নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে প্রার্থীদের জমা দেওয়া হলফনামাকে বাড়তি কাগজ হিসেবে উল্লেখ করে তা বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় সামাজতান্ত্রিক দল জাসদ। এছাড়া ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ, যুদ্ধাপরাধীদের নির্বাচনে অংশগ্রহন ঠেকাতে বিধান প্রণয়ন, এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি কলেজের শিক্ষকদের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দিতে আইন সংশোধনসহ নির্বাচন কমিশনকে(ইসি) মোট ১৭ দফা প্রস্তাব দিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃতাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম এ শরিক দলটি।
রোববার বিকেলে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে নির্ধারিত সংলাপে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে অংশ নেয় দলটির ১৮ জন প্রতিনিধি। প্রধান নির্বাচন কশিনার কেএম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে বিকেল ৩টা থেকে এ বৈঠক শুরু হয়।
বৈঠক শেষে জাসদের প্রস্তাবিত বিষয়গুলোর সারসংক্ষেপ সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন হাসানুল হক ইনু।
হলফনামা বাতিলের প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে ইনু বলেন: হলফনামায় যা দিই আমরা সেটা যদি কেউ ভঙ্গ করে তাহলে তো কারও সংসদ সদস্য পদ যায় না। সংসদ সদস্যের প্রার্থী পদের যে শর্ত আছে, সেখানে যা লিখি সেটাই কিন্তু আসল। সেখানে যদি কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি হয় তাহলে আমার প্রার্থী পদের বা প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা অযোগ্যতা নিশ্চিত হয়। সুতরাং এ হলফনামাটা বাহুল্য, এটা দিয়ে মানুষকে বিব্রত করার দরকার নেই।
‘সে জন্য আমরা মনে করছি হলফনামাটা একটা বাড়তি কাগজ। কারণ মূল মনোনয়ন পত্রে যা লেখা হয় সেটাই হচ্ছে আমার হলফ নামা। সেখানে যদি আমি শর্ত ভঙ্গ করি তাহলে আমার প্রার্থীতা বাতিল হবে বা পরবর্তী কালে ধরা পড়লে আমার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু হলফনামার ব্যাপারটা একটা বাড়তি কাগজ। এটা বাতিল করে দেওয়া উচিত মনে করি।’’
নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা এবং সেনাবাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারে কোন আলোচনার সূত্রপাত করেননি উল্লেখ করে সরকারের বর্তমান তথ্যমন্ত্রী বলেন: নির্বাচনকালীন কী রূপ সরকার কাঠামো থাকবে এটা কমিশন এবং রাজনৈতিক দলের এখতিয়ার বহির্ভূত ব্যাপার। সেহেতু নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা পরিধি এবং ক্ষমতা নিয়ে জাসদ কোন ধরনের আলোচনা করেনি। আমি মনে করি এটা ইসির এখতিয়ার বহির্ভুত তাই তাদের উচিতও না এব্যাপারে আলোচনা করা।
‘‘আমরা বলেছি সংবিধানে বর্ণিত বা যেভাবে আইনে আছে সেভাবে নির্বাচনকালীন সরকার থাকবে।’’ বলেন ইনু।
সেনাবাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারে নিজের দলের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন: আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনী কোনদিনই অন্তর্ভুক্ত ছিল না। নির্বাচন অনুষ্ঠান করে বেসামরিক প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন। তবে নির্বাচন কমিশন যদি চায় তবে ক্ষমতাসীন সরকার সেনাবাহিনীকে নির্বাচনী কাজে সাহায্যের জন্য পাঠাতে পারে।
‘‘সশস্ত্র বাহিনীকে কোন আইনগত মর্যাদা দেওয়ার কোন প্রস্তাব আমরা করিনি। কারণ সশস্ত্র বাহিনীকে আইনী কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা সশস্ত্র বাহিনীর যে নীতি সেটার সঙ্গে যায় না। সুতরাং সশস্ত্র বাহিনীকে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীতে রূপান্তরের প্রস্তাবটাকে যুক্তিযুক্ত মনে করিনি বলে আমরা এই ব্যাপারটা নির্বান কমিশনের কাছে উত্থাপন করিনি।’’
সংলাপে এ পর্যন্ত বেশিরভাগ দল ইভিইমের বিরোধিতা করে সে পদ্ধতিতে ভোটগ্রহন না করার প্রস্তাব দিলেও জাসদের অন্যতম দাবি ছিল ইভিএমন পদ্ধতিতে ভোট গ্রহন করা।
এ ব্যাপারে হাসানুল হক ইনু বলেন: নির্বাচন পদ্ধতিকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তরের জন্য ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন(ইভিএম) চালু করা দরকার বলে আমরা মনে করি।
আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশনের বাইরে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করে ইনু বলেন: আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। কারণ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে তারাতো আলোচনা করছেই। ৪২টি নিবন্ধিত দলের কেউ তো বলেনি যে আমরা কমিশনের সঙ্গে সংলাপ করবো না। কমিশনের আমন্ত্রন গ্রহন করার মধ্য দিয়ে নির্বাচন সংক্রান্ত যেসব আইন কানুন রয়েছে সেসব আলোচনা হয়ে যাবে।
এর আগে সকালে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলাদা সংলাপে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের সুপারিশ করেছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সংসদ নির্বাচনের সূচি যাতে ভণ্ডুল না হয় সেজন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করতে পরামর্শ দিয়েছে দলটি।
জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপ করে।
আজকের বৈঠকের মধ্য দিয়ে এ পর্যন্ত ২৫টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় করল নির্বাচন কমিশন। গত ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ১৬ ও ১৭ আগস্ট গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর ২৪ আগস্ট থেকে দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
ইতোমধ্যেই সবগুলো দলের সঙ্গে সংলাপের সূচি প্রকাশ করেছে ইসি। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৮ অক্টোবর এবং বিএনপির সঙ্গে ১৫ অক্টোবর সংলাপ করবে ইসি।
এছাড়া অন্যান্য দলগুলোর মধ্যে সোমবার জাতীয় পার্টি, ১০ তারিখ সকালে বিকল্পধারা বাংলাদেশ; বিকেলে ইসলামী ঐক্যজোট, ১১ তারিখ সকালে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি; বিকেলে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, ১২ তারিখ সকালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ও বিকেলে গণতন্ত্রী পার্টি, ১৬ তারিখ সকালে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও বিকেলে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল), ১৯ অক্টোবর সকালে জাতীয় পার্টি-জেপি; বিকালে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি।
এরপর ২২ অক্টোবর পর্যবেক্ষক, ২৩ অক্টোবর নারী নেত্রী এবং ২৪ অক্টোবর নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মত বিনিময় করবে ইসি।