক্ষার্থী। প্রেমিকের সামনেই গণধর্ষণের শিকার হন ভারতব্যাপী ‘নির্ভয়া’ নামে পরিচিতি পাওয়া ওই নারী। দু’জনকেই মারধরের পর বাস থেকে ছুঁড়ে ফেলা হয়। ওই বছরই ২৯ ডিসেম্বর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় নির্ভয়ার।
২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর এ ঘটনায় চার অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২১ ডিসেম্বর আরও এক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। গণধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করা হলে ২০১৩ সালের ১৭ জানুয়ারি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে পাঁচ প্রাপ্তবয়স্ক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা শুরু হয়। ওই বছরের ১১ মার্চ তিহার জেলে মূল আসামি রাম সিং আত্মহত্যা করে। অপ্রাপ্তবয়স্ক আরেক আসামিকে তিন বছর জেল খাটার পর মুক্তি দেয়া হয়।
পরে ২৩ সেপ্টেম্বর অন্য চার আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেন ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট। ২০১৪ সালের ১৩ মার্চ নিম্ন আদালতের রায়ই বহাল রাখেন দিল্লি হাইকোর্ট। পরে সুপ্রিমকোর্টে এ রায়কে চ্যালেঞ্জ করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি। ২০১৭ সালের ৫ মে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্ট।
২০১৯ সালের নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্টে রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানায় আসামি অক্ষয় কুমার সিং। ১৬ ডিসেম্বর রায় পুর্নবিবেচনার জন্য প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ গঠন করা হয়।
অবশেষে ১৮ ডিসেম্বর অক্ষয় ঠাকুর সিং, মুকেশ সিং, পবন গুপ্ত ও বিনয় শর্মা – এই চার আসামিরই মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্ট। এরপর সর্বোচ্চ সাজা থেকে রেহাই পাওয়ার সর্বশেষ উপায় হিসেবে আসামি বিনয় ও মুকেশের দায়ের করা কিউরেটিভ পিটিশন গত ১৪ জানুয়ারি খারিজ হয়ে যায়। তাদের ফাঁসি ২২ জানুয়ারি সকাল ৭টায় তিহার জেলে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু দিল্লি হাইকোর্ট জানান, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর অন্তত ১৪ দিন সময় দিতে হয় অপরাধীদের। সেই নিয়মেই ২২ তারিখ চার জনকে ফাঁসি দেয়া যাবে না।
সময় পেয়ে কিউরেটিভ পিটিশনে ব্যর্থ হওয়া মুকেশ আলাদা করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইলে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ প্রাণভিক্ষার আবেদন ফিরিয়ে দেন।
এরপরই সাজা কার্যকরের তারিখ পিছিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি ভোর ৬টা নির্ধারণ করে শুক্রবার মৃত্যু পরোয়ানায় সই করেন আদালত। নতুন পরোয়ানা অনুযায়ী শুক্রবার থেকে ১৪ দিনের শর্ত কাটায় কাটায় পূরণ হচ্ছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের দাবি, আসামিরা আলাদা আলাদা করে একের পর এক ক্ষমাভিক্ষার আবেদন দায়ের করছে। এটি আইনের প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার একটি কৌশল বলে দাবি করেছেন তারা।
নির্ভয়ার মা আশা দেবীও রোববার দাবি জানিয়েছিলেন যেন ফাঁসির তারিখ পেছানো না হয়। এর মধ্য দিয়ে আসামিরা নিজের বেঁচে যাওয়ার জন্য আইনের নানা ফাঁকফোঁকর খুঁজে বের করতে শুরু করবে।
‘অথচ আমার মতো একজন, যে কিনা নিজের একমাত্র মেয়ের মৃত্যু দেখার পর বিচারের আশায় বছরের পর বছর ধরে আদালতপাড়ার চক্কর কাটছি, তার কোনো রেহাই নেই। তিহার জেলের কর্মকর্তা আর দিল্লি সরকারের অবহেলার সাজা আমি কেন ভোগ করব?’ বলেন তিনি।