চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

চামড়া নিয়ে নৈরাজ্য বন্ধ করতে হবে

কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া কেনায় সেই পুরনো অভিযোগ আর কূটকৌশল। এর ফলাফল অন্যান্য বছরের মতো এবছরও কাঁচা চামড়া সরকার নির্ধারিত দামে কিনছে না আড়তদাররা। তবে পার্থক্যটা হলো, এবার বাজারে ভয়াবহ রকমে চামড়ার দাম কমে গেছে। গত দুইদিন ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চামড়ার দাম নিয়ে এমন নৈরাজ্যের ছবি দেখা যাচ্ছে।

এরই মধ্যে আমরা জেনেছি, দেশের বহু স্থানে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও কম দামের কারণে চামড়া না বিক্রি করে তা ফেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কোনো কোনো এলাকায় খাসি, বকরি চামড়া ৩ থেকে ৫ টাকায় বিক্রির খবরও গণমাধ্যমে এসেছে। এমনকি লাখ টাকা দামে কেনা গরুর চামড়া ৩’শ টাকায় বিক্রির খবরও পাওয়া গেছে। ক্রেতা না পেয়ে রাগে-ক্ষোভে সেই চামড়া রাস্তায় রেখে চলে গেছেন কোনো কোনো মৌসুমি ব্যবসায়ী।

আমরা জানি, অন্যান্য বছরের মতো এবারও কোরবানির বেশ কয়েকদিন আগেই কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর কাঁচা চামড়া ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আর খাসির চামড়া ১৮ থেকে ২০ এবং বকরির চামড়ার দাম ১৩ থেকে ১৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার।

কিন্তু তারপরও চামড়ার দাম নিয়ে কেন এমন নৈরাজ্য? এ নিয়ে চামড়া কেনাবেচায় জড়িত পক্ষগুলো একে অন্যকে দায়ী করেছেন। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বলছেন, এর পেছনে রয়েছে আড়ৎদারদের ‘সিন্ডিকেট’। আবার আড়ৎদাররা তাদের পাওনা টাকা না দেওয়ায় ট্যানারি মালিকদের দায়ী করেছেন। আর ট্যানারি মালিকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার চাহিদা কমে গেছে বলে তাদের ব্যবসা হচ্ছে না।

এখানেই বিষয়টি থেমে নেই। এরমধ্যে আবার রাজনীতির গন্ধ পেয়েছে বিএনপি। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার ‘সিন্ডিকেটের কারসাজিতে’ কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার দাম কমিয়ে পাশের দেশে পাচার করা হচ্ছে। যদিও তিনি সেই নেতার নাম জানাননি।

চামড়ার দাম নিয়ে চারিদিকে যখন এমন নৈরাজ্য চলছে, ঠিক সেই মুহূর্তে উপযুক্ত দাম নিশ্চিত করতে কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ তথ্য জানায়। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের সুফল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেন এই সিদ্ধান্ত আরো আগে নেওয়া হলো না? অন্তত ঈদের দুইদিন আগেও যদি এমন সিদ্ধান্ত আসতো, তাহলে চামড়ার দাম নিয়ে এই নৈরাজ্য তৈরি হতো না। এখন এই সিদ্ধান্তের সুফল ভোগ করবে, সেই আড়ৎদাররাই।

আসল কথা হচ্ছে, দাম নির্ধারণ করা ছাড়া এ নিয়ে সরকার আর কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। আবার আড়ৎদাররা কেন তাদের পাওনা টাকা নিয়ে ট্যানারি মালিকদের সাথে না বসে চামড়া কেনার দিন তা অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের জিম্মি করবেন?

আমরা মনে করি, কোরবানির ঈদের আগেই এসব নিয়ে পরিকল্পনা করে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিলো সরকারের। কারণ দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে চামড়া বড় একটা খাত। তারপরও আমাদের চাওয়া এখনো সময় আছে, সরকার চামড়া শিল্পকে রক্ষা করতে পদক্ষেপ নেবে। সিন্ডিকেটের হোতাদের নিয়ন্ত্রণ করবে।