স্থানীয় বা জাতীয় যে কোনো পর্যায়ের প্রতিটি নির্বাচনেই নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের জন্য নির্দিষ্ট প্রতীক বরাদ্দ থাকে। যাকে বলা হয় নির্বাচনী প্রতীক। এ প্রতীকেই ভোটের সময় আলাদা করা যায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে। কেন বরাদ্দ থাকে এসব প্রতীক?
সাধারণভাবে বলতে গেলে, বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে আলাদা আলাদাভাবে শনাক্ত করার জন্য। বিশেষ করে ভোটারদের কাছে নিজেদের চেনার সুবিধার্থে নির্বাচনের সময় দলগুলো প্রতীকের পাশাপাশি নিজেদের চরিত্র চেনাতে বিশেষ বিশেষ রঙয়েরও ব্যবহার করে। যেমন, রক্ষণশীল দলগুলো সাধারণত কালো বা নীল রঙ ব্যবহার করে। গোলাপী কখনও কখনও সমাজবাদীদের পরিচয় বহন করে। আবার উদারপন্থা বোঝাতে প্রায়ই হলুদ রঙ ব্যবহার হয়।
‘পার্পল পার্টি’ শব্দটি যুক্তরাষ্ট্রে অসংজ্ঞায়িত মধ্যপন্থী দলের জন্য ব্যবহৃত হয়। কালো রঙ ফ্যাসিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, যেমন মুসোলিনীর ব্ল্যাকশার্টস, তেমনি বাদামি নাৎসিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, যেমন এক সময় জার্মানির নাৎসিদের বিশেষ বাহিনীর পোশাকের রঙ ছিল এটা।
একইভাবে নিজের দলকে অন্য দলগুলো থেকে আলাদা করার সুবিধায় নিজেদের জন্য প্রতীক নির্বাচন করে দলগুলো। তাছাড়াও ভোট দিতে এসে কোনো নিরক্ষর বা স্বল্পশিক্ষিত ভোটার যেন বিভ্রান্ত না হয়, সেজন্য প্রিয় দলকে চেনার সুবিধার্তে প্রতীক নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণত বেছে নেয় দলের ভাবমূর্তি বা দেশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতীক।
শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা, বিএনপির ধানের শীষ আর জাতীয় পার্টির লাঙল। কোথা থেকে এলো এসব প্রতীক?
বিশিষ্ট লেখক, কলামিস্ট, গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ জানালেন, ১৯৫৪ সালে মাওলানা ভাসানী নৌকা প্রতীক ঠিক করেছিলেন। কিন্তু একটি দলের জন্য একটি প্রতীক অনন্তকাল একই থাকবে সেটা আমাদের রীতি হয়ে গেছে। যেকোনো প্রতীকই নিতে পারে যে কেউ। ’৫৪ সালের দিকে নৌকায় যাতায়াত হতো সবচেয়ে বেশি সেখান থেকেই তারা নৌকা প্রতীক বেছে নেন।
বাংলাদেশের মানুষের ক্ষুধা নিবারণের অন্যতম উপাদান ভাত। যার জন্ম ধান থেকে। তাই সুপরিচিত হিসেবে ধানের শীষকে প্রতীক হিসেবে বেছে নেয় জাতীয়তাবাদী দল। আর কৃষি কাজে তো লাঙল লাগেই। সেখান থেকে লাঙল প্রতীক নিয়েছিলো জাতীয় পার্টি। এভাবেই মূলত প্রতীকগুলো নির্ধারিত হয়েছে।
তিনি যোগ করেন, একবার একটি দল নৌকা নিয়ে নিলে, পরেরবার তাদের দাবিকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়। তারা যদি তাদের প্রতীক ছেড়ে দেয় তাহলে হয়তো সেই প্রতীক কাউকে দেয়া হবে। তবে একই প্রতীক দুই দল চাইলে ট্রাইব্যুনালে হেয়ারিং হবে। সেই হেয়ারিংয়ে দুই পক্ষই থাকবে। তখন জানতে চাওয়া হবে কোন কোন যুক্তিতে সেই প্রতীক আরেকজন চান? তারাতো আগে থেকে ব্যবহার করছে?
দেশের তিনটি রাজনৈতিক দলের প্রতীকই দেশের প্রকৃতিকে প্রকাশ করে।
একইভাবে দেশের অন্যদলগুলোও মানুষের সুপরিচিত এমন প্রতীকই ব্যবহার করে আসছে।