নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা থেকে অল্পের জন্য বেঁচে ফেরা জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের নিয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সোমবার দুপুরে শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণে এ প্রার্থনায় সামিল হন ক্রিকেটার ও বিসিবি কর্মকর্তারা।
পরে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হন নাজমুল হাসান পাপন। তখন ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা ঘিরে বিসিবির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, মানসিক কাউন্সেলিং’সহ অনেক বিষয়েই কথা বলেন বোর্ড সভাপতি।
খেলোয়াড়দের সাথে কী কথা হল?
নাজমুল হাসান: না না, ওইসব বিষয় নিয়ে খেলোয়াড়দের সাথে আর কোনো কথা হয়নি। ওরা ঠিক মতো এলো, এজন্য শুকরিয়ার জন্য একটা দোয়া মাহফিল করা হল। এছাড়া ক্রাইস্টচার্চে কত মুসলমান মারা গেল, ওখানে বাংলাদেশিও ছিল পাঁচজন, তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করা হল। আমরা দোয়া করেছি। এটাই মূল উদ্দেশ্য ছিল।
এছাড়া ওদের মানসিক অবস্থা বোঝারও ব্যাপার ছিল। আসলে এরচেয়ে ভয়াবহ মানসিক অবস্থা তো আর হতে পারে না। তবে আমার বিশ্বাস ওরা মানসিক অবস্থা দ্রুত উন্নতি করতে পারবে।
সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং…
নাজমুল হাসান: এরকম কিছু চিন্তা করছি। আমরা ওদের অবজার্ভেশনে রেখেছি। তবে এজন্যই যে মনোবিদ আসবে তা নয়। আমরা ঠিক করেছি সবমিলিয়ে, বিশ্বকাপ আছে সামনে, তার আগে একজন মনোবিদ এসে যদি ওদের সাথে সময় কাটায়, দলের জন্যই ভালো। তখন যদি কারো মনে হয় বিশেষ কোনো হেল্প দরকার, তাহলে অবশ্যই তা নেয়া হবে।
ভবিষ্যতে দলকে কিভাবে প্রটেক্ট করবেন?
নাজমুল হাসান: আগে বাস্তবতা বুঝতে হবে। পাকিস্তানে নারী দল খেলতে যাওয়ার আগে আমরা নিরাপত্তার লোক পাঠিয়েছি। ডিজিএফআই থেকেও লোক পাঠিয়েছি। নিরাপত্তা বোঝার জন্য। পাকিস্তানে যেটা হয়েছে, বাংলাদেশের মতোই নিরাপত্তা দিয়েছে। উপমহাদেশে নিরাপত্তা দেখি একরকম ভাবে। অন্য দেশে দেখেন, ক্রিকেট খেলার কথা বলি, নিরাপত্তা একদম ভিন্ন। আমাদের মতো নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা আমরা কোথাও দেখি না।
যদি অস্ট্রেলিয়া যান, নিউজিল্যান্ড বা সাউথ আফ্রিকা, ওদের একেক জায়গায় একেক রকম। লন্ডনে যে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ছিল, সেখানেও নিরাপত্তা বলতে নামমাত্র। সেখানে পুলিশ-বন্দুক-গাড়ি, এগুলো দেখাই যায় না। এটাই ওদের সিস্টেম। রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাও একইরকম। সিঙ্গাপুরে আমার নিজের অভিজ্ঞতা, রাষ্ট্রপতি যায় শুধু একটা মোটরসাইকেল নিয়ে। এটাই ওদের সিস্টেম।
আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে, আমরা যখন নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলতে যাই, ওদের ধারণা আমাদের কেউ কিছু করবে না। যেন যত ভয় ওদের। আমাদের আবার মারবে কে, এরকম একটা ভাব। ওরা মনে করে, নিরাপত্তাটা ওদের বেশি দরকার। মাথার মধ্যে ওদের এটাই চিন্তা।
তবে এই ঘটনার (ক্রাইস্টচার্চ হামলা) পর নিরাপত্তা ইস্যু সব জায়গায় জোরদার করা হবে। আমাদের তরফ থেকে অবশ্যই। আগে যেটা বলতো তা মেনে নিয়েছি। এমওইউ-তে বলা থাকে সব নিরাপত্তা ওরা দেখবে, ওদের উপর সব ছেড়ে দিতাম। কিন্তু এটা আর ছাড়বো না। সামনে আগের চেয়ে ভালো হবে নিরাপত্তা।
দলের সাথে নিজস্ব সিকিউরিটি পাঠানো হবে কি-না? আমাদের খেলোয়াড়রা প্র্যাক্টিসিং মুসলিম, তারা নামাজ পড়তে যায়…
নাজমুল হাসান: এটা আমাদের জন্য আরও একটা ইস্যু। বিদেশে সাধারণত নিরাপত্তা দেয় খেলার মাঠে, হোটেল থেকে মাঠে যাওয়া-আসা; এছাড়া কোথাও ব্যবস্থা থাকে না। তবে ওদের সাথে আগে বলে কিছু করা যায় কিনা তা আমরা দেখবো। আমাদের এখান থেকে সিকিউরিটি যাবে কিনা তা নির্ভর করবে আমরা কী পাচ্ছি তার উপর।
আগে তো বিষদ আলোচনা করতাম না। নিউজিল্যান্ডে তিন দিন ছিলাম, সেখানে কোনো পুলিশই দেখিনি। ওই দেশটাই হয়ত এমন। পুলিশ থাকলেও তারা মসজিদে পাহারা দেয়ার কথা চিন্তাই করেনি। কিন্তু নতুন ঘটনা চোখ খুলে দিয়েছে। এখন ব্যবস্থা নিতেই হবে। আমাদের যদি মনে হয় বিদেশ থেকে যা দিচ্ছে, তা যদি যথেষ্ট মনে না হয়, তাহলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নিবো। তবে এটা নির্ভর করবে তারা যা দিচ্ছে তার উপর।
আয়ারল্যান্ড সিরিজে পর্যবেক্ষক…
নাজমুল হাসান: এরকম কোনো চিন্তা এখনো করিনি। আমরা এখন যেকোনো দেশে যাওয়ার আগে নিরাপত্তা পরিকল্পনা চাইবো। সেটা ঠিক মতো প্রয়োগ হচ্ছে কিনা, তা দেখতে কাউকে পাঠাবো। সিকিউরিটির লোকই পাঠানো হবে, ব্যাপারটা তা নয়। কাউকে পাঠানো হবে। দেখা হবে ওরা যা বলছে তা ঠিকমত আছে কিনা। এরপর যদি মনে হয়, তাহলে আমরা প্রয়োজন মতো ব্যবস্থা নিবো।
নিউজিল্যান্ড সিরিজে কী নিরাপত্তা দেয়ার কথা ছিল?
নাজমুল হাসান: ওরা বলেছে সব নিরাপত্তাই থাকবে। কিন্তু একেক দেশে নিরাপত্তা একেক রকম। যেমন, একবার এক দেশে নিরাপত্তার কাউকে না দেখে বললাম, কই তোমার দেশের কোনো সিকিউরিটির লোক তো দেখি না। তখন আমাকে বলেছিল যে, তুমি যদি দেখতেই পাও, তাহলে সেই সিকিউরিটি রেখে লাভ কী! আমি জানি না তারা দুষ্টুমি করে কিনা, তবে এটাই ছিল এদের সাড়া। এতদিন ওদের কথাই তো বিশ্বাস করতাম। কিন্তু ভবিষ্যতে না বুঝে না দেখে যাওয়া যাবে না।