চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

নির্বাচনের আগে বেসিস নিয়ে যত কথা

আগামী ২৫ জুন বাংলাদেশ সফটওয়্যার এন্ড ইনফরমেশন সার্ভিস (বেসিস) এর নির্বাচন। আওয়ামী লীগ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রম গ্রহণ করায় এই খাতের এসোসিয়েশনগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

সফটওয়্যার উৎপাদন ও রপ্তানিতে সরকারের বিশেষ গুরুত্ব ও প্রণোদনার কারণে ট্রেড বডি হিসেবে বিশেষ গুরুত্বের জায়গায় এসেছে বেসিস। সেসব কারণে এই নির্বাচনটিও গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনের মুখে বেসিস সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে আলোচিত হচ্ছে বেসিস এর সফলতা, ব্যর্থতা নিয়ে।

বর্তমান সরকারের তার নির্বাচনী ওয়াদা পূরণে বিভিন্ন খাতে বেসিসকে গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দিয়েছে। প্রতি বছর বড় ধরনের প্রণোদনা প্রদান করে আসছে। এজন্য বেসিস এর কাছেও সরকারের বড় ধরনের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।

এত সুযোগ সুবিধা পাবার পরে সরকারের প্রত্যাশা পূরণের সফলতা-ব্যর্থতা নিয়ে সরকারের নীতি নির্ধারকদের প্রতিক্রিয়া রয়েছে মিশ্র। গত ৮ মে ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা সভার আলোচনায় পরিকল্পনামন্ত্রী প্রকাশ্যে তার হতাশার কথা জানিয়েছেন।

এ খাতে বিশেষ গুরুত্ব ও প্রণোদনার কারণে এসোসিয়েশনের প্রতি প্রত্যাশা বেড়েছে বেসিস সদস্যদেরও। তারা আশা করেন, বেসিস এর পক্ষ থেকে ইন্ডাস্ট্রিকে এগিয়ে নিতে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া উচিৎ এবং সরকারি সকল প্রণোদনার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা উচিৎ।

সেদিক দিয়ে বেসিসের সদস্যদেরও মতামত মিশ্র। সদস্যরা মনে করেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বেসিস ট্রেড বডি হিসেবে তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। তারা দৃশ্যমান অনেক কিছু করলেও সেগুলোর ফল বেসিস সদস্যরা পাননি। এমনকি সেগুলোর অনেক কিছুই বেসিস এর লক্ষ্য উদ্দেশ্যের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক।

বেসিস এর বাৎসরিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় তারা বেশিরভাগ সরকারের উদ্যোগগুলোকে নিজেদের উদ্যোগ বা সফলতা হিসেবে প্রচার করেছে। অথচ এই উদ্যোগগুলোতে বেসিস মূলত সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে মাত্র। আবার এমন সব কাজে তারা সহযোগী হয়েছে, যার সাথে বেসিস এর লক্ষ্য উদ্দেশ্যের কোন সম্পর্ক নেই।

সদস্যরা বলেন– বেসিস এমন কিছু কাজে যুক্ত হয়েছে যেটা সরকারের জন্য সঠিক কিন্তু বেসিস এর মেম্বারদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়। যেমন ফ্রিল্যান্সার তৈরির কার্যক্রম। এটাকে মেম্বাররা সরকারের দায়িত্ব হিসেবে সঠিক মনে করেন। কিন্তু বেসিস এর যুক্ত হওয়াটাকে মেম্বারদের স্বার্থের সম্পূর্ণ বিরোধী বলেও মনে করেন তারা।

বেসিস স্টুডেন্ট ফোরাম নামের একটি উদ্যোগের বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। বেসিসের অনেক সদস্যই যুক্তি দেখান, বেসিস একটি ট্রেড বডি। তাদের কাজে বেসিস এর মেম্বার এবং মূল ধারার ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নে উদ্যোগ নেয়া। তারা সেটা না করে স্টুডেন্ট ফোরাম এর মতো সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক কাজে বেসিস এর রিসোর্স ব্যয় করেছেন।

তথ্য প্রযুক্তি জনশক্তি তৈরিতে বিআইটিএম নামে বেসিস এর ট্রেনিং একাডেমির উদ্যোগকে কিছু সদস্য প্রশংসা করছেন, অন্যদিকে আবার কিছু সদস্য বলেন এটা কোনভাবেই বেসিস এর কাজ হতে পারে না। বরং এই কাজটি সদস্যদের মধ্যে যাদের পেশাদারি ট্রেনিং প্রতিষ্ঠান রয়েছে, শুধুমাত্র তাদের দিয়ে করানো উচিৎ ছিল।

ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্য সব কার্যক্রমের কারণে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির পরিবেশ দ্রুত বদলে যাচ্ছে। তাই এখন সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার ছিল এ সম্পৃক্ত পলিসি রিফর্মের। পলিসি রিফর্ম ছাড়া পেশাদারি ইন্ডাস্ট্রি হবে না, বিদেশি বিনিয়োগও আসবে না। কিন্তু সদস্যরা অত্যন্ত হতাশা নিয়ে বলেন, বেসিস এর পলিসি রিফর্ম তো দূরে থাক, পলিসি বিষয়ে তাদেরকে তেমন কোন কথা বলতেও শোনা যায়নি এতদিনে।

বাংলাদেশের সফটওয়্যার খাতের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বেসিসের অত্যন্ত সুসর্ম্পক। সরকারের পক্ষ থেকে বেসিসকে সব সময় নানা রকম সহযোগিতা করা হয়। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে নানা প্রকল্পে সরকারের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা বেসিসকে দেওয়া হয়েছে।

এই অর্থ দেওয়া হয়েছে সফটওয়্যার শিল্পের উন্নতি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথ বেড়ে উঠতে প্রশিক্ষণসহ নানা সহায়তা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বেসিস সরকারি এ অর্থ যথাযথভাবে খরচ করেনি বলে অভিযোগও বেশ পুরনো।

বেসিসের করা ২০১৫ সালের এক জরিপ দেখা দেখা যায়, ২০১০–১১ অর্থবছরের পর থেকে সফটওয়্যার খাতের প্রবৃদ্ধি কমছেই। ২০১২ সাল থেকেই সফটওয়্যার রপ্তানিতে আমাদের গতি ধীর হয়ে গেছে। ২০১৪–১৫ ছিল সবচেয়ে হতাশাজনক বছর।

গত কয়েক বছরে বেসিসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সফটওয়্যার খাতের প্রবৃদ্ধি ক্রমশ কমেছে। সফটওয়্যার খাতের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া ও দেশে এ শিল্পে বড় প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে বেসিসের আন্তরিকতার অভাব হিসেবেই দেখা হচ্ছে সর্বত্র।

আজ প্রশ্ন উঠছে- যেখানে পথনির্দেশকের ভূমিকা রাখার কথা বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এন্ড ইনফরমেশন সার্ভিসের (বেসিস) সেখানে অভিভাবক এই প্রতিষ্ঠানটি হয়ে উঠছে বড় প্রতিবন্ধকতা। এ কারণেই আগামী ২৫ জুনের নির্বাচন বেসিসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। একটি গতিশীল নেতৃত্বের মাধ্যমে বেসিসের সকল অচলায়তন কাটিয়ে উঠার সময় মনে হয় চলে এসেছে।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)