সরকারি চাকরির কোটা ব্যবস্থা পর্যালোচনা কমিটির মেয়াদ শুরুতে ১৫ দিন থাকলেও এখন আরো ৯০ কর্মদিবস বাড়ানো হয়েছে। এর আগে ২ জুলাই যখন এই কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তখন কমিটি গঠনের দিন থেকে ১৫ কর্মদিবস অর্থাৎ ২৩ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। এ উপলক্ষে পর্যালোচনা কমিটি গত ৮ জুলাই তাদের প্রথম সভা করে। সেই সভায় কর্মপন্থা নির্ধারণের পাশাপাশি সরকারি চাকরিতে কোটা সংক্রান্ত দেশি-বিদেশি সব ধরনের তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি সংসদে বলেছেন: ‘কোটা পদ্ধতি থাকবে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ রাখতে হাইকোর্টের রায় আছে।’ কিন্তু এর আগে কোটা নিয়ে সরকারের ভিন্ন বক্তব্য এসেছিল। শুরুতে পরিস্থিতি সঠিকভাবে সামাল দিতে না পারায় কোটা নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে এবং এই আন্দোলন এখন সরকার বিরোধী আন্দোলনে রূপ নিতে যাচ্ছে। বিশেষ করে এখন সামজিক মাধ্যমে সরকারের দমননীতি এবং ছাত্রলীগের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুরুতেই এই আন্দোলন নিয়ে সরকার একটি ইতিবাচক ভূমিকায় থাকলে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হত না।
বিশেষ করে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে আন্দোলন নতুন মাত্রা পেয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারে দূরদৃষ্টির অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। সরকারকে আরও আগেই কমিটি করে এবং কমিটির কার্যকাল নিয়ে সুস্পষ্ট ধারণা দেয়া উচিৎ ছিল।
কোটা বিষয়ে হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত আসুক এটা আমরাও চাই না। এর বদলে সব দিক পর্যালোচনা করে সঠিক ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত আসুক। কিন্তু এটাও সত্য যে, এখন এই ৯০ কর্মদিবসে সরকারের কোটা সংস্কারনীতি নিয়ে যদি ইতিবাচক কোনো ভুমিকা লক্ষ্য করা না যায়, তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার নিশ্চয়ই নির্বাচনের আগে এই দুর্বিপাকে পড়তে চাইবে না।
এক্ষেত্রে কোটা সংস্কারের পক্ষে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরও সচেতন থাকতে হবে। কোটা সংস্কার যেহেতু নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একটি জটিল সিদ্ধান্তের বিষয়, তাই হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নানা দিক পর্যালোচনা করে সমাধানে আসাটাই যৌক্তিক। এছাড়া কোটা আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে কোনো পক্ষ যাতে নাশকতা তৈরি করতে না পারে সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আন্দোলনকারীদেরই। নাহলে সরকারের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের যে ভুল বোঝাবুঝির তৈরি হবে তা কোনো পক্ষের জন্যই সুখকর হবে না।