কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) বলছে, আগামী ২০ আগস্ট থেকে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামেই লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া কিনবে তারা।
বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংগঠনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান বিটিএ-এর সভাপতি শাহীন আহমেদ।
তিনি বলেন, যেসব মৌসুমি ব্যবসায়ী কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেছে তাদের আশ্বস্ত করতে চাই, লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া ন্যায্য মূল্যে তাদের কাছ থেকে নেয়া হবে। তাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সরকারের বেঁধে দেয়া দামেই আগামী ২০ আগস্ট থেকে ট্যানারি মালিকরা লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করবেন।
কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ দেওয়া হলে দেশীয় চামড়া শিল্প হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে শাহীন আহমেদ বলেন, চামড়া শিল্পনগরীতে ৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। চামড়া রপ্তানি হলে এই বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়বে। তখন কাঁচা চামড়ার অভাবে সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়বে সাভারের চামড়া শিল্পনগরী। ফলে এ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত বিশাল জনগোষ্ঠী বেকার হয়ে পড়বে। এতে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিতে পারে।
সার্বিক দিক বিবেচনা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেওয়া কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান এই ট্যানারি মালিক।
চামড়ার দাম নিয়ে নৈরাজ্য ঠেকানোর পাশাপাশি উপযুক্ত দাম নিশ্চিত করতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্তের কথা জানায় সরকার।
সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও চামড়ার দাম কম হওয়ায় গত দুইদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে চামড়া ফেলে দেওয়ার পাশাপাশি তা নষ্ট করারও খবর পাওয়া যায়। বিক্রেতাদের অভিযোগ, আড়ৎদাররা চামড়া না কিনে ইচ্ছাকৃতভাবে দাম কমিয়ে দিয়েছে। এতে সারাদেশেই কাঁচা চামড়ার দামে ধস নামে।
সংবাদ সম্মেলনে শাহীন আহমেদ বলেন, সাধারণত ট্যানারি মালিকরা কোরবানির এক সপ্তাহ পর চামড়া কিনে থাকে। চামড়া সংরক্ষণে (পরিবহন, লবণ ও শ্রমিক) প্রতি বর্গফুটে ১০ টাকার বেশি খরচ হয়।
নির্ধারিত মূল্যে কাঁচা চামড়া কেনা হচ্ছে না- এমন সংবাদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা ২/১টা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ, তারা যেন লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করেন।’
আড়ৎদারদের বকেয়া পরিশোধের বিষয়ে বিটিএ সভাপতি বলেন, ‘২০১৭ সালে বন্ধ হওয়া ট্যানারির অধিকাংশ উৎপাদনে যেতে পারেনি। এ বছর অনেকে আড়ৎদারদের ১০০ ভাগ বকেয়া পরিশোধ করেছে, কেউ কেউ দিতে পারেনি, কারণ তাদের উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হয়েছে।’
‘‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ট্যানারি মালিকদের ৬শ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে বলা হলেও মূলত দেয়া হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। সেই টাকা আড়ৎতদারদের দেয়া হয়েছে, তারা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের টাকা না দিলে ট্যানারি মালিকদের কি করার আছে।’’
ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কোনো সম্পর্ক নেই দাবি করে তিনি বলেন, মধ্যস্বত্বভোগী দৌরাত্ম্যের জন্য মৌসুমি ব্যবসায়ীরা মূল্য পায়নি। চামড়ায় লবণ দিয়ে রাখলে মধ্যস্বত্বভোগীরা সুযোগ নিতে পারবে না। ট্যানারির প্রতিনিধিরা কেনাকাটা শুরু করলে এই সমস্যা থাকবে না।
গত বছরের ৫০ ভাগ চামড়া অবিক্রিত রয়ে গেছে, তাহলে রপ্তানিতে আপত্তি কেন- জানতে চাইলে শাহীন আহমেদ বলেন, রপ্তানি হলে দেশীয় শিল্প নষ্ট হবে। গতবারের চামড়ার গুণগত মান ভালো ছিলো না। এবারের চামড়া সেই তুলনায় ভালো। ফলে সব চামড়া মিলিয়ে সমন্বয় করতে হবে। তবে চামড়া রপ্তানির আদেশ দিলে বিষয়টি কঠিন হয়ে যাবে।
‘‘এমন সিদ্ধান্ত নিতে হলে একমাস বা দুই মাস আগে নেওয়ার দরকার ছিল। আর বকেয়া টাকার দোহাই দিয়ে কেউ কেউ ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। তারা কিন্তু কম মূল্যে চামড়া সংগ্রহ করছে। মধ্যস্বত্বভোগীরা বাজার প্রভাবিত করছে।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিটিএ-এর সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ, সিনিয়র সহ-সভাপতি ইলিয়াছুর রহমান বাবু, কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান ও ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম প্রমুখ।