প্রায় সন্ধ্যার পর বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের সূতিকাগার এফডিসি থাকে জনশূন্য। এটা প্রায় নিয়মিত ঘটনা। শুটিং না থাকলে তো এফডিসির মূল ফটকে কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া কাউকে খুঁজে পাওয়াও মুশকিল হয়ে পড়ে!
তবে অন্যদিনের চেয়ে গত দুদিনের সন্ধ্যার চিত্রটা ছিল অন্যরকম। এফডিসির মূল গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকেই চোখে পড়লো নির্মাতাদের জটলা। কেউ আসছেন, কেউ যাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার আসন্ন পরিচালক সমিতির নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন। কড়ই তলার আলো আঁধার দিয়ে হেঁটে এফডিসির ক্যান্টিনের দিকে পা বাড়ালেই চোখে পড়ে মানুষের উপস্থিতি।
অন্যদিনে ক্যান্টিন ফাঁকা থাকলেও গতকাল সন্ধ্যায় ছিল ভরপুর। সেখান থেকে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সামনে গেলেই চোখ পড়ে নির্বাচনী তোড়জোড়। ২৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে ঘিরে চিত্রপরিচালকরা ইতোমধ্যেই ভোট চাওয়া শুরু করেছেন। যারা সচরাচর এফডিসি আসতেন না, নির্বাচনের জন্য তাদের যাতায়াত বেড়েছে।
জানিয়ে রাখা ভালো, আসন্ন পরিচালক সমিতির নির্বাচনে দুই প্যানেল থেকে লড়ছেন নির্মাতারা। মোট ভোটার ৩৬১ জন। মুশফিকুর রহমান গুলজার-বদিউল আলম খোকন আর অন্যটি বাদল খন্দকার-বজলুর রাশেদ চৌধুরী প্যানেল। এ ছাড়া মহাসচিব পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পরিচালক সাফি উদ্দিন সাফি নির্বাচন করবেন।
পরিচালক সমিতির সামনেই ১ নম্বর শুটিং ফ্লোর। ভিতরে ঢু মারতেই দেখা গেল অপু বিশ্বাস শুটিং করছেন। কথা বলে জানা যায়, এটি কোনো সিনেমার শুটিং নয়। নারিকেল তেলের বিজ্ঞাপন। সোম, মঙ্গল ও বুধবার সারাদিন সেখানে শুটিং হয়েছে। বিজ্ঞাপনটি নির্মাণ করছেন আকাশ আমিন।
নির্মাতা জানান, চলতি মাসেই জিঙ্গেল নির্ভর এই বিজ্ঞাপনটি প্রচারে আসবে। অপু বিশ্বাস দেড় বছর পর কোনো বিজ্ঞাপনে কাজ করছেন। তিনি নিজে ভীষণ খুশি সেখানে কাজ করে।
সেখান থেকেই জানা গেল ৭ নম্বর ফ্লোরে চলছে ‘রাগী’ সিনেমার শুটিং। মিজানুর রহমান মিজান পরিচালিত এ ছবিতে আঁচলের সঙ্গে শুটিং করছিলেন নায়ক আবির। শুটিং ফ্লোরে দেখা যায়, দর্জা ভেঙে আঁচল গাড়ি নিয়ে একটা ঘরে ঢুকেছেন। তিনি মুখ ঢেকে আছেন। সঙ্গে ছিলেন নায়ক আবির।
আঁচল বলেন, নয়মাস পর সিনেমার শুটিং করছি। এরমধ্যে দুটি ওয়েব সিরিজের কাজ করেছি। ৬০ শতাংশ শুটিং শেষ করেছি। আমার অনেক বাকি আছে। এখন সেগুলো করছি। আগামী ৩০ তারিখ পর্যন্ত টানা শুটিং করব। ছবিতে খল চরিত্রে দেখা যাবে মুনমুনকে। আণ্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে মুনমুনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাধে আঁচলের। সেই দ্বন্দ্ব থেকেই রাগ আর রাগ থেকেই ‘রাগী’র গল্প গড়ে উঠেছে। ‘রাগী’র গল্পে মুনমুন-আঁচল সম্পর্কে দুই বোন।
পাশেই চার নম্বর শুটিং ফ্লোর। অন্য ফ্লোরগুলো থেকে সেখানে ভিড় তুলনামূলক বেশী। সামনে গিয়ে জানা গেল শাকিব খান সেখানে শুটিং করছেন। কড়া নিরাপত্তা পেরিয়ে ফ্লোরে গিয়ে হাজির হলে দেখা যায়, তিনি ফাইটিং করছেন। চমৎকার বাস্কেটবলের ভেন্যু! দূর থেকে মুচকি হেসে আন্তরিকতা প্রকাশের পর শট শেষে মেকআপ রুমে বসে গল্প শুরু করলেন।
বললেন, চারপাশে এখন ভীতিকর অবস্থার মধ্যে যাচ্ছে। আগে সবাই মায়াপুরী বলতো, এটা এখন ভয়ঙ্করপুরী হয়ে গেছে। আগে আড্ডা হতো, কাজ হতো, কতো মানুষ আসতো, এফডিসির মধ্য ছিল বাইরের মানুষদের স্বপ্নের জায়গা। কত বড় বড় মানুষ এখানে শুটিং দেখতে আসতো। একটা আনন্দের জায়গা ছিল। সব শ্রেণির মানুষ পিকনিকের ফিল নিতো। এখন তারা ভুলেও এফডিসির ত্রিসীমানায় ভিড়তে চায় না। কারণ, এখানে এলেই ঝামেলায় পড়তে হয়। কেন ওইসব সৌখিন মানুষগুলো শুধু শুধু নিজেদের বিপদ ডেকে আনবে? এভাবে চলতে থাকে আলাপ, বাড়তে থাকে রাত।